Select Page

‘কিছু বাস্তবতা মাথায় রেখে’ সমালোচনা করতে বললেন দীপংকর দীপন

‘কিছু বাস্তবতা মাথায় রেখে’ সমালোচনা করতে বললেন দীপংকর দীপন

বাংলা সিনেমার পেশাদার সমালোচনা উঠে গেছে অনেক আগেই। আজকাল বিশেষ কোনো উপলক্ষে কেউ কেউ পত্রিকায় লিখেন বটে! তার বাইরে সিনে সমালোচনার প্রধান প্রধান নজিরগুলো মেলে সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন পোর্টালগুলোতে। সেগুলো নিয়ে বিস্তর আপত্তি নির্মাতা ও কলা-কুশলীল মধ্যে।

এর মাঝে সমালোচকদের উদ্দেশে ‘কিছু বাস্তবতা মাথায় নিয়ে’ লেখার জন্য বললেন নির্মাতা দীপংকর দীপন।

তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

“সমালোচনা করুন, মন খুলে করুন। কিন্তু কিছু বাস্তবতা মাথায় নিয়ে করুন। ……………………………..

এই দেশে অনেক কষ্ট, অনেক যন্ত্রণা, অনেক অহেতুক প্রতিকুলতা পার হয়ে একজন পরিচালককে তার সিনেমাটা দর্শকের সামনে নিয়ে আসতে হয়। জুতো পাঠ থেকে চন্ডি পাঠ সব করতে হয়। এর জন্য তিনি কোন সিম্প্যাথি তো পানই না বরং ধরে নেয়া পরিচালক হয়েছো কেন- এসব তো করতেই হয় ।

হয় না ভাই। আসলেই হয় না। ভাল কোন ইন্ড্রাস্ট্রীতে হয় না। পরিচালক ক্রিয়েটিভ ছাড়া কিছু দেখে না। সব বিভাগ ঠিক মত কাজ করে , স্টুডিও সব দেখে- পরিচালক একজন এমপ্লয়ীর মত টিমের হেড হিসাবে তার কাজটা করে যান। এদেশে বিভিন্ন বিভাগ ঠিকমত প্রতিষ্ঠা না হওয়ার কারণেই পরিচালক বেচারাকেই সব টেনশন মাথায় নিয়ে ঘুড়তে হয়। ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে, লিগ্যাল, পারমিশন, একাউন্টস, কন্ট্রাক্ট, ফান্ড ফ্লো, কাস্টিং- আর্ট, প্রমোশন, শিডিউল, ডাটা ম্যানেজমেন্ট সব। আর অন্যসব বিভাগ তৈরী হবেই বা কি করে। কারো জন্য কোন বাজেট রাখা নেই। রাখার সুযোগও নেই। সিনেমার বানানোর পর প্রচারের টাকাই থাকেনা। বাজেটে চিত্রনাট্যের ঠিকমত সম্মানি নেই – কাস্টিং ডিরেক্টরের বাজেট নেই- ই পি – র জন্য পয়সা ধরা নেই, প্রডাকশন ডিজাইনার, সিজিআই দুরের কথা। টাকা আয় না করতে পারলে তারা এই সেক্টর গুলোতে মানুষ আসবে কেন ? মাস শেষে সবারই বড় টাকা লাগে। তাই ঘুড়ে ফিরে পরিচালক আর সহকারি পরিচালক দের উপরেই সব চাপ।

অথচ আমাদের অনেক ফেসবুক সৎ সমালোচকের প্রবণতা এমন – সমালোচনা সহ্য করতে না পারলে ছবি করতে আইসস ক্যান? কে কইছে তোরে ছবি করতে? যা অন্য কিছু কইরা খা।  আর যারা পক্ষ বিপক্ষ মিলিয়ে আগেই ঠিক করে রাখে – এটার ভাল দিক লিখবে- ওটার খারাপ দিক লিখবে – যারা পেইড- তাদের কথা না ছেড়েই দিলাম। তাদের আক্রমন তো আরো মারাত্বক।

যারা সিনেমা বানান, তাদের ন্যুনতম যোগ্যতাটাও অনেক সেক্টরের অনেকের চেয়ে বেশি – তারা আর অন্য যে কোন জায়গায় কাজ করলে এর চেয়ে বেশি আয় করতেন। পরিবারের অমতে- পরিবারকে বঞ্চিত করে, নিজেকে ব্যক্তিগত সব কিছু বিসর্জন দিয়ে- নানা পেইন সয়ে- বক্স অফিসের চক্কর কেটে- নিজের ভীষন মনের জোরে প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে চলে সিনেমাটা বানিয়ে,  নিজের সিনেমার আয় বিভিন্ন হাতে-বেহাতে চলে যেতে দেখা মানুষটাকে – তার সন্তান যখন একটা ফেসবুক পোস্ট দেখিয়ে বলে – আব্বা – দেখ তোমার সিনেমা নাকি পঁচা। তুমি নাকি সিনেমা বানাতে পারনা। তখন সেই লোকটির পরের ছবিটা নিয়ে ভাবার আগে ১০ বার ভাবেন,  প্রতিমাসে মনে মনে একবার সিনেমা বানানো ছেড়ে দেবার কথা ভাবেন, শ্যুটিং এর সময়েও ভেবেছেন। । কি দরকার ৫ বছর আয়ু কমিয়ে? ছেড়েই দেন একসময়। এইভাবে …… একজন পরিচালকের মৃত্যু ঘটে … ঘটেছে।  ঘটেনি?

সেলিম আল দীন স্যার সমালোচনার প্রথম  ক্লাসে বলেছিলেন  – সমালোচকের প্রথম কাজ হচ্ছে- তার সমালোচনা পড়ে মানুষ যে বইটি পড়তে আগ্রহী হয়, সেটা নিশ্চিত করা- সমালোচনা পড়ে একজন পাঠকের মৃত্যু যদি ঘটে সেটা সেই সমালোচকের জন্য একটি খুনের নামান্তর।  সমালোচক প্রশ্ন ছুড়ে দেবেন- ব্যাখা বদলে দেবেন- বিকল্পের কথা বলবেন- নানা দিকের সন্ধান দেবেন- তাতেই আরেকটি মানুষের সেই বইটি পড়ার আগ্রহ বাড়বে। এখানেই সমালোচনা সাহিত্যকে- শিল্পকে সার্ভ করে।

সমালোচনা করুন, মন খুলে করুন, কিন্তু কিছু বাস্তবতা মাথায় নিয়ে করুন। আক্রমনাত্বক নয়, গঠন মুলক সমালোচনা করুন।  খেয়াল রাখবেন একজন দর্শক যেন কমে না যায়, একজন পরিচালক মনের শক্তি হারিয়ে যেন মরে না যায়। আমাদের অনেক ভাল সমালোচক আছেন, তাদের সমালোচনা পড়ুন, সমালোচনার বইও আছে। যে প্রচন্ড মনের শক্তিতে একজন পরিচালক সিনেমা বানা, সেই শক্তিটাকে সাপোর্ট করে তারপর তাকে পরামর্শ দিন। বেশিদিন না,  একটু এমপ্যাথি নিয়ে কয়েকটা বছর। ইন্ড্রাস্ট্রীটা শক্ত পায়ে দাঁড়াক- ২০ জন পরিচালক দাঁড়িয়ে যাক- যাদের নামে দর্শক হলে আসবে- ( যদি ততদিন সিনেমা হল থাকে) , তখন না হয় আমরা অনেক কঠোর হবো- একেবারে ধুয়ে দেব। খারাপ সিনেমা বানালে ইন্ড্রাস্ট্রী থেকে বের করে দেব, সেই সময় -একজন হারিয়ে গেলে আমরা টের পাবো না.. এখন তো ……”

বর্তমানে মুক্তির অপেক্ষায় আছে দীপনের দ্বিতীয় ছবি ‘অপারেশন সুন্দরবন’। এ ছাড়া অর্ধসমাপ্ত রয়েছে ঢাকা ২০৪০ ও অন্তর্জাল।


Leave a reply