Select Page

কমার্শিয়াল হিরোইজম : সালমান শাহ

কমার্শিয়াল হিরোইজম : সালমান শাহ

বাণিজ্যিক ছবির নায়করা হিরোইজমকে ঘিরে পর্দায় তাঁদের পারফেকশন তুলে ধরে। কারো মধ্যে অতিরিক্ত হিরোইজম চলে আসে অ্যাটিচিউডে কারো মধ্যে থাকে পরিমিত পরিমাণে। যেখানে যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই তুলে ধরে এমন কিছু নায়ককেও দেখা যায়। সালমান শাহ বাংলাদেশী বাণিজ্যিক ছবিতে পরিমিত হিরোইজম দেখানো অনবদ্য নায়ক। এক্ষেত্রে অনেকের আদর্শ সে।

পর্যায়ক্রমে তাঁর কমার্শিয়াল হিরোইজম তুলে ধরা হবে প্রথম থেকে শেষ ছবি পর্যন্ত। এর ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসবে ভার্সেটাইল হিরোইজম।

১. কেয়ামত থেকে কেয়ামত

১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ এ ছবিটি মুক্তি পায়। পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। ছবিতে সালমান শাহর বিপরীতে ছিল মৌসুমী। প্রথম ছবিতে বেশিরভাগ নায়ককে যেভাবে স্বভাবতই নার্ভাস বা জড়তায় ভুগতে দেখা যায় সালমানের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। নিজের চরিত্রকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিল। তাঁর চরিত্রটি ছিল একটা সাদামাটা ছেলের যে প্রথমত একটি পরিবারে বাবার নাম করতে চাওয়া ছেলে। ঘটনাক্রমে মৌসুমীর সাথে তাঁর প্রেম হলে বাড়ি ছাড়ে। প্রেমের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়। প্রেয়সী মৌসুমীর জীবন উৎসর্গের সাথে সেও নিজেকে উৎসর্গ করে। চরিত্রটি সরল অথচ কঠিন। সালমান তাঁর ন্যাচারাল অভিনয়ে প্লে করেছে। কোনো আতিশয্য ছিল না। গানগুলোতে তরুণ প্রজন্মের উদীয়মান নায়কের রোল মডেলে নিজেকে উপস্থাপন করেছে সফলভাবে। সালমানের প্রথম ছবিই ছিল দেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ছবি।

২. তুমি আমার

১৯৯৪ সালের ২২ মে মুক্তি পায় ছবিটি। পরিচালক জহিরুল হক। বিপরীতে ছিল শাবনূর। এ ছবিতে সালমান ছিল স্বপ্নবাজ যুবক। তাঁর মধ্যে চাকরি, প্রেম, সাফল্য এগুলো ছিল স্বপ্ন একেকটা। বন্ধুদের ঘড়ি, প্যান্ট এগুলো ধার করে পরে আবার বন্ধুর আত্মীয়ের আলিসান বাড়িকে নিজের বলে পরিচিত করায়। সবই ছিল নিজের স্বপ্নকে সফল করার জন্য। রোমান্টিক ছবির মধ্যেও হিরোইজমের মধ্যে ছিল বৈচিত্র্য। গানগুলোর মধ্যে ‘জ্বালাইয়া প্রেমের বাতি’-র মেল ভার্সনে তাকে সেনসেশনাল লাগে। তরুণ প্রজন্মের আইকন হিশেবে এ ছবিটিকেও উদাহরণ করেছে সালমান।

৩. অন্তরে অন্তরে

১৯৯৪ সালের ১০ জুন ছবিটি মুক্তি পায়। পরিচালক শিবলি সাদিক। বিপরীতে মৌসুমী। এ ছবিতে সালমানের চরিত্রটি আলাদা প্রথম দুই ছবি থেকে। বিদেশ থেকে আগত এক যুবক যার দাদী আনোয়ারা অতীতের করুণ ইতিহাসের কারণে সালমানকে মেনে নেয় না। সালমান বাধাটা ভাঙার জন্যই চেষ্টা করে এবং সফল হয়। রাজতন্ত্রের একটা নজির দেখা যায় ছবিতে। সালমান তাঁর দাদীর প্রাসাদের বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশের আগ পর্যন্ত রাজা ও প্রজার একটা পরীক্ষায় নিজেই পড়ে যায়। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্টাইলিশ হিরোইজম ছিল পুরো ছবিতে।

৪. রঙিন সুজন সখি

১২ আগস্ট ১৯৯৪ মুক্তি পায়। পরিচালক শাহ আলম কিরণ। বিপরীতে শাবনূর। সম্পূর্ণ নতুন ইমেজের হিরোইজমে এ ছবিতে হাজির হয় সালমান। গ্রামের ছেলে যে লুঙ্গি পরে কাছা মেরে শাবনূরকে লক্ষ করে গায়-‘কথায় বলে গাছের ব্যাল পাকিলে তাতে কাকের কি?’ গানটি দেখে তাকে যে কোনো দর্শক বলবে সে নিপাট গ্রামের ছেলে। পারিবারিক দ্বন্দ্বকে উপেক্ষা করে শাবনূরের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। নৌকায় বসে তাঁর লিপে ‘সব সখিরে পার করিতে’ গানটি অনবদ্য। পল্লী বাংলার প্রেমিক ছেলের রূপে সালমানের তুলনা শুধুই সালমান এ ছবিতে।

৫. বিক্ষোভ

৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ মুক্তি পায়। পরিচালক মহম্মদ হান্নান। বিপরীতে শাবনূর। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বছরেই পলেটিক্যাল স্টোরির ছবিতে ইমেজ বদলে এ ছবিতে। নিজেকে এক্সপেরিমেন্ট করে সালমান। কলেজ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছাত্রের ভূমিকায় থাকে। ভণ্ড নেতা রাজিব ও ভণ্ড সাংবাদিক নাসির খানের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম চলে। ছাত্রবিপ্লবের ধারাকে অব্যাহত রাখে। ছবিতে ‘একাত্তরের মা জননী’ এবং ‘বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয়’ গান দুটিতে সালমান ছিল কালের সাক্ষী। যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গান দুটি অনুপ্রেরণা।

৬. স্নেহ

১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ মুক্তি পায়। পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ফ্যামিলি ড্রামা। সালমান এ ধরনের ছবি আরো করেছে। শাবানা-আলমগীরের ছেলের ভূমিকায় থাকে। পারিবারিক টানাপোড়েনের সাথে সন্তানের প্রতি মা-বাবার স্নেহের অভাব তৈরি হলে যে দূরত্ব তৈরি হয় সম্পর্কের মধ্যে সেটাই ছবির বিষয়বস্তু। সালমানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় মামা হুমায়ুন ফরীদির সাথে। ছবিতে ‘মামা ও মামা আমি তোমার ভাগিনা/বাবা-মায়ের স্নেহ আমি পেলাম না’ গানটি সেই দূরত্ব আর সম্পর্ক একসাথে তুলে ধরে। ছবির শেষে শাবানা-আলমগীর নিজেদের ভুল বুঝতে পারে এটা ছিল বাস্তবতার দিক থেকে শিক্ষণীয়। সালমানের চরিত্রটির মতো এমন ছেলেমেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

৭. প্রেমযুদ্ধ

২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৪ মুক্তি পায়। পরিচালক জীবন রহমান। বিপরীতে ছিল লিমা। এই ছবিতে সালমান তিনটি চরিত্র পোর্ট্রেট করে – তরুণ, গোঁফযুক্ত, দাড়িযুক্ত। ছবির গল্পের জন্য এটা তাঁকে করতে হয়। ছবিতে প্রথমদিকে তরুণ সালমান থাকে প্রেমিক। তার সাথে কেউ অন্যায় করে পার পায় না প্রতিবাদ করে। লিমার সাথে বিয়ের পর গোঁফযুক্ত সালমানকে কিছুটা অন্যরকম লাগে। ছেলের সাথে তাকে দুষ্টুমি করতে দেখা যায়। ‘লাল লাল ঐ গালে একটা চুমু’ গানটিতে সালমানের বাবাসত্তা ফুটে ওঠে। দাড়িযুক্ত সালমান অনেক সময় পরে স্ত্রী ও ছেলের জন্য নতুন করে সংগ্রাম শুরু করে। লুকের দিক থেকে চ্যালেন্জিং ছবি। এ ছবিতে মার্শাল আর্টের ব্যবহার ছিল সালমানের এবং উপভোগ্য ছিল।

৮. দেন মোহর

৩ মার্চ ১৯৯৫ মুক্তি পায়। পরিচালক শফি বিক্রমপুরী। বিপরীতে ছিল মৌসুমী। এই ছবিতে আবারও সম্পূর্ণ বিপরীত ইমেজে হাজির হয় সালমান। রাজপরিবারের গল্পে বিয়ের দেন মোহর সংক্রান্ত জটিলতায় সালমান ও মৌসুমীর দূরত্ব তৈরি হয়। তবে তাদের সন্তান জন্মের পর দুই রাজপরিবারের বিবাদ মিটে যায়। সালমানের গেটআপের মধ্যেও বৈচিত্র্য ছিল।

৯. কন্যাদান

১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ মুক্তি পায়। পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। বিপরীতে ছিল লিমা। এ ছবিটিও ফ্যামিলি ড্রামা। করুণ গল্পের উপর ভিত্তি করে ছবির গল্প। লিমার সাথে প্রেম ও বিয়ের পর তাদের ছেলে দুর্ঘটনায় মারা যায়। তারপর লিমা মানসিক ভারসাম্য হারালে হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। তাদের আরেকটি মেয়ে হয় সালমান তাকে শাবানার কাছে রাখে। নিঃসন্তান শাবানা-আলমগীর দম্পতি তাকে মেয়ের মতো করে বড় করতে থাকে। লিমা সুস্থ হবার পর জটিলতা হয়। খুব কমন ঘটনা কিন্তু ছবিটির নির্মাণে গল্পটি ছিল করুণ। সালমানের দুই ধরনের লুক এ ছবিতেও দেখা যায়। পরিমিত অভিনয় ছিল।

১০. স্বপ্নের ঠিকানা

১১ মে ১৯৯৫ মুক্তি পায়। পরিচালক আবদুল খালেক। বিপরীতে শাবনূর ও সোনিয়া। এ ছবিটি ছিল দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল ছবি। সালমানের হিরোইজম নব্বই দশকে কতটা প্রভাব ফেলেছিল এ ছবিটি তারই উদাহরণ। ত্রিভুজ প্রেমের দ্বন্দ্বে সালমানকে প্রেমিক ও মানসিক ভারসাম্যহীনের চরিত্রে দেখা যায়। মানসিক ভারসাম্যহীনের চরিত্রটি তাঁর জন্য প্রথম ছিল এ ছবিতে। চ্যালেন্জিং এবং সফল।

১১. আঞ্জুমান

১৯৯৫ সালের ১৮ আগস্ট মুক্তি পায়। পরিচালক হাফিজ উদ্দিন। বিপরীতে শাবনাজ। সালমানের বিপরীতে শাবনাজের প্রথম ছবি ছিল। এই ছবিটি টোটালি কমার্শিয়াল উপাদান দিয়ে তৈরি। ফ্যামিলি ড্রামা ছিল। সালমানের এন্ট্রি ছিল স্টাইলিশ। স্টাইলের কথা বললে সালমানের প্রভাবে শাবনাজকেও স্টাইলিশ দেখা যায় এ ছবিতে। তাঁর হিরোইজমের প্রভাব এমনই প্রবল ছিল।

১২. মহা মিলন

২২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ মুক্তি পায়। পরিচালক দীলিপ সোম। বিপরীতে শাবনূর। ফ্যামিলি ড্রামা সঙ্গে রোমান্টিক আবহ। তরুণ সালমানকে স্টাইলিশ দেখা গেছে এ ছবিতে। মাথায় ব্যবহৃত ক্যাপ এবং বাহারি টি-শার্টে তাঁকে অসাধারণ লাগে। শাবনূরের অহংকার ও চালাকির বিপরীতে সালমান তাঁর সততা দিয়েই শাবনূরের মনে জায়গা করে নেয়। প্রেমের পাশাপাশি ফ্যামিলি ড্রামায় ববিতাকে ঘিরে সালমানের গল্প তৈরি হয়। পুরো ছবিতে তাঁর পরিমিত অভিনয় ছিল।

১৩. আশা ভালোবাসা

১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর মুক্তি পায়। পরিচালক তমিজউদ্দিন রিজভী। বিপরীতে শাবনাজ ও সাবরিনা। রোমান্টিক কমেডি ধাঁচের এ ছবিতে সালমান সম্পূর্ণ নতুন জনরায় কাজ করেছে। ত্রিভুজ প্রেমের গল্পে সালমানকে দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়েছে কোনো ডাবল রোল ছাড়াই। চ্যালেন্জিং চরিত্র তো বটেই এবং সালমান জমিয়ে অভিনয়টা করেছে। ছবির গানগুলো সব স্মরণীয়।

১৪. বিচার হবে

১৯৯৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়। পরিচালক শাহ আলম কিরণ। বিপরীতে শাবনূর। গ্রাম-শহর দুই প্রেক্ষাপটে সালমানের অন্যতম সেরা ছবি। এ ছবির চরিত্রটি অনেক বেশি চ্যালেন্জিং ছিল। গ্রামের সহজ-সরল ছেলে ঘটনাক্রমে শহরে আসার পর চাঁদাবাজের কবলে পড়ে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে মাস্তান হয়ে যায়। গাঁয়ের লুঙ্গি পরা ছেলেটি একেবারে স্টাইলিশ হয়ে যায় ব্যান্ডেনা, প্যান্ট-শার্ট পরে। সালমান পুরো ছবিতে হিরোইজম দেখিয়েছে চরিত্রের জন্য যতটুকু দরকার সেভাবে।

১৫. এই ঘর এই সংসার

১৯৯৬ সালের ৫ এপ্রিল মুক্তি পায়। পরিচালক মালেক আফসারী। বিপরীতে বৃষ্টি। মাস্টারপিস ফ্যামিলি ড্রামা। বুলবুল আহমেদ-রোজী আফসারীর পরিবারে দুই ভাই সালমান ও আলীরাজকে নিয়ে ছবির গল্প। পারিবারিক দূরত্ব ও মূল্যবোধের টানাপোড়েন চলে আসে ঘরে ভাইদের বউ আসার পরে। সালমান তার বিয়ের পর নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। পুরো ছবিতে তাঁর রিয়েলিস্টিক অভিনয় মুগ্ধ করে। তাঁকে দেখে মনে হবে সমাজের আর পাঁচটা সাদাসিধে ছেলে।

১৬. প্রিয়জন

১৯৯৬ সালের ১৪ জুন মুক্তি পায়। পরিচালক রানা নাসের। বিপরীতে শিল্পী। ছবিতে অন্য নায়ক ছিল রিয়াজ। বন্ধু, পরিবার, ভালোবাসা নিয়ে ছবির গল্প। স্যাক্রিফাইসিং রোলে প্রথমবারের মতো নিজেকে উজাড় করে অভিনয় করেছ। সালমান। তবে তাঁর চরিত্রের শেষটুকু সাসপেন্সে ছিল। স্টাইলিশ সালমানকে এ ছবিতেও দেখা গেছে।

১৭. তোমাকে চাই

১৯৯৬ সালের ২১ জুন মুক্তি পায়। পরিচালক মতিন রহমান। বিপরীতে শাবনূর। পিওর রোমান্টিক ড্রামা। প্রেমের জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়ায় সালমান। প্রেয়সী সাধনা বলাই শ্রেয়। সালমানের অভিনয়ের কোনো তুলনা নেই এ ছবিতে। ছবির ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণ গানটি ছিল কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর কবিতা থেকে নেয়া। গানে সালমান-শাবনূর রসায়ন অনবদ্য। গানটিতে সালমানের শখের গাড়িটি ব্যবহৃত হয়েছিল।

১৮. স্বপ্নের পৃথিবী

১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই মুক্তি পায়। পরিচালক বাদল খন্দকার। বিপরীতে শাবনূর। নিজেকে এক্সপেরিমেন্ট করার আরো একটি ছবি। এ ছবিতে সালমান রাজতন্ত্রের বিপরীতে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা একজন তরুণ বিপ্লবী। তাঁর চরিত্রটি নেতৃত্ব তুলে ধরে। বাবার চরিত্রে থাকা রাজিবের সাথে উন্মুক্ত মাঠে সালমানের তর্কযুদ্ধ চলে রাজা-প্রজার মতো। এটা ছিল ছবির সেরা সিকোয়েন্স। ফিনিশিং-এ সেনাবাহিনীর চৌকস দলের সদস্যদের মতো প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে সালমান। প্রেম, নেতৃত্ব, প্রতিরোধ সব মিলিয়ে একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়কের ছবি ছিল।

১৯. সত্যের মৃত্যু নেই

১৯৯৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়। পরিচালক ছটকু আহমেদ। বিপরীতে শাহনাজ। সালমানের মৃত্যুর পর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। এ ছবি দেখতে গিয়ে দর্শক সিনেমাহলে কান্নায় ভেঙে পড়ে। দেশের চলচ্চিত্রে অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ছবি। সম্পূর্ণ নতুন ইমেজে এ ছবিতেও হাজির হয়েছিল সালমান। ঘটনার শিকার হয়ে প্রেমিকা শাহনাজের বাবা আসাদকে খুনের দায়ে ফাঁসির আসামী হয় সালমান। ছেলেকে বাঁচাতে মা-বাবা শাবানা-আলমগীর ও প্রেমিকা শাহনাজ আপ্রাণ চেষ্টা করে। ফাঁসির আসামীর চরিত্রে সালমানের নিখুঁত ক্যারেক্টারাইজেশন ছবির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে তাঁকে। ছবির প্রধান গান ‘চিঠি এলো জেলখানাতে’-র দৃশ্যায়নে সালমান তুলনাহীন। তাঁর হিরোইজমের বৈচিত্র্যে এ ছবি উল্লেখযোগ্য।

২০. জীবন সংসার

১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবর মুক্তি পায়। পরিচালক জাকির হোসেন রাজু। বিপরীতে শাবনূর। এ ছবিটিও ফ্যামিলি ড্রামা তার সাথে রোমান্টিক আবহ। শাবনূরের সাথে দ্বন্দ্ব ও প্রেমের পর পারিবারিক টানাপোড়েনে সালমানের দূরত্ব তৈরি হয় ভাইভাবী ফারুক-ববিতার সাথে। তারপর শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। প্রেমের সাথে বাস্তব যুদ্ধে পরিস্থিতি অনুযায়ী যেসব ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় ছবিটি তা দেখিয়েছে। সালমান প্রেমিক, ভাই দুই চরিত্রেই অসাধারণ। শাবনূরের বিষ খাওয়ার অভিনয়ের সময় সালমানের সিরিয়াস অভিনয় তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা তুলে ধরে। অভিনয় দিয়ে মন জয় করার হিরোইজম ছিল ছবিটিতে।

২১. মায়ের অধিকার

১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পায়। পরিচালক শিবলি সাদিক। বিপরীতে শাবনাজ। অভিনয়সমৃদ্ধ ছবি। সালমানের মা ববিতাকে জাহান মঞ্জিল থেকে তাড়িয়ে দেয় তার শ্বাশুড়ি ফেরদৌসী মজুমদার। মায়ের অধিকারকে পুনরুদ্ধার করতে সালমান বস্তি থেকে জাহান মন্জিলে চলে আসে। মা তাকে প্রথমে ভুল বুঝলেও পরে ভুল ভাঙে। সালমানের শক্তি ছিল মামা হুমায়ুন ফরীদি। ‘পিঁপড়া খাবে বড়লোকের ধন’ গানটি ছবিতে পুঁজিবাদী শ্রেণির পতনের জন্য মিনিংফুল ছিল। পুরো ছবিতে সালমান তাঁর হিরোইজমকে দেখিয়েছে স্থানভেদে।

২২. চাওয়া থেকে পাওয়া

১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর মুক্তি পায়। পরিচালক এম এম সরকার। বিপরীতে শাবনূর। এ ছবিটি স্টাইলিশ সালমান শাহ-র ফ্যাশনেবল হিরোইজম তুলে ধরে।’সাথী তুমি আমার জীবনে’ গানে তার কস্টিউম সিলেকশন চোখ ধাঁধানো সহশিল্পী শাবনূরের সাথে। ফ্যামিলি ড্রামার ছবি। ‘ডিফারেনটাচ’ ব্যান্ডের কালজয়ী গান ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’ ব্যবহৃত হয়েছে গানটিতে। সালমান শাবনূরকে দেখার পর তার ছবি আঁকে। প্রেমিক, চিত্রশিল্পী, কর্মঠ পুরুষ এ ধরনের বৈচিত্র্যে অভিনয় করেছে এক ছবিতেই। ছবিতে জীবনের চাওয়া-পাওয়া মেটাতে বাস্তবের মুখোমুখি হবার যে প্রয়োজন থাকে সেটাই তুলে ধরেছে সালমান।

২৩. প্রেম পিয়াসী

১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল মুক্তি পায়। পরিচালক রেজা হাসমত। বিপরীতে শাবনূর। ‘আনন্দ অশ্রু’-র মতোই ট্র্যাজেডি ছবি। একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা ভালোবেসে যখন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে পরস্পরকে পায় না নিজেরাই নিজেদের শেষ করে দেয়। সালমানের ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে করুণ মৃত্যুদৃশ্য ছিল এ ছবিতে। মৃত্যুর আগে মা আনোয়ারার সাথে তাঁর শেষ কথোপকথনে যে অভিনয় ছিল যে কেউ কাঁদবে। ব্যালেন্স রেখে রোমান্স, স্যাড দুই পার্টেই অনবদ্য পারফর্মে গ্রেটেস্ট হিরোইজম ছিল ছবিটিতে।

২৪. স্বপ্নের নায়ক

১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই মুক্তি পায়। পরিচালক নাসির খান। বিপরীতে শাবনূর। ‘স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি’ টাইটেল ট্র্যাকে ফুটে ওঠে সালমানের প্রতি শাবনূরের ভালোবাসা। পারিবারিকভাবে সেটেল ম্যারেজের কথা বলা হলে একজনের জায়গায় অন্যজন আসে এবং সেই অন্যজনই সালমান। এটিএম শামসুজ্জামানের ষড়যন্ত্রের শিকার হয় সে। অকালমৃত্যু ঘটে ছবির গল্পেই। বাস্তবে সালমানের অকালমৃত্যুর জন্য এ ছবিটিও অসমাপ্ত তাই তার দ্বিতীয় নায়ক হিশেবে আমিন খান আসে। নির্ধারিত অংশে সালমান বেকার যুবক ও ষড়যন্ত্রের শিকার অথচ অপরাধবোধে ভোগা এক প্রেমিক চরিত্র। সালমান নিজে এ ছবিটিকে তার সবচেয়ে টাফ চরিত্রের ছবি বলেছিল। স্টাইলিশ সালমানকে ছবির টাইটেল ট্র্যাকে দেখে যে কারো মন কাড়বে।

২৫. শুধু তুমি

১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই মুক্তি পায়। পরিচালক কাজী মোর্শেদ। বিপরীতে শ্যামা। এ ছবিটিতে সালমানের সবচেয়ে কম উপস্থিতি ছিল। মৃত্যুর পর অসমাপ্ত ছবির মধ্যে এটা অন্যতম। গুটিকয়েক দৃশ্যে ছিল। তবে ছবিটিতে অ্যাকশনের দিক থেকে সালমানের স্টাইলিশ উপস্থিতি নজর কাড়ে। হিরোইজমে অ্যাকশনে ছবিটি চমৎকার স্পেশালি ফাইটিং দৃশ্যে।

২৬. আনন্দ অশ্রু

১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট মুক্তি পায়। পরিচালক শিবলি সাদিক। বিপরীতে শাবনূর ও কাঞ্চি। এ ছবিটি অভিনয়ের দিক থেকে সালমানের অন্যতম সেরা মাস্টারপিস ছবি। রোমান্সের পর নিদারুণ ট্র্যাজেডি ছবিটিকে করুণ করেছে। গীতিকার সালমান দেওয়ানগণ্জে গানের লিরিক লিখতে গিয়ে ঘটনাক্রমে শাবনূরকে সাপে কাটা থেকে উদ্ধার করে। তারপর প্রেম এবং চাচা হুমায়ুন ফরীদির ষড়যন্ত্রে পাগল হয়। পাগলের অভিনয়ে সালমান ছিল জাদুকরী। জীবন্ত অভিনয় পুরো ছবিতে ছিল। ছবির প্রধান দুই গান ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’ এবং ‘তুমি আমার এমনই একজন’-এ সালমান অসম্ভব জনপ্রিয়। প্রথমটিতে শাবনূরের সাথে ডামি ছিল পরেরটিতে ছিল না। পরেরটিতে তাঁর পাগলের অভিনয় যে কারো চোখে অশ্রু ঝরাবে। ট্যাজেডি জনরার হিরোইজমে এ ছবি পুরো ঢালিউডে আদর্শ।

২৭. বুকের ভিতর আগুন

১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়। পরিচালক ছটকু আহমেদ। বিপরীতে শাবনূর। রোমান্টিক অ্যাকশন ঘরানার এ ছবিটিও অসমাপ্ত। সালমানের দ্বিতীয় রোলে অভিনয়ে করেছে তখনকার নবাগত ফেরদৌস। সালমানের মায়ের চরিত্রে থাকা ফাল্গুনী হামিদের স্বামী আসাদকে হারাবার কষ্ট থেকে ছেলে সালমানকে দিয়ে রাজিবের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতেই মনের মতো করে বড় করে তোলে। তারপর শাবনূরের সাথে প্রেম হলে দ্বন্দ্ব বাঁধে। শাবনূরের দুই ভাই মিশা সওদাগর ও ডনের মাধ্যমে সালমানের মুখ পুড়িয়ে দেয়া হলে অপারেশনের পর পাল্টে যাওয়া চেহারায় আসে ফেরদৌস। প্রেম, প্রতিশোধ, প্রায়শ্চিত্ত নিয়ে ছবির গল্প। সালমানের যতটুকু উপস্থিতি ছিল রোমান্স, কমেডি, অ্যাকশন নিয়ে নিজেকে তুলে ধরেছে অসাধারণভাবে।

২৭ টি ছবি সালমান শাহ-র। এত অল্প ছবি দিয়েই কমার্শিয়াল ছবির গল্পে পর্দায় হিরোইজম দেখানো একজন বৈচিত্র্যময় নায়ক ছিল। কম সময়ে এই বিরল ক্যারিয়ার গ্রাফ আর কারো নেই। ছবিগুলোতে চরিত্রের ভেরিয়েশন রেখে সালমান শাহ তাঁর হিরোইজমকে প্রতিষ্ঠিত করেছে পরিমিত অভিনয়ে, স্টাইলে, ফ্যাশনে। আগামী দিনের নায়কদের কমার্শিয়াল হিরোইজমকে ফলো করার জন্য সালমান শাহ অবধারিতভাবে আদর্শ।


Leave a reply