Select Page

খালেদা জিয়ার বায়োপিক মুক্তির খবর ‘ভিত্তিহীন’, তাহলে খবরের উৎস কী!

খালেদা জিয়ার বায়োপিক মুক্তির খবর ‘ভিত্তিহীন’, তাহলে খবরের উৎস কী!

১১ বছর পর আসছে খালেদা জিয়ার বায়োপিক ‘আপসহীন’— এ শিরোনামে ২১ আগস্ট খবর প্রকাশ করেছিল কালের কণ্ঠ। সেখানে ছবির প্রযোজক ও জিয়াউর রহমানের হেলাল খান ও খালেদা জিয়া চরিত্রের অভিনেত্রী নিপুণ এবং প্রয়াত পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে সরফরাজ আনোয়ার উপলের মন্তব্য জুড়ে দেয়া হয়। এ খবর প্রকাশের পর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি শিবিরে। এখন হেলাল ও উপল জানাচ্ছেন, ‘আপসহীন’ মুক্তি নিয়ে প্রচারিত খবর উদ্দেশ্যপ্রসূত ও ভিত্তিহীন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তারা এ কথা বলেন।

২০১৩ সালে ‘আপসহীন’ নির্মাণ শুরু করেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বায়োপিক হওয়ায় পারিপার্শ্বিক কারণে তখন এ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে হেলাল খান প্রথম আলোকে বললেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বায়োপিক “আপসহীন” ছবির মুক্তির খবরটি কয়েকটি অনলাইন, ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন ও দুরভিসন্ধিমূলক। এমনকি এই ছবির শুটিংই তো শেষ হয়নি।’

কথা প্রসঙ্গে হেলাল খান জানালেন, ‘শুটিংয়ের সময়ের কথা খুব একটা মনেও নেই। তবে যত দূর মনে পড়ে, ওই সময় এফডিসিতে ৫-৭ দিন আমরা শুটিং করেছিলাম। তারপর পুরো কাজটা বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ করে শুনলাম, “আপসহীন” মুক্তি পাচ্ছে! আচমকা এমন খবরে আমি তো অবাক, একই সঙ্গে বিব্রতও হয়েছি।’

‘আপসহীন’ প্রসঙ্গে হেলাল খান বলেন, ‘বায়োপিক নির্মাণ নিয়ে ২০১৩ সালে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার ভাই ও আমি পরিকল্পনা করেছিলাম। তখন কিছু শুটিংও করা হয়েছিল। ওই সময় রাজনৈতিক মামলায় আমি গ্রেপ্তার হই। ফলে বয়োপিক নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়, এরপর আর কখনো কোনো শুটিং হয়নি। ২০১৩ সালের পর ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক পটভূমিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা প্রদান করা হয়। চিকিৎসাসেবাও বাধাগ্রস্ত করা হয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে বায়োপিক নির্মাণের কাজ তখন থেকেই বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে কয়েকটি গণমাধ্যমে এসেছে, “আপসহীন” বায়োপিকটি নির্মিত হয়েছে। যদি এমনটাই হতো, তাহলে তো ওই সময় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি থেকে নিবন্ধন করা হতো, যা কখনোই করা হয়নি। এদিকে ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার মারা যান। এসব পটপরিবর্তনের কারণে আর কখনো বায়েপিক নির্মাণের বিষয়ে আমি চিন্তাভাবনা করিনি। কাজেই বায়োপিক মুক্তির বিষয়টি মিথ্যা, গুজব, ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

অথচ এর আগে কালের কণ্ঠে হেলাল খানকে উদ্ধৃত করা হয় এভাবে— ‘ম্যাডাম অসুস্থ। এই মুহূর্তে এটা নিয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে না। তিনি সুস্থ হলেই ছবিটি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করব। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই হবে।’ সঙ্গে যোগ করা হয়, ‘মাঝখানে ১১ বছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে। তাই ছবিটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন-পরিমার্জন করতে হবে। কিছু দৃশ্য হয়তো নতুন করে শুটিং করব। কিছু দৃশ্য সম্পাদনা করে বাদ দেওয়া হবে। এ জন্যও কিছু দিন সময় লাগবে। আশা করছি, এই বছরই দর্শকদের ছবিটি দেখাতে পারব।’

একই বিষয়ে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে উপল বললেন, ‘২০১৩ সালে শুনেছিলাম “আপসহীন” নামে একটি বায়োপিক হচ্ছে, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবনী নিয়ে। এরপর কয়েক দিন শুটিং হয়ে নানা প্রতিকূলতায় তা থেমে যায়। তারপর কিন্তু আর কোনো খবর ছিল না। হঠাৎ করে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি, “আপসহীন” মুক্তি পাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যে ছবির শুটিংই শেষ হয়নি, তা মুক্তি পায় কেমন করে! তা ছাড়া আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।’

উপল আরো বলেন, ‘মুক্তি নিয়ে যে কথা হচ্ছে, এই ব্যাপারেও আমার কারো সঙ্গেই কোনো কথা হয়নি। এই ছবি মুক্তি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনাও আমাদের নেই, আমার বক্তব্য অন্যায়ভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। এই ছবির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

তবে কালের কণ্ঠে তাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে এভাবে— ‘আমরা পারিবারিকভাবেও উদ্যোগ নিয়েছি বাবার সব সৃষ্টি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। হেলাল আঙ্কেল এখন দেশে আছেন। আমি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করব। এটিই আমার বাবার নির্মিত শেষ চলচ্চিত্র। দর্শক দেখলে বাবার আত্মা শান্তি পাবে। এটা শুধু যে একটা চলচ্চিত্র তা কিন্তু নয়, একই সঙ্গে সফল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার জীবনীও। দেখলে দর্শক জানতে পারবে দেশের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা, ত্যাগ ও মহিমার কথা।’

‘অপোসহীন’ ছবিতে খালেদা জিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। ছবিটিতে যুক্ত হওয়ার নেপথ্যের ঘটনা জানিয়ে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেছিলেন, “একদিন গাজী মাজহারুল আনোয়ার আঙ্কেল আমার বাসায় আসেন। ছবিটির কথা জানালেন। তখন শাহ আলম কিরণ ভাইয়ের ‘৭১-এর মা জননী’ ছবির শুটিং চলছে। আমাকে আঙ্কেল বললেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়ার জীবনী নিয়ে ‘আপসহীন’। আমাকে তাঁর চরিত্রেই রূপদান করতে হবে। জানতে চাইলেন, আমার আপত্তি আছে কি না। জানালাম, অভিনেত্রী হিসেবে ম্যাডামের চরিত্রে অবশ্যই অভিনয় করা উচিত। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে রাজপথে সরব। আমি রাজি হওয়ায় আঙ্কেল খুব খুশি হলেন। জানালেন, আমার আগে জয়া আহসান ও নুসরাত ইমরোজ তিশার কথা উঠেছিল। তবে গাজী আঙ্কেলই হেলাল ভাইকে বলেছিলেন, নিপুণ হলে ম্যাডামের চেহারার সঙ্গে দারুণ মিলবে।’ শুটিংয়ের আগে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অনেক পড়াশোনাও করেছেন নিপুণ। গাজী মাজহারুল আনোয়ারই তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন। নিপুণ বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আঙ্কেলের [গাজী মাজহারুল আনোয়ার] প্রতি। আজ তিনি বেঁচে নেই, তবে তাঁর সৃষ্টি আছে। আশা করছি, হেলাল ভাই দ্রুত ছবিটি মুক্তি দেবেন। আমিও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করব।’

এদিকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ নামের সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন পরিচালক এম কে জামান। শোনা গিয়েছিল, আগামী অক্টোবরে শুটিং শুরু হবে। গত সপ্তাহে এমন ঘোষণার পর সিনেমাটি বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, জিয়া পরিবারের কেউ এটা জানেন না, কাউকে না জানিয়ে এমন সিনেমা করা উচিত নয়। তাই এটা বন্ধ না করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গেল ১৮ আগস্ট পরিচালক সমিতিতে সিনেমাটির নাম নিবন্ধন করে আকন্দ এন্টারটেইনমেন্ট পিএলসি। তখন পরিচালক এম কে জামান বলেছিলেন, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আকন্দ এন্টারটেইনমেন্ট পিএলসি জিয়া পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারাই আমাকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। সে অনুযায়ী কাজ এগোচ্ছে। চিত্রনাট্য লেখার কাজ চলছে। প্রি-প্রোডাকশন শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরই এক পোস্টে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয় যে, সিনেমাটির বিষয়ে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।


মন্তব্য করুন