Select Page

কী থাকছে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের নতুন নীতিমালায়?

কী থাকছে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের নতুন নীতিমালায়?

যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রে শিল্পী-কলাকুশলীর সমানুপাত বাধ্যতামূলক করে নতুন নীতিমালার খসড়া করেছে সরকার। তথ্য মন্ত্রণালয় এ খসড়াটি করেছে। মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এতে সর্বসাধারণের মতামত আহ্বান করেছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের নীতিমালা ২০১৭ (প্রস্তাবিত) তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। উক্ত নীতিমালার উপর মতামত লিখিত আকারে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শাহীন আরা বেগম, পিএএ, উপ সচিবকে sas.film@moi.gov.bd এ ইমেল আইডিতে পাঠাতে হবে। পুরো খসড়াটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে। আর উল্লেখযোগ্য নিয়মগুলো দেখুন নিচে।

যৌথ প্রযোজনার নির্মিত সব চলচ্চিত্রের প্রচার সামগ্রীতে যৌথ প্রযোজনার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রচার সামগ্রীতে সংশ্লিষ্ট সব দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের নাম সমানভাবে ও গুরুত্বসহকারে উল্লেখ থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব দেশের শিল্পীর ছবি সমানভাবে প্রদর্শন করার কথাও বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়।

খসড়া অনুযায়ী, বিদেশি কোন প্রযোজক বা পরিচালক যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা লঙ্ঘন করলে পরবর্তী সময়ে তিনি বা তারা বাংলাদেশে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতি পাবেন না।

তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ২০১২ সালের নীতিমালাকে ভিত্তি ধরে নতুন নীতিমালাটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (চলচ্চিত্র) ইউছুফ আলী মোল্লা বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে খসড়াটি করা হয়েছে। খসড়াটির বিষয়ে আমরা এখন মতামত নিচ্ছি। ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মতামত নেওয়া হবে। অন্তর্ভুক্ত করার মতো যদি কোন মতামত পাওয়া যায় তবে তা যুক্ত করে খসড়াটি আমরা চূড়ান্ত করব। এজন্য সভায়ও বসব আমরা।’

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, চলচ্চিত্র পরিচালনা ক্ষেত্রে দেশগুলোর যৌথ চলচ্চিত্র পরিচালক নিয়োজনকে উৎসাহিত করা হবে। তবে সাধারণভাবে যৌথ চলচ্চিত্র প্রযোজনার ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্রের অভিনয় শিল্পী এবং মূখ্য কারিগরি কর্মীসহ শিল্পী ও কলাকুশলী সমানুপাতিক হারে নিয়োগের বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।

কাহিনীকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, গায়ক-গায়িকা, সহকারী পরিচালক, নৃত্য পরিচালক, কোরিওগ্রাফার, চিত্রগ্রাহক, সম্পাদক, শিল্প নির্দেশক, বিশেষ দৃশ্য পরিচালক, ব্যবস্থাপকসহ চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত অন্যান্য ব্যক্তিরা কারিগরি কর্মী ও কলাকুশলী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

তবে বাস্তব কোনো কারণ ও প্রয়োজনে শিল্পী ও কলাকুশলী সমানুপাতিক হারে নিয়োগ না করে কমবেশি করার আবশ্যকতা থাকলে যৌথ প্রযোজনার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় যথাযথ যৌক্তিকতা প্রদর্শন করতে হবে। বাছাই কমিটির মতামত সাপেক্ষে মন্ত্রণালয় এ বিশেষ অনুমতি দেবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, যৌথ প্রযোজনায় নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য পরীক্ষা ও পর্যালোচনাসহ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পরীক্ষা করে চলচ্চিত্রটি নির্মাণের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ বা মতামত দিতে এবং নির্মাণ শেষে চলচ্চিত্র দেখে প্রদর্শনের জন্য চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে দাখিলের ছাড়পত্র দিতে বিএফডিসিতে (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন) একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে।

বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হবেন এই কমিটির সভাপতি। এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (চলচ্চিত্র), বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজন সমিতির প্রতিনিধি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির প্রতিনিধি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রতিনিধি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রতিনিধি ও সরকারের মনোনীত একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। বিএফডিসির পরিচালক (উৎপাদন) এ কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

এই কমিটির প্রস্তাব বিবেচনা করে তথ্য মন্ত্রণালয় যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দেবে।

খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতি দেওয়া ও মির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনের বিষয়ে বাছাই কমিটির সিদ্ধান্তের ফলে সংক্ষুব্ধ প্রযোজন বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল করতে পারবেন। আপিল আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি আপিল কমিটি থাকবে।

তথ্য সচিব হবেন এ কমিটির সভাপতি। সদস্য হিসেবে থাকবেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম বা অতিরিক্ত সচিব ও সরকার মনোনীত চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজন ব্যক্তি। বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া বাছাই কমিটির অন্য কোনো সদস্য আপিল কমিটির সদস্য হতে পারবেন না।

যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্রের কাহিনী মৌলিক হতে হবে উল্লেখ করে নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশনও সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সমানুপাতিক হারে নির্ধারিত হবে। তবে কাহিনি ও চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে এবং বাস্তব কোন কারণে শুটিংয়ের লোকেশন সমানুপাতিক হারে নির্ধারণ করা না গেলে আবেদনপত্র দাখিলের সময় যথাযথ যৌক্তিকতা প্রদর্শন করতে হবে। বাছাই কমিটির মতামত সাপেক্ষে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিশেষ অনুমতি দেবে। কাহিনির প্রয়োজনে তৃতীয় কোন দেশ এবং দেশগুলোতে যৌথ চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন করা যাবে।

চূড়ান্ত অনুমোদন ও চিত্রায়নের অনুমোদনের আগে চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজ ও শুটিং শুরু করা যাবে না। চিত্রায়নের অনুমতি পাওয়ার পর ন্যূনতম ৭৫ দিন পার না হলে এই চলচ্চিত্র প্রিভিউর জন্য জমা দেওয়া যাবে না।

এতে আরও বলা হয়, যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র চিত্রায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের লোকেশনে চিত্রগ্রহণের কমপক্ষে সাত দিন আগে স্থান ও তারিখ উল্লেখ করে বাংলাদেশি প্রযোজকের পক্ষ থেকে বিএফডিসিকে অবহিত করতে হবে। কোন প্রযোজক বা পরিচালক একই বছরে যে কোনো সংখ্যক যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারবেন।

যে সব কারণে কোন যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে আগের নীতিমালার সেই বিষয়গুলো নতুন নীতিমালায় বহাল রাখা হয়েছে।

নতুন নীতিমালার পটভূমিতে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়। সে সময় ধীরে বহে মেঘনা ও পালঙ্ক-এর মতো চলচ্চিত্র নির্মিত হয় যৌথ প্রযোজনার আওতায়। সে সময় যৌথ প্রযোজনার ক্ষেত্রে বিধিবদ্ধ নিয়মনীতি না থাকলেও পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সমঝোতা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে তৈরি হয়েছিল পালঙ্ক। সেই প্রয়াসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল উভয় দেশে ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ক, স্ব স্ব দেশের ইতিহাস, ঐহিত্য, সামাজিক বাস্তবতা এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মূল্যবোধ।

‘পরবর্তী সময়ে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতির আওতায় যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিস্তৃত হয় যৌথ এ প্রয়াসের ক্ষেত্র ও পরিধি। চলচ্চিত্রের বিকাশ ও যৌথ বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজন ও বাস্তবতার নিরিখে এ নীতিমালা কয়েক দফা পরিমার্জন ও সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিস্তৃত হয়েছে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের উপাদান ও আঙ্গিক। চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি এবং অগ্রসর ভাবনা।’

পটভূমিতে আরও বলা হয়, যৌথ প্রযোজনার চলমান প্রয়াসকে বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতির সঙ্গে আরও বেশি সঙ্গতিপূর্ণ করতে এবং যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ যাতে কেবল অর্থলগ্নী ও লগ্নীকৃত অর্থ থেকে ব্যবসায়িক লাভ অর্জনের মাধ্যমে পরিণত না হয়, এসব বিষয় নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান নীতিমালা যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা থেকে নতুন নীতিমালা করা হয়েছে।

শিল্পী ও কলাকুশলীর অনুপাতে বৈষম্য, প্রচারণায় বাংলাদেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের অবজ্ঞাসহ নানা কারণে বিগত সময়ে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘নবাব’ ও ‘বস-২’ মুক্তি না দিতে আন্দোলনে নামে চলচ্চিত্র শিল্পী ও পরিচালকরা।

সর্বশেষ গত ৯ জুলাই ‘চলচ্চিত্র পরিবার’ এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে দেশের চলচ্চিত্রের স্বার্থে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালা দ্রুত যুগোপযোগী ও পূর্ণাঙ্গ করে নতুন নীতিমালা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ কার্যক্রম স্থগিত রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের সব ধরণের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।


Leave a reply