গান হিট তো ছবি হিট: ব্যবসাসফল ছবির সূত্র
সালমান শাহ স্মৃতিশক্তি হায়িয়েছেন ভিলেনের হাতে মার খেয়ে। এই সুযোগে ভিলেন রাজীব তার বিদেশ ফেরত মেয়ে সোনিয়ার সাথে সালমানের বিয়ের আয়োজন করে। সালমানের বাবা আবুল হায়াতের উপস্থিতিতেই চলে বিয়ের আয়োজন। অন্যদিকে প্রেমিকা শাবনূরকে রাজীবের দারোয়ান গেট থেকেই তাড়িয়ে দেয়।
কাজী সাহেব কালেমা পড়ানো শুরু করেছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে ভেসে আসছে ঢং ঢং হৃদয় কাঁপানো আওয়াজ। কালেমা পড়ানো শেষ, নায়কের মুখে কবুল শোনার অপেক্ষায় সবাই। মানসিক ভারসাম্যহীন নায়ক কবুল বললেই সব শেষ। নায়কের ঠোঁট কাঁপছে, কবুল বলতে যাচ্ছে। দর্শকেরা সব নীরব। কী হবে, কী হবে?
হঠাৎ ব্যাকগ্রাউন্ডে বেঁজে উঠলো “ও সাথিরে, যেওনা কখনো দূরে।” স্ক্রীনে হঠাৎ শাবনূরের আগমন। গোটা সিনেমা হল হৈ হৈ করে উঠলো। চললো কানফাটানো হাততালি। মানুষের আনন্দ আর ধরেনা।
এভাবেই স্বপ্নের ঠিকানা ছবির ক্লাইম্যাক্স দর্শকের আবেগ নিয়ে খেলছে। ছবির গল্পে আহামরি কিছুই ছিলোনা। ধনী গরীবের প্রেম, বাঁধা, মারপিট, নায়কের স্মৃতি হারানো আবার আঘাত পেয়ে স্মৃতি ফিরে পাওয়া। গতানুগতিক সব কিছুই ছিল ঐ ছবিতে। তারপরও দর্শক ছবি দেখেছে। হেসেছে, কেঁদেছে। এর কারণ ছিল গান। একটা ছবির গান যখন হিট, ছবি এমনিতেই হিট।
নব্বইয়ের দশকের ছবির মুল আকর্ষণই ছিল জনপ্রিয় সব গান। গল্পে একঘেঁয়েমি চলে এলেও একেকটা গান দর্শককে দারুন বিনোদন দিতো। এখনকার ছবির গল্পগুলো অনেক আলাদা করার চেষ্টা করলেও ভালো উপস্থাপনা আর সুন্দর গানের জন্য ছবি দর্শকপ্রিয়তা পায় না। গান যে খুব খারাপ হয় তাওনা। কিন্তু যথেষ্ট প্রচারের অভাবে সেভাবে জনপ্রিয় হতে পারেনা।
আপনি যদি আশি-নব্বইয়ের সিনেমাগুলো দেখেন, খেয়াল করবেন প্রতিটা ব্যবসাসফল ছবিই জনপ্রিয় গানে ভরপুর ছিলো। ছবি মুক্তির আগেই গান গুলো মানুষের মুখে মুখে চলে যেত রেডিও, টেলিভিশন কিংবা ভ্যানে করে মাইকিং এর মাধ্যমে।
স্বপ্নের ঠিকানা ছবি গল্প দুর্বল হলেও “এই দিন সেই দিন কোনো দিন তোমায় ভুলবো না, চলতে চলতে পাবো দুজন স্বপ্নের ঠিকানা”, “ও সাথিরে যেওনা কখনো দূরে” কিংবা “নীল সাগর পার হয়ে তোমার কাছে এসেছি” সহ দারুন সব গানের জন্য হল ভর্তি দর্শক পেয়েছিলো।
এখনকার পরিচালকগন যদি ছবি এবং এর গান প্রচারে একটু উদ্যোগ নেয়, দর্শক আসবেই।