Select Page

গুষ্টি কিলাই সিনেমা হল ব্যবসার!

গুষ্টি কিলাই সিনেমা হল ব্যবসার!

Blog_Film Screening Methodআমাদের দেশে একটি সিনেমা নির্মানের পরে কি পদ্ধতিতে চলে আপনার এলাকার সিনেমা হলে? আপনি কি জানেন?
খুব সহজ হিসেবে বলা যায়, সিনেমা হল মালিকরা মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার প্রযোজক-পরিবেশকের কাছে গিয়ে সিনেমাটি এককালীন (বুকিং মানি) টাকা দিয়ে সিনেমাটি এক বা দুই সপ্তাহের জন্য ভাড়া আনবে। (এই বুকিং মানিকেই বলে টেবিল কালেকশন) তারপর সে তার সিনেমা হলে সেই সিনেমাটি চালাবে। টিকেট বিক্রি করে যা লাভ হবে, পুরোটা তার হওয়ার কথা। কিন্তু আসল ঘটনা ভিন্ন।

বাংলাদেশে তিনটি সিস্টেমে সিনেমা চলে।
১. বুকিং মানি যা দিবে তার থেকে ১ টাকাও বেশি টিকেট বিক্রি হলে মূল মূল্যের অর্ধেক পাবে প্রযোজক।
২. এককালীন টাকায় চুক্তি। ১/২ সপ্তাহের জন্য সিনেমাটি চলবে হলে। এর মধ্যে আর কোন টাকা পাবে না প্রযোজক। লাভ-লস হল মালিকের।
৩. কিছু সিনেমা হল অগ্রিম টাকা দেয় না। তারা বিক্রিত টিকেটের আয় থেকে শতকরা হিসেবে নির্দিস্ট পরিমান টাকা দেয় প্রযোজককে। যেমন বলাকা ২০% এবং স্টার সিনেপ্লেক্স দেয় ১৫% টাকা।

তো এবার বুঝেন, একজন হল মালিক কি চাপের মধ্যে, কি রিস্কের মধ্যে একটি সিনেমা তার সিনেমা হলে চালান। অপরদিকে একজন প্রযোজক আরামে বসে সিনেমা ভাড়া দিয়ে তার দায়মুক্ত হোন। মাঝখানে আছে বুকিং এজেন্ট নামক এক শ্রেনীর দালাল। একেক জন দালালের নিয়ন্ত্রনে থাকে ১০-২০টি সিনেমা হল মালিক। এরা প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের সিনেমা হল মালিক। তারা ঢাকায় আসার ঝামেলা এড়াতে এবং বুকিং এজেন্টদের প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ জেনে তাদের উপরই দায়িত্ব ছেড়ে দেয় যে কোন সিনেমাটি চালালে তার মুনাফা হবে। এই সুযোগটিই নেয় বুকিং এজেন্টরা। তারা তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকা সিনেমা হল মালিককে বুঝায়- ‘এই সিনেমাটির দারুন বাজার। এটা চালালে আপনার লাভ হবে। এটাতে অমুক নায়ক আছে, অমুক নায়িকা আছে। এটার জন্য সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ….’

যেহেতু বুকিং এজেন্টরা সারাদিন-রাত কাকরাইল সিনেমা বাজারে পড়ে থাকে, যেহেতু তারা বহুবছর ধরে এই লাইনে আছে, তাই তাদের উপর আস্থা রাখে সিনেমা হল মালিকরা। আর তখনই এই বুকিং এজেন্টরা এক চেটিয়া রাজত্ব করে প্রযোজকদের উপর। প্রযোজকরা তখন তাদের তেল দেয়, যেন তার নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হলে তার সিনেমাটি বুকিং করিয়ে দেয়। বিনিময় হয় টাকার মাধ্যমে। আর জিম্মি হয়ে পড়ে গোটা চলচ্চিত্র।

একজন সিনেমা হল মালিককে নায়ক ভেদে ১-৪ লক্ষ টাকায় একটি সিনেমা ১ সপ্তাহের জন্য হলে চালাতে হয়। এখন হল মালিক তো চাইবেই এমন কারো ছবি আনতে যার বাজার ভালো। যেন কোন লোকসান না হয়। তখনই জন্ম নেয় কিছু স্টার হিরোর। অন্যদিকে বন্ধ হয়ে যায় নবাগত নায়কদের আগমনের পথ।

যা বুঝলাম, তাতে শুধু বলতে ইচ্ছে করছে ‘গুষ্টি কিলাই সিনেমা হল ব্যবসার’!

অপরদিকে অপার বাংলা কলকাতায় এই ধরনের কোন সিস্টেম-ই নেই। সেখানে প্রযোজককে উল্টো সিনেমা হল মালিককে টাকা দিতে হয় সিনেমা হল ভাড়া বাবদ। যেমন, কলকাতা শহরের কোন সিনেমা হল দৈনিক ৩০-৪০ হাজার রুপিতে আর গ্রামের সিনেমা হল সপ্তাহিক ৫০-৭০ হাজার রুপিতে এক সপ্তাহের জন্য ভাড়া নিতে হয়। এখন যা টিকেট বিক্রি হবে পুরোটাই প্রযোজকের। হল মালিক পক্ষ ভাড়া খাটিয়েই তার আয় করে নিবে।

কলকাতার একটি হলে এক সপ্তাহের জন্য প্রযোজককে ভাড়া দিতে হবে (৪০*৭) ২ লক্ষ ৮০ হাজার রুপি। এখানে হল মালিকের কোন রিস্ক নেই। তাই হল মালিকরা এই ব্যবসায় আগ্রহী হোন। ফলে দেশে হলের সংখ্যা বাড়ে। অপরদিকে একজন প্রযোজক একসাথে অনেকগুলো হল ভাড়া নিতে পারেন। আর মাল্টিপ্লেক্সে তাদের শেয়ারও বেশী, ৩৫%। কিছু হলে আবার চলে টিকেটের আয়ের ৪৮/৫২ শেয়ারে। প্রযোজক পায় ৫২% আর সিনেমা হল মালিক পায় ৪৮% টাকা।

বাংলাদেশেও এই সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন। কোন বুকিং এজেন্ট থাকবে না। প্রযোজক সরাসরি হল মালিকের কাছ থেকে হল ভাড়া নিবে। আর টিকেটের টাকা বুঝে নিবে। নতুবা প্রযোজক পুরো সিনেমা হল ভাড়া নিয়ে তার সিনেমা চালাবে। সিনেমা হল মালিক নির্দিস্ট ভাড়া পাবে এবং তার টিকেট বিক্রি থেকে শুরু করে যাবতীয় তদারকি করবে তার হলের কর্মচারীরা। ব্যস! তারপর লাভ-লস প্রযোজকের। দর্শক টানতে পারলেই সিনেমা ভাল চলবে। তখন প্রযোজকরাও চিন্তা করবে দর্শক চাহিদার কথা। এবং আবিস্কার হবে নতুন নতুন মুখের। কারন তখন প্রযোজক নিজে রিস্ক নিবে, সিনেমা হল মালিক নয়। নইলে এই বুকিং এজেন্টের খপ্পরে গোটা চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। সাথে সাথে কম টাকার টিকেট দেখিয়ে কম ট্যাক্স দিয়ে আয়কর ফাঁকির কথা চিন্তা করবে না কোন হল মালিক। সরকারী রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

বদলে দাও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিবেশনার পদ্ধতি, বাঁচাও বাংলাদেশী চলচ্চিত্র।


৪ Comments

  1. robiulrana

    ছবি মুক্তির দিন বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার যে ঢাকার প্রায় সব হলেই টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করেন হলের কর্মচারীরাই এটা নিয়ে কিছু লিখলে ভাল হয়

  2. বিবাহিত ব্যাচেলর

    কলিকাতার যেই কথা বললেন সেইটাতে কোন ভরসা পাইনা।তাই সেই আলোচনায় ও গেলামনা।
    তবে আমার অপ[অছন্দের লোকের একটা প্রস্তাব পছন্দ হইছে এই ব্যাপারে।
    ফারুকির প্রস্তাব।
    সেই হিসেব আমাদের দেশে চালু কর্লেই সিনেমা ব্যাবসার সাথে নতুনন্দের আগমনের পথ প্রশস্থ হইবে।
    সরকারের নজরদারি এবং প্রত্যেকটা সিনেমা থেকে সরকার যদি সঠিকভাবে লাভবান হইতে পারে তখন সরকার নিজের ইচ্ছায় ই আমাদের সিনেমাহলের উন্নয়নে নেমে যাবে।

    এখন সরকারের আমলা পর্যায়ে যেইসব চোর চোট্টা বইসা থাকে তারা সেইটা কর্বে কি?
    কর্বেনা।

    এবং সেই একই কারনে এই বুকিং এজেন্টদের আপনে ইন্ডাষ্ট্রী থেইকা সরাইতে পারবেন না।
    সরকারিভাবে কঠোর হস্তক্ষেপ না হইলে আমাদের সিনেমা ইন্ডাষ্ট্রি থেইকা মূর্খ(এক৯দম মূর্খ)দের সরানো যাইবেনা।
    মেধাবিরা এইখানে টিকতে পারবেনা।

    ধন্যবাদ।

Leave a reply