কেমন লেগেছে কৃষ্ণপক্ষ?
‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বরাবরই সরব। মুভি বিষয়ক গ্রুপগুলো তার প্রমাণ। হুমায়ূন আহমেদ, মেহের আফরোজ শাওন, রিয়াজ, মাহির নাম ছিল মুভি লাভারদের লেখায়। সিনেমাটি মুক্তির দিনই আবারও এসেছে তাদের নাম।
ফেসবুকে পাওয়া বেশকটি লেখায় দেখা গেছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া, আর সবকটি লেখাই দীর্ঘ। তার থেকে নির্বাচিত কিছু মতামত তুলে ধারা হলো বিএমডিবি পাঠকদের জন্য—
রহমান মতি “কৃষ্ণপক্ষ’ দেখার আগে ও পরে” শিরোনামে দীর্ঘ লেখায় বলেন, “সাহিত্য ও সিনেমার মধ্যে তফাতটা বড়। তবে একটা লাভ আছে।সাহিত্যে যে চরিত্রগুলো দেখি সিনেমাতে সেগুলো আবার পাই।’কৃষ্ণপক্ষ’-তে মুহিব, অরু এবং তাদের কাছের মানুষেরা উপন্যাসে সবাই একরকম কিন্তু সিনেমায় তারা আবারও নতুন হয়ে আসে।” রিয়াজ প্রসঙ্গে লেখেন, ‘সেই পারফেকশন থেকে মুহিব বা রিয়াজ তার চরিত্রে পেশাদার অভিনেতা তো বটেই। তার অভিনয় ন্যাচারাল। কোনো বাড়তি কিছু বা আরোপিত কিছু সে রাখে না।…তার মধ্যে শক্তিমান ব্যক্তিত্ব আছে যা তাকে ক্যারেক্টারে মিশে যেতে শেখায়।দুর্ঘটনার পরে আইসিইউতে থাকা অক্সিজেনের নল মুখে রিয়াজের মুমূর্ষু ভঙ্গি দেখে চোখ ছলছল করে এবং এ ধরনের দু’চারটা সিকোয়েন্সই একজন পরিণত অভিনেতার অভিনয়শক্তি বিশ্লেষণের জন্য যথেষ্ট।’ এ ছাড়া তার দৃষ্টিতে মাহি, ‘অরু বা মাহি উপন্যাসের ব্যক্তিত্ববান, মায়ময় ক্যারেক্টার। মাহির জন্য চাপ ছিল একটাই, বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে এক্সপেরিমেন্টে নিজেকে ভাঙা। ভাঙার কাজটি শাওন আদায় করে নিয়েছে আর মাহি কাজটা নিজেও আদায় করেছে নিজেরই জন্য। একে self analysisও বলা যায়। মাহী তার ক্যারেক্টারের মধ্যেই ছিল সবসময়। …নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়েছে অরুর জন্য।’
মো. অনিকউজ্জামান উপন্যাসটি না পড়ার কথা জানিয়ে লেখেন, “সিনেমার গল্প অনুযায়ী ‘কৃষ্ণপক্ষ’ কোন আহামরি ও বিস্তৃত গল্প না হলেও অন্তত ‘আমার আছে জল’ ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ মুভির থেকে যথেষ্ট গুণে একটি স্ট্যান্ডার্ড মানের ও খুবই আনপ্রেডিক্টেবল একটি গল্প, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা উপন্যাসটি পড়েন নাই। তাই, আপনি যদি উপন্যাসটি না পড়ে থাকেন তবে গোটা সময়টি আপনি সিটে বসে ইনজয় করতে পারবেন ও আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, ক্লাইম্যাক্সে আপনার জন্য কি অপেক্ষা করছে, আমার ক্ষেত্রে অন্তত তাই হয়েছে।”
তিনি আরও লেখেন, ‘বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এত সুন্দর ও নিখুঁত পরিচালনা, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, কোরিওগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি, ক্যামেরা শট, ট্রলি ও ক্রেনের ব্যবহার, কালার গ্রেডিং শেষ কবে কোন মুভিতে দেখেছিলাম তা মনেই পড়ে না। এই মুভিতে এমন কিছু ক্রেনের শট নেয়া হয়েছে যা দেখে বিস্ময়ে আমি হা হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু এমন নয় যে শটগুলোর খুব প্রয়োজন ছিল। চাইলে নরমাল লং শটেই দৃশ্যগুলো শেষ করে দেয়া যেত কিন্তু ঐভাবে শটগুলো নেবার কারণে এখন গোটা মুভিটির আবেদন বহু অংশে বেড়ে গেছে। এই মুভি দেখে কেউ বলতেই পারবে না যে এটা শাওন এর নির্মিত প্রথম মুভি।’
বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাডমিন তানভীর খালেদ লেখেন, ‘আমি যখন কৃষ্ণপক্ষ পড়েছি কখনো মুহিব চরিত্রে রিয়াজকে কিংবা অরু চরিত্রে মাহিকে ভাবিনি। কিন্তু কেন জানি এ দুজন আমার কল্পনার চেয়ে খুব খারাপ করেননি। আর তানিয়া, আজাদ আবুল কালাম, মুহিবের বন্ধুর বউয়ের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী তো কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন! কেমন হয়েছে কৃষ্ণপক্ষ? হুমায়ূনভক্তদের বেশিরভাগেরই অনেক প্রিয় উপন্যাস এটি, সেটি যদি সুনির্মিত না হয় ভক্তরা এটলিস্ট শাওনকে ক্ষমা করতেন না। আমার কাছে ত ভালই লেগেছে, সিনেমাতে অনেকবার অজান্তেই চোখ ভিজে গেছে। মূল বইয়ের সাথে চলচ্চিত্রের বেশ কিছু দৃশ্যে অমিল রয়েছে! কিন্তু বিশ্বাস করেন প্রতিটি অমিল গল্পটিকে বই থেকে চলচ্চিত্রে পরিণত হতে সাহায্য করেছে।’
আবদুল্লাহ আল মানি লেখেন, ‘চরিত্রগুলো মুভির প্রাণ হলেও এই মুভির সব থেকে ভালো দিক হল স্ক্রিনপ্লে। অসাধারণ স্ক্রিনপ্লে করা হয়েছে মুভিতে। হুমায়ূন আহমেদ এর গল্প নিয়ে মুভি আর বৃষ্টিবিলাশ হবে না সেকি হয়, সেটাও আছে মুভিতে। সাথে আছে মৃদু আলোর খেলা ও চমৎকার কিছু গান। সব থেকে ভালো লেগেছে মুভির এন্ডিং, অন্যরকম এক এন্ডিং দিয়েছেন পরিচালক মুভিতে। বিশাল হল রুমের ভিতরে আলো-ছায়া ও ধোয়াশার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ নিয়ে ইতি দিয়েছেন মুভিটিকে, যা দিয়েছে অনন্য এক মাত্রা।’