গোল্ডেন বাঁশ এ্যাওয়ার্ডস ২০১৫
সিনেমায় ভাল পারফরম্যান্সের জন্য সারাবিশ্বে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা বা পুরষ্কার। কিন্তু ১৯৮১ সাল থেকে আমেরিকায় সবচেয়ে বাজে সিনেমাগুলোকে পুরষ্কার দেওয়া শুরু হয়। এই পুরষ্কারের উদ্দেশ্য হলো নিম্নমানের সিনেমা বানাতে নির্মাতাদের অনুৎসাহিত করা। হলিউডে দেওয়া এই পুরষ্কারের নাম Golden Raspberry Awards. এর দেখাদেখি ২০০৯ সালে ভারতে শুরু হয় Golden Kela Awards.
আমাদের দেশেওতো কত আজেবাজে ছবি নির্মিত হয়। তাই ২০১৫ সাল থেকে আমরাও আমাদের দেশের সবচেয়ে বাজে সিনেমাগুলোকেও পুরস্কৃত করা শুরু করি। আমাদের ঢালিউডে এই পুরষ্কারের নাম দেওয়া হয়েছে Golden Baash Awards. ২০১৫ সালে যে সকল সিনেমা ও কলাকুশলীরা আমাদের বাঁশ দিয়েছে, সেসকল সিনেমা ও কলাকুশলীদের এই পুরষ্কার দেওয়া হবে। এই বছর সিনেমায় সবচেয়ে বাজে অবদানের জন্য নিম্নে উল্লেখিত সিনেমা ও ব্যক্তিবর্গ Golden Baash Awards পাবেন…
*** সবচেয়ে বাজে সিনেমাঃ- কমিশনার
২০১৫ সালের সবচেয়ে বাজে সিনেমার পুরষ্কার পাবে আনোয়ার সিরাজি পরিচালিত পলিটিকাল এ্যাকশন মুভি “কমিশনার“। কারণ সিনেমাটি রাজনীতির মত একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে নির্মিত হলেও সিনেমার কাস্টিং, মেকিং, এক্টিং, স্ক্রিনপ্লে কোত্থাও বিন্দুমাত্র সিরিয়াসনেস পাওয়া যায় নি। একজন কানে কালা দর্শকও আড়াই ঘণ্টা ধৈর্য্য সহকারে সিনেমাটি পুনরায় দেখার ঝুঁকি নিতে চাইবে না। তাই “সবেচেয়ে বাজে সিনেমা”র পুরষ্কার”টা এই সিনেমারই প্রাপ্য।
*** সবচেয়ে বাজে পরিচালকঃ- এফ জাহাঙ্গীর (অশান্ত মেয়ে)
২০১৫ সালের সবচেয়ে বাজে পরিচালকের পুরষ্কার পাবেন “অশান্ত মেয়ে” সিনেমার পরিচালক এফ জাহাঙ্গীর। গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় যদি পুরো সিনেমাটি আপনি দেখেন তাহলে পরিচালক সাহেবের “মুন্সিয়ানা” দেখে আপনার মুখ দিয়েও তার নামের প্রথম অক্ষর সমৃদ্ধ গালি নিঃসৃত হয়ে যাবে। তাই “সবেচেয়ে বাজে পরিচালকের”র পুরষ্কার”টা তারই প্রাপ্য।
*** সবচেয়ে বাজে অভিনেতাঃ- আলেকজান্ডার বো (পাকড়াও)
বাংলা সিনেমার অন্ধকার যুগে (অশ্লীলতার যুগে) আলেকজান্ডার বো এর “অবদান” প্রকট থাকলেও, একজন অভিনেতা হিসেবে তাকে কেউ “বাজে অভিনেতা” বলবে না। তারপরও হারুন উজ্জামান পরিচালিত “পাকড়াও” সিনেমার জন্য তাকে “সবচেয়ে বাজে অভিনেতার পুরস্কার”টা দেওয়াই যেতে পারে। কারণ যারা সিনেমাটি দেখেছেন তারা এক বাক্যে স্বীকার করবেন এই সিনেমাতে আলেকজান্ডার তার সেরা কাজটা দেওয়া তো দূরে থাক স্বাভাবিক বা এভারেজ কাজটাও দেওয়ার চেষ্টা করেননি। মনে হয়েছে তাকে দিয়ে জোর করিয়ে একটা গুরুত্বহীন চরিত্রে অভিনয় করানো হয়েছে। তাই “সবেচেয়ে বাজে অভিনেতা”র পুরষ্কার”টা তারই প্রাপ্য।
*** সবচেয়ে বাজে অভিনেত্রীঃ- সিলভি আজমী (কমিশনার)
আনোয়ার সিরাজি পরিচালিত পলিটিকাল এ্যাকশন মুভি “কমিশনার” এ যেসকল তরুন শিল্পীরা অভিনয় করেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়ির ও অভিজ্ঞ ছিলেন সিলভি আজমী এবং তার চরিত্রটাও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সিনেমায় তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো তো দূরে থাক, নতুনদের সাথে পাল্লা দিয়ে তিনি আরো আনাড়ি শিল্পীর মত কাজ করার চেষ্টা করেছেন। তাই “সবেচেয়ে বাজে অভিনেত্রী”র পুরষ্কার”টা তারই প্রাপ্য।
*** সবচেয়ে বাজে খল অভিনেতাঃ- জামাল পাটোয়ারী (নগর মাস্তান)
সিনেমায় খলনায়ক তখনই সার্থক হন যখন তিনি দর্শকদের মনে ভয় ও ঘৃণা ঢুকিয়ে দিতে পারেন। অথচ রকিবুল আলম রকিব পরিচালিত “নগর মাস্তান” সিনেমার খলনায়ক জামাল পাটোয়ারী‘র দুর্দান্ত “অতি-অভিনয়” দেখে আপনার মনে হবে তিনি ভয় দেখানোর জন্য নয়, দর্শকদের বিরক্ত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের সর্বনাশ করেছেন। তাই তাই “সবেচেয়ে বাজে খল অভিনেতা”র পুরষ্কার”টা তারই প্রাপ্য।
*** সবচেয়ে বাজে পার্শ্ব অভিনেতাঃ- রকিবুল আলম রকিব (নগর মাস্তান)
রকিবুল আলম রকিব একজন মধ্যম মানের সফল পরিচালক ও অভিনেতা। তার পরিচালিত ও অভিনীত “নগর মাস্তান” সিনেমাটিতে তার করা চরিত্রটি প্রথম দিকে দর্শকদের মনে জায়গা পেলেও পরবর্তীতে “লেবু বেশি চাপলে তিতা হয়ে যাওয়ার মত” দর্শকদের মনে চরম বিরক্তির ভাব উদ্রেক করেছে। তাই “সবেচেয়ে বাজে পার্শ্ব অভিনেতা”র পুরষ্কার”টা তারই প্রাপ্য।
*** সবচেয়ে বাজে পার্শ্ব অভিনেত্রীঃ- রেহানা জলি (মা বাবা সন্তান)
নিঃসন্দেহে রেহানা জলি বর্তমান সময়ে একজন সফল পার্শ্ব অভিনেত্রী। বিশেষ করে “মা” এর চরিত্রে তার প্রচুর চাহিদা। কিন্তু মুকুল নেত্রবাদী পরিচালিত “মা বাবা সন্তান” সিনেমায় তার করা “নায়কের মা” চরিত্রে অভিনয় দেখে যেকোন নিয়মিত দর্শকই হতাশ হবেন। এই ক্ষেত্রে পরিচালকের বেশ অবহেলা থাকলেও একজন সিনিয়র শিল্পী হিসেবে তার কাজের দায়ভার তাকেই নিতে হবে। তাই “সবেচেয়ে বাজে পার্শ্ব অভিনেত্রী”র পুরষ্কার”টা তারই প্রাপ্য।
[su_box title=”গোল্ডেন বাঁশ এ্যাওয়ার্ডস ২০১৪” box_color=”#0f86de”]দেখে নিন – কারা পেয়েছিলেন গোল্ডেন বাঁশ এ্যাওয়ার্ডস ২০১৪[/su_box]
*** সবচেয়ে বাজে নবাগত অভিনেতাঃ- রাফসান (নগর মাস্তান)
নবাগত অভিনেতাদের মধ্যে সামান্য কিছু জড়তা বা দুর্বলতা থাকবেই, তবে এর একটা সহনসীমা আছে। “নগর মাস্তান” সিনেমায় নবাগত অভিনেতা রাফসানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরীমণির বিপরীতে দেখা গেছে সেটা রাফসানের ভাগ্যের ব্যাপার (এখানে আর্থিক ব্যাপারও আছে)। আর সারা সিনেমায় তার বালকসুলভ “স্বল্পাভিনয়” সহ্য করতে হয়েছে এটা আমাদের দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। তাই “সবেচেয়ে বাজে নবাগত অভিনেতা”র পুরষ্কার”টা তারই প্রাপ্য।
*** সবচেয়ে বাজে নবাগত অভিনেত্রীঃ- মারিয়া মমতা (অশান্ত মেয়ে)
আগে শুধু অভিনয় জানা বা শুধু গ্ল্যামার থাকলেও নায়িকা হওয়া যেত না। দুটোই লাগত। কিন্তু বর্তমানে দুটোর একটি কিংবা কোনটিই না থাকলেও (কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে) নায়িকা হওয়া যাচ্ছে। এমনই একজন নবাগত নায়িকার অভিষেক ঘটেছে এফ জাহাঙ্গীর পরিচালিত “অশান্ত মেয়ে” সিনেমায়। তার সিনেম্যাটিক নাম “মারিয়া মমতা“। সিনেমার নাম ভূমিকার মত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তার “অগুরুত্বপূর্ণ” অভিনয় দেখে আপনি নিজেও “অশান্ত” হয়ে সিনেমা হল ত্যাগ করতে বাধ্য হতেন। তাই “সবেচেয়ে বাজে নবাগত অভিনেত্রী”র পুরষ্কার”টা তারই প্রাপ্য।
*** সবচেয়ে বাজে গানঃ- লাভ মানে কি (ব্ল্যাক মানি-পলাশ ও ডলি সায়ন্তনী)
কিছু কিছু গান আছে যেগুলোর লিরিক্স অশ্লীল না হলেও লোকজনের হাসির খোঁড়াক হওয়ার জন্য যথেষ্ট। বিশেষ করে যারা বাংলা সিনেমার নাম শুনলে নাক সিটকান, তাদের এই গান শুনালে নিশ্চিত আপনার জাত যাবে। তেমনি একটি গান হলো সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত “ব্ল্যাক মানি” সিনেমার “লাভ মানে কি”। গানের লিরিক্স হলো,
“L O V E, লাভ মানে কি, তুমি আর আমি ছাড়া কেউ জানে কি ………… বারোটা বাজিয়ে দিলি ও ডার্লিং, বারোটা বাজিয়ে দিলি”
তাই “সবেচেয়ে বাজে গানে”র পুরষ্কার”টা এই গানের দুই শিল্পী পলাশ ও ডলি সায়ন্তনী’রই প্রাপ্য।
*** সবচেয়ে বাজে নকল সিনেমাঃ- ব্ল্যাকমেইল (অনন্য মামুন)
অনন্য মামুনের ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই জুড়ে রয়েছে নকলের রাজত্ব। তাই বলে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করা “গুন্ডে” নামের একটা বিতর্কিত হিন্দি সিনেমা হুবহু নকল ও নারী সংস্করণ করে “ব্ল্যাক মেইল” নির্মাণ করাটা ছিল অতি নিন্দনীয় একটি কাজ। সিনেমাটিতে তিনি আমাদের সমাজের যে চিত্র বা বার্তা দিতে চেয়েছেন তা সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং হাস্যকর। তাই “সবেচেয়ে বাজে নকল সিনেমা”র পুরষ্কার”টা তার “ব্ল্যাক মেইল” সিনেমারই প্রাপ্য।
*** সবচেয়ে হতাশাজনক সিনেমাঃ- আই লাভ ইউ প্রিয়া (মামুন খান)
“মনের মধ্যে লেখা” সিনেমার চরম ব্যর্থতার পর অনেকেই আশা করেছিলেন মামুন খান পরিচালিত “আই লাভ ইউ প্রিয়া” সাগর–শম্পা জুটির ক্যারিয়ারের পাশাপাশি আমাদের সিনেমা মহলেও একটা ভাল কিছু হবে। কিন্তু “আই লাভ ইউ প্রিয়া” এর দুর্বল গল্প ও মেকিং দর্শকবৃন্দ পূর্বের চেয়েও বেশি হতাশ হয়েছেন।
*** সবচেয়ে বাজে পর্দা জুটিঃ- রাফসান+পরিমণি (নগর মাস্তান)
সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের মাঝে নাকি দর্শকরা নিজেদের খুঁজে নেয়। কিন্তু সেই নায়ক-নায়িকাদের জুটিই যদি অসামঞ্জস্য হয় তাহলে তো সাড়ে সর্বনাশ। রকিবুল আলম রকিব পরিচালিত “নগর মাস্তান” সিনেমাতে স্কুল ড্রেস পড়ে থাকায় পরিমণিকে অল্প বয়স্ক মনে হলেও, তার নায়ক রাফসানকে স্বাভাবিকই তার ছেয়ে অল্প বয়স্ক মনে হয়েছে। অনেক দর্শক মন্তব্য করেছেন সিনেমাটিতে রাফসানকে পরিমণির নায়ক কম, ছোট ভাই বেশি মনে হয়েছে। তাই “সবেচেয়ে বাজে পর্দা জুটির পুরষ্কার”টা রাফসান+পরিমণি জুটিরই প্রাপ্য।
*** নাম-বদনাম এ্যাওয়ার্ড {সবচেয়ে বাজে নামের সিনেমাঃ- (ভালো আমাকে বাসতেই হবে)}
নামে কিছু না আসলে গেলেও একটি সিনেমার নামই সর্বপ্রথম দর্শকদের মনে প্রভাব ফেলে। আমাদের দেশের সিনেমার বেশকিছু কুরুচিপূর্ণ নাম আছে যেগুলো সিনেমাবিমুখদের হাস্যরসের খোঁড়াক জোগায়। ২০১৫ সালে তেমনই একটি সিনেমার নাম হলো “ভালো আমাকে বাসতেই হবে“। তাই সবেচেয়ে বাজে নামের সিনেমা হিসেবে “নাম বদনাম এ্যাওয়ার্ড”টা “ভালো আমাকে বাসতেই হবে” সিনেমাটিরই প্রাপ্য।
*** দাত ভাঙ্গা এ্যাওয়ার্ড {সবচেয়ে বাজে ডায়লগ ডেলিভারিঃ- মারিয়া মমতা (অশান্ত মেয়ে)}
একজন অভিনয় শিল্পীর সবচেয়ে বড় গুণ হলো সংলাপ ডেলিভারি। সেই সংলাপ ডেলিভারির জড়তার কারণে যদি শিল্পীর দাত ভাঙ্গার মত অবস্থা হয়, তাহলে এর চেয়ে লজ্জাজনক পরিস্থিতি আর কিছুই হয় না। ঠিক অবস্থা হয়েছিল এফ জাহাঙ্গীর পরিচালিত “অশান্ত মেয়ে” সিনেমার নায়িকা মারিয়া মমতা‘র। তাই সবেচেয়ে বাজে ডায়লগ ডেলিভারি” ক্যাটাগরিতে “দাত ভাঙ্গা এ্যাওয়ার্ড”টা মারিয়া মমতারই প্রাপ্য।
বাজে গানের ক্ষেত্রে একটু চিন্তা করা উচিত ।