কাপ্তাই বাঁধ ও জঙ্গিগোষ্ঠী নিয়ে জটিলতায় ‘এমআর নাইন’
কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম পর্ব ‘ধ্বংস পাহাড়’ অবলম্বনে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হচ্ছে ‘এমআর নাইন’। সে ছবিতে একটি জঙ্গিগোষ্ঠীকে কাপ্তাই বাঁধ উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় দেখা যাবে। এখন এ বিষয়টিতে পরিবর্তন চাইছে যৌথ প্রযোজনার প্রিভিউ কমিটি। খবর প্রথম আলো।
গত ১৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে শুরু হয়েছে ছবিটির শুটিং। ছবিটি পরিচালনা করছেন মার্কিন বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি প্রযোজক ও পরিচালক আসিফ আকবর।
চলতি মাসের শেষের দিকে ছবিটির বাংলাদেশ অংশের শুটিং হওয়ার কথা আছে। তার আগে গল্পের চিত্রনাট্য সংশোধন করতে বলল যৌথ প্রযোজনার প্রিভিউ কমিটি। ৭ জুন চিত্রনাট্য পড়ার পর বেশ কয়েকটি জায়গায় সংশোধনী দিয়েছে তারা। তবে ছবির বাংলাদেশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আবদুল আজিজ বলছেন, চিত্রনাট্য কোনো কিছু পরিবর্তন করে কাজ করা যাবে না। তাহলে গল্পের আবেদন কমে যাবে।
সংবাদমাধ্যমটির কাছে প্রিভিউ কমিটির অন্যতম সদস্য পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘গল্পের এক জায়গায় “টিএলএফ” নামে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী কাপ্তাই বাঁধ উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এখানে কাপ্তাই বাঁধের নাম পরিবর্তন এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম না রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সংলাপ কেটে দিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। গল্পে তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।’
তবে চিত্রনাট্য সংশোধন করে কাজ করতে রাজি নয় প্রযোজক আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো চিঠি হাতে পাইনি। সংশোধনীর জায়গায়গুলো শুনেছি। এই গল্পের কোনো কিছু পরিবর্তন করে কাজ করা যাবে না। গল্পের মধ্যেই থাকতে হবে। কারণ, গল্পে কাপ্তাই বাঁধ আছে, সেটা পরিবর্তন করলে তো গল্প থাকল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি জনপ্রিয় গল্প। গল্প পরিবর্তন করে ফেললে “মাসুদ রানা” তো আর থাকল না। মাসুদ রানার গল্প পড়ে আমার নিজেরও বেড়ে ওঠা। এই গল্প ঘিরে অনেকের আবেগ কাজ করে। সুতরাং পরিবর্তন করে কাজ করতে চাই না।’
সংশোধনী করে কাজ না করলে তো কাজের অনুমতিও মিলবে না। তাহলে? এ ব্যাপারে এই প্রযোজক বলেন, ‘এখন তো হলিউডের অংশের কাজ চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রয়োজন হলে ওখানেই ছবির কাজ শেষ করে ফেলব। পরবর্তী সময়ে আমদানি-রপ্তানি নীতিমালায় এ দেশে ছবিটি আনা গেলে এখানে মুক্তি দেব।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রিভিউ কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘গল্পের সংলাপই যদি কেটে দেওয়া হয়, তাহলে আর কী থাকে! আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, ভালো সিনেমার স্বার্থে যেকোনো গল্পের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হুটহাট বাদ না দেওয়া। তবে একেবারেই স্পর্শকাতর হলে সেটা ভিন্ন কথা।’
থ্রিলার অ্যাকশন ঘরানার ছবিটির আরেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হলিউডের ইন ব্রাভো এন্টারটেইনমেন্ট। ছবিটি ইংরেজি ভাষায় শুটিং হচ্ছে। পরে বাংলায় ডাবিং হবে।
‘এম আর নাইন’-এর চিত্রনাট্য লিখেছেন যৌথভাবে নাজিম উদ দৌলা, আসিফ আকবর, আবদুল আজিজ ও বিউ ক্লার্ক। বাংলাদেশ থেকে অভিনয় করছেন এ বি এম সুমন, আনিসুর রহমান মিলন, সাজ্জাদ হোসেন, ভারত থেকে সাক্ষী এবং হলিউড থেকে অভিনয় করছেন মাইকেল জাই হোয়াইট, ফ্রেঙ্গগ্রিলো, লুইস ট্যান্ট প্রমুখ।
তবে মূল উপন্যাসে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর কথা নেই। সেখানে দেখা যায়, “এক প্রতিভাবান বিজ্ঞানী কবির চৌধুরী কাপ্তাই শহরের কাছে একটা পাহাড়ের ভেতর আলট্রা সোনিকস (অতিশব্দ) এবং অ্যান্টি-গ্র্যাভিটি নিয়ে গোপন গবেষণা করছিল। কাপ্তাই বাঁধ তৈরির ফলে বিশাল লেকের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে পাহাড়টা। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো পাকিস্তানের কোনো শত্রু দেশের (ভারত) সরবরাহ করা শক্তিশালী ডিনামাইট ফাটিয়ে উড়িয়ে দেবে বাঁধটা। সেই ডিনামাইট নিয়ে আসে সুলতা নামের র-এর এজেন্ট। আর সেটা ঠেকানোর দায়িত্ব পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এজেন্ট মাসুদ রানার উপর।”
বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশ ও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক চিত্রনাট্যে কতটা প্রভাব ফেলেছে তা জানা যায়নি। তবে সেখানে যদি কোনো বদল ঘটে, তাহলে বলতে হয়, ‘গল্প পরিবর্তন করে ফেললে “মাসুদ রানা” তো আর থাকল না’- এ দাবি পুরোপুরি ধোপে টেকে না!