কলকাতা কেন যৌথ প্রযোজনা চায়
সাম্প্রতিক সময়ে যৌথ প্রযোজনা নিয়ে নানা কথা উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশী পক্ষের কোনটাসা অবস্থা নিয়ে এ অভিযোগ। তা সত্ত্বেও থেমে নেই যৌথ প্রযোজনার সিনেমার, তার পক্ষে যুক্ত দেওয়ার।
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ঋজু বসুর লেখা একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘গঙ্গা-পদ্মার মৈত্রীই ভরসা ছায়াছবিতে’। এতে উঠে আসে ঢাকা-কলকাতার যৌথ প্রযোজনা ও সিনেমা বিনিময়ের নানা দিক। এ আলোচনার অন্যতম বিষয় কলকাতার কেন যৌথ প্রযোজনা দরকার।
কলকাতার সিনেমার বর্তমান অবস্থা নিয়ে ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়, ‘এ পারে ছবির বাজেট এক কোটি, সওয়া কোটি ছাড়ালেই দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম মাটি হয় প্রযোজকের। ফেলু-ব্যোমকেশ বাদ দিলে হিট ছবি হাতে গোনা। রাজ্যে মেরে-কেটে ২০-২৫টি মাল্টিপ্লেক্স (মহারাষ্ট্র বা অন্ধ্রপ্রদেশে সংখ্যাটা ১০০-র কাছাকাছি)। হলের সংখ্যা কমতে কমতে ৩৫০। অন্ধ্রে হলের সংখ্যা এর দশগুণ। ফলে তেলুগু বা মরাঠি ছবি যেখানে ২৫ কোটির শৃঙ্গ ছোঁয়ার কথা ভাবতে পারে, বাংলা ছবির ব্যবসা তিন-চার কোটি ছুঁলেই লটারি জেতার সামিল। ও-পারের দশা আরও করুণ। ১২৮৫টা হল ছিল। কমতে কমতে ৩০০-য় ঠেকেছে। ছবির বাজেট ৮০ লক্ষ ছাড়ালেই প্রযোজক প্রমাদ গোনেন। সুপারস্টার শাকিব খানের ছবি ছাড়া বাংলাদেশে দু’আড়াই কোটির বেশি ব্যবসা অভাবনীয়।’
যৌথ প্রযোজনা নিয়ে ঢাকায় জমে উঠা ক্ষোভ ও অন্যান্য প্রসঙ্গে লেখা হয়, ‘যৌথ প্রযোজনার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাওয়া নিয়ে ঢাকার ইন্ডাস্ট্রিতে শিল্পী-কলাকুশলীদের ক্ষোভ আছে। ঢাকায় ফিল্ম রিলিজে আমলাতান্ত্রিক গেরো প্রবল। সেন্সর বোর্ড ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ছাড়পত্র লাগে। ফাইলবন্দি ছবির ভাগ্য টেবিলে পড়ে থাকে। বাংলাদেশের ছবি মুক্তির সময় কলকাতায় ততটা সহযোগিতা মেলে না বলে অভিযোগ।’
আরও বলা হয়, “ঢাকার এও আশঙ্কা, ছবির মান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা টালিগঞ্জ বাংলাদেশে ঢুকলে গোটা ইন্ডাস্ট্রির দখল নেবে। ঢাকার ছবি এ পারে কল্কে পাবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। গত বছরের একটি যৌথ প্রযোজনা ‘ব্ল্যাক’ নিয়ে বিতণ্ডা কলকাতা হাইকোর্টে গড়িয়েছিল। ঢাকার প্রযোজক কামাল মহম্মদ কিবরিয়া লিপুর মতে, ‘একসঙ্গে দুই বাংলায় ছবি রিলিজ করা না-গেলে পাইরেসির দৌলতে ব্যবসা মার খাবে।’ বেশ কিছু যৌথ উদ্যোগের রূপকার প্রযোজক নাসিরুদ্দিন দিলুর কথায়, ‘ঢাকার তারকারা তুলনায় তত পরিচিত নন কলকাতায়। এটা একটু খামতি।’ কোনও কোনও প্রযোজক-পরিবেশক বাংলাদেশের ছবির প্রতি বিরূপ আচরণ করেন বলেও অভিযোগ।”
যৌথ প্রযোজনায় লাভ কলকাতারই বেশি এ কথায় প্রতিবেদনটি শেষ হয়, ‘গৌতম ঘোষের মতো অনেকে কিন্তু বরাবর বলে আসছেন, ঢাকার ছবিকে এ পারে গুরুত্ব দিলে আখেরে লাভ টালিগঞ্জেরও। ফিল্ম পরিবেশক অরিজিৎ দত্ত মনে করেন, বাংলাদেশের ছবির ভাল সম্ভাবনা আছে গ্রামবাংলায়। আবার দুই বাংলায় ছবি প্রচার-প্রসারে যুক্ত শুভজিৎ রায় আশাবাদী, ঠিকঠাক প্রচার হলে বাংলাদেশে অন্য ধারার ছবি এ পারের শহুরে দর্শকদেরও ভাল লাগবে।’