Select Page

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সোহেল রানা, স্ট্যাটাস মুছলেন ফারুকী

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সোহেল রানা, স্ট্যাটাস মুছলেন  ফারুকী

সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল সারা দেশ। এ আন্দোলনের পক্ষে বা বিপক্ষে খুব একটা সরব নন শোবিজ সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে নিজের মত তুলে ধরলেন মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেতা ও প্রযোজক সোহেল রানা। নির্মাতা খিজির হায়াত খান সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিলেও আরেক নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পোস্ট এখন আর দেখা যাচ্ছে না।

কোলাজ: সোহেল রানা, খিজির হায়াত খান ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

কোটা প্রথা বাতিলের পক্ষে সোহেল রানা নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে লিখেছেন,“মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বারবার বলা হচ্ছে কেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৩ বছর তার সাথে যদি আরো ১২ বছর যোগ করা হয় তাহলে তার বয়স হয় ৬৫। এই বয়সে তো নিশ্চয়ই কেউ চাকরির জন্য চেষ্টা করে না বা স্কুল-কলেজে ভর্তি হয় না।”

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের বাবার কারণের জন্য কোটা সিস্টেমে চাকরি এবং ভর্তি হতে হবে এটা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার শামিল। নিজ ম্যারিটির গুণে তারা ভর্তি হবে পরীক্ষা দেবে এবং চাকরিতেও ইন্টারভিউ দিবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কখনো এ ধরনের সুযোগ চাইনি। সম্মান যখন নেই তখন এই ধরনের সুযোগ দিয়ে তার সন্তানদেরকেও সম্মান দেখানো একটা অপচেষ্টা মাত্র।”

সর্বস্তরে কোটা বাতিল চেয়ে তিনি আরো বলেন, “সম্মানী দেওয়া ছাড়া তাদের জন্য আপনারা কি করেছেন মুখে, মুখে? তাদের জন্য মায়া কান্না করেছেন ড্রেস থেকে শুরু করে চিকিৎসা বা চলাফেরা কোনো কিছুতেই কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই আমরা কখনোই কিছু চাইনি। জাতির পিতার নির্দেশে দেশ স্বাধীন করার দরকার ছিল আমরা সেটাই করেছি। সর্বস্তরে এই কোটা সিস্টেম বাতিল করা হোক এটা দেশের সকলের দাবি।”

চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে পোস্ট দেয়ার পর সরিয়ে নেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ধারণা করা হচ্ছে, বিতর্ক এড়াতেই পোস্টটি ডিলিট করেছেন তিনি। সংগতকারণে পোস্টটি এখানে দেয়া হলো না।

এদিকে নির্মাতা খিজির হায়াত খান লেখেন, ‘মাননীয় আদালতের একটি রায় দেশের সার্বজনীন জনসাধারণের স্বার্থের ঊর্ধ্বে নয়। একটি প্রগতিশীল দেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকতে পারেনা। ঢালাওভাবে সকলকে অনগ্রসর নাম দিয়ে কোটার সিল মেরে সকল মহান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে অপমান করবেন না।’

অন্য এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশের যেকোন সরকারি চাকরিতে যে কোন প্রকারের কোটার বিপক্ষে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসাবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার মুক্তিযোদ্ধা মামারা কিংবা যে কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা উত্তরাধিকার সূত্রে যুগ যুগান্তরে পারিবারিক কোটা পেতে দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দেননি।’

এছাড়া ‘কথা যৌক্তিক’ উল্লেখ করে লেখক আনিসুল হক লিছেছেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি জানাচ্ছেন। এগুলো হলো ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা–সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।।’

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এই কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর ফলে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়।

তবে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। ফলে কোটা বহাল হয়ে যায়।

এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। কোটা বাতিলের দাবিতে আবার রাস্তায় নামেন তাঁরা। ঈদুল আজহার আগে কয়েক দিন বিক্ষোভের পর দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ১ জুলাই থেকে জোর আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা।


মন্তব্য করুন