‘চন্দ্রাবতী কথা’য় পটুয়া চরিত্রে তনয়ের অভিজ্ঞতা
বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতীকে নিয়ে এন রাশেদ চৌধুরী নির্মিত ‘চন্দ্রাবতী কথা’ মুক্তি পেয়েছে ১৫ অক্টোবর। সরকারি অনুদানের এই পিরিওডিক্যাল সিনেমা বেশ প্রশংসা পাচ্ছে। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য এবং জীবনযাপনের গল্প, চিত্রায়ণ, সংলাপ, সিনেমাটোগ্রাফি ও মূল চরিত্রগুলোর অভিনয় ওঠে এসেছে সমালোচকদের আলাপে।
ছবির অনেক মুখের মাঝে অশোক নামের এক পটচিত্র শিল্পীর ভূমিকায় ছিলেন তনয় বিশ্বাস। এ তরুণ প্রসঙ্গেই আজকের আলাপ।
প্রায় পাঁচ বছর আগে এই সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তনয়। এমন একটি ব্যাতিক্রমী গল্পে প্রায় ১৪০০ বছর আগের একটি চরিত্র বিশ্বাসযোগ্য ভাবে উপস্থাপন একজন নবীনের জন্য কম চ্যালেঞ্জিং নয়। তবে এই যুদ্ধে তনয় বেশ ভালোভাবেই জয়লাভ করেছেন। ‘চন্দ্রাবতী কথা’ ও অন্যান্য বিষয়ে তার সঙ্গে আলাপচারিতার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো—
অভিনয়ে তনয়ের শুরুটা থিয়েটারে প্রাচ্যনাটের স্কুলিং থেকে। মঞ্চে কাজ করার কারণেই অভিনয়, সংলাপ ডেলিভারি বা এক্সপ্রেশন ও ফিটনেস নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রকম চেষ্টা সবসময়ই ছিল। এর মাঝে বেশকিছু টিভিসি করা হয়। সেই সময়ে তার কিছু কাজে তার উপস্থিতি দেখে প্রযোজনা সংস্থা ম্যানগ্রোভের অফিসে ডাক পান তিনি। সাদা ধুতি পরিধান করে ময়মনসিংহের ভাষায় একটি ছোট স্ক্রিন টেস্ট দিয়ে আসার সময়ই তিনি জানতেন না এটি একটি সিনেমার জন্য লুক টেস্ট। আরো অবাক হন তিন/চার দিন পরে তাকে যখন জানানো হয় এটি সিনেমা তো বটেই তবে গল্পটা সেই ১৪০০ বছর আগের সময়কার এবং অন্য সব শিল্পীদের সাথে তার রিহার্সালে অংশ নিতে হবে।
অফার আসার পরে রাজী হয়ে যান তনয়, তিনি জানতেন আগামী দুই বছর তিনি চুল দাড়ি কাটতে পারবেন না। গল্পের কারণে হাওড় অঞ্চল ও বিভিন্ন ঋতু পর্দায় যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য অনেক সময় ধরেই কাজটা করতে হবে। তবুও সবকিছু পাশে সরিয়ে অন্য সব অফার ফিরিয়ে এই কাজটি করতে রাজি হয়ে যান। এখন সিনেমা মুক্তির পর পাওয়া প্রশংসা তনয়ের কাছে অনেক বড় একটি প্রাপ্তি।
শ্যুটিংয়ের সময়ে পাতলা ধুতি পরে তীব্র শীতের কবলে যেমন পড়েছেন তেমনি গল্প এবং চিত্রনাট্যের চাহিদা অনুযায়ী পায়ের ওপর দিয়ে সাপ চলে যাবার ঘটনাও ঘটেছে। ইউনিটের অন্য সবার মতো তনয়কেও ব্যতিক্রম অভিনয় ধারা, ময়মনসিংহের ভাষা আয়ত্ত্ব নিয়ে কাজ করে যেতে হয়েছে রিহার্সালে। একজন পটুয়া যখন ছবি আঁকেন তখন সেটার সাথে মিল রেখে সেই ছবির গল্পটা গানের মাধ্যমেও তুলে ধরেন। এ জন্য তনয়কে পটুয়া চিত্রশিল্পীর জীবন যাপন এবং চিত্রশিল্পী হিসেবে ট্রেনিং নিতে হয়েছে।
‘চন্দ্রাবতী কথা’য় অশোক চরিত্র প্রসঙ্গে তিনি আগে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পরিচালক এন রাশেদ চৌধুরী সহ ইউনিটের প্রতিটা শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রতি। এত পুরোনো সময়ের একটি গল্পকে দর্শকেরা গ্রহণ করেছেন এটাও একটা প্রাপ্তি বলে অভিহিত করেছেন তিনি। সামনের দিনেও ভালো এবং ব্যতিক্রমী কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তনয়।
মজার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করে তনয় জানান, সিনেমায় শুটিংয়ের সময় তার ওজন ছিল ৪৫-৫০ কেজির ভেতর। আর এখন ওজন হচ্ছে ৭০ এর আশপাশে, তাই অনেকেই সামনাসামনি দেখেও চিনতে পারে না প্রথমে।
থিয়েটার স্কুলে কোর্স করার পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মাছরাঙা টেলিভিশনের একটা মেগা সিরিয়ালের মাধ্যমে প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। পরবর্তীতে মোবাইল অপারেটর সংস্থা রবি এবং বাংলালিংকে কাজ করেছেন। এ ছাড়া কোকাকোলা, ওয়ালটন, উপায়সহ বেশকিছু ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করা হয়েছে তনয়ের।
বাংলা, হিন্দি, দক্ষিণ ভারতীয়, হলিউড, কোরিয়ান, চাইনিজ, স্প্যানিশসহ সব ভাষার সিনেমা দেখেন তনয়। অনেকের মধ্যেও জনি ডেপ, নাসিরউদ্দিন শাহ ও বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা প্রয়াত হুমায়ুন ফরিদী তার কাছে আইডল। প্রিয় সিনেমা প্রসঙ্গে জানান- আসলে সেভাবে তো বলাটা টাফ কারন এতো এতো সিনেমা আছে পছন্দের তালিকায় যে এর মাঝে অল্প কয়টার নাম নেয়াটাই যুদ্ধের চেয়ে কম না। তবে দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন, গুপি গাইন বাঘা বাইন, মাটির ময়না, প্যারাসাইট ও অ্যাভেঞ্জার্স।
তনয় দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন- আমি আসলে শিখতে চাই। আমি সারাজীবন অভিনয় নিয়েই থাকতে চাই। সবসময়ই তাই এই শেখার ব্যাপারটা আমার মাঝে কাজ করে। কারণ অভিনয়, সংলাপ ডেলিভারি, লুক এসব নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করলে তো শেখা যায় না পুরোপুরি। আমি যে কাজেই জড়িত হই না কেন আমি আমার জায়গা থেকে ১০০% দেওয়ার চেষ্টা করবো।
তিনি জানান, সামনে বেশকিছু ভিন্নধর্মী কাজে দেখা যাবে । অনেকগুলো প্রজেক্ট নিয়ে কথাবার্তা প্রায় ফাইনাল হলেও অফিসিয়াল কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এখনই সেসব সম্পর্কে জানাতে চাচ্ছেন না তিনি।