Select Page

চরকির সঙ্গে ভারতে কী ঘটেছে?

চরকির সঙ্গে ভারতে কী ঘটেছে?

বেশ ঘটা করে গত বছরের অক্টোবরে কলকাতায় যাত্রা করে দেশের সবচেয়ে বড় ওটিটি প্লাটফর্ম চরকি। ওই সময় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যৌথভাবে কাজের ঘোষণাও দেয়া হয়। স্থানীয় হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চরকির প্রধান নির্বাহী রেদওয়ান রনি বলেন, ‘চরকি যাত্রার শুরুতেই বাংলাদেশের ট্যালেন্টদের নিয়ে কাজ করে আসছে। আমাদের ইচ্ছে সারা পৃথিবীর বাঙালিদের সঙ্গে বাংলা কনটেন্ট দিয়ে কানেক্ট করা। সে কারণেই এ পর্যায়ে এসে কলকাতার গুণী পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পীদের সঙ্গে চরকি যেন কাজ করতে পারে সে জায়গা থেকে চরকির এ যাত্রা করা। এটি এখন দুই বাংলার ট্যালেন্ট নিয়ে কাজ করবে।’

ভারতে চরকির আনুষ্ঠানিক যাত্রাকালে রেদওয়ান রনি ও চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে সেখানকার দুই নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলি ও অরিন্দম শীল

ওই অনুষ্ঠানে কথা বলেন ঢাকার নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও কলকাতার সৃজিত মুখার্জি। আলোচনায় আরো ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী, তমা মির্জা, স্বস্তিকা মুখার্জি, ঋত্বিক চক্রবর্তী ও সৌরভ দাস।

এসময় দর্শক সারিতে ছিলেন কলকাতার নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলী, অরিন্দম শীল, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তা, সোহিনী সরকার, বাংলাদেশের নির্মাতা রায়হান রাফী, এসভিএফ ফিল্মসের কর্ণধার শ্রীকান্ত মেহতা, প্রযোজক, সাংবাদিক, সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট রিভিউয়ারসহ অনেকে।

ওই অনুষ্ঠানের কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মাথায় চরকির সেই স্বপ্নে ভঙ্গ ঘটল। কারণ বাংলাদেশের সরকার, মিডিয়া ও বিভিন্ন মাধ্যম ভারতকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসলেও ঢাকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তা উল্টো। চরকির হঠাৎ ভারতবিলাস থমকে গেলেও তা নিয়ে ততটা আলোচনা দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি ভারতে ‘তুফান’ মুক্তি উপলক্ষে আনন্দবাজার পত্রিকাকে পরিচালক রায়হান রাফীর এক বক্তব্যে বিষয়টি নতুন মাত্রা পেল। অন্তত চরকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করলেন।

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’ হঠাৎ করেই এ পার বাংলায় কাজ বন্ধ করে দিল। কী সমস্যা হয়েছিল?— এমন প্রশ্নে রায়হান রাফী বলেন, “চরকি’র কোনো সমস্যা নেই। আপনাদের ইন্ডাস্ট্রির নিয়ম— বিদেশি ছবির শুটিং হলে দুই থেকে তিন গুণ পারিশ্রমিক দিতে হবে। তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের প্রজেক্টকেও ‘আন্তর্জাতিক’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তা হলে আর আমরা দুই বাংলা এক হব কী ভাবে! বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি তো হলিউড বা বলিউড নয়! বেশি টাকা দিয়ে কলকাতায় শুটিং করা আমাদের মতো ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে কলকাতার ইন্ডাস্ট্রির কর্তাব্যক্তিদের বিষয়টা একটু ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

‘আমরা দুই বাংলা এক হব কী ভাবে!’ এমন মন্তব্যে কারো আপত্তি থাকলেও ঢাকার শিল্প সংশ্লিষ্টরা প্রায়শ এভাবে দেখেন যৌথ উদ্যোগগুলো। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কোনো নির্মাণকে ভারতে গ্রহণ না করার নজির ‘তুফান’ আবার দেখিয়ে দিল।

বাংলাদেশের ‘হাওয়া’ বা ‘সুড়ঙ্গ’-এর মতো ছবি এ পার বাংলার দর্শকের পছন্দ হলেও ভারতে বক্স অফিসে ছবিগুলির ব্যবসা তো আশানুরূপ নয়— এমন প্রশ্নে রায়হান রাফী হাল ছাড়তে রাজি নন। তিনি বলেন, “তুফান’ বড় বাজেটের ছবি। বাংলাদেশে ১০-১৫ দিনের মধ্যে সেই টাকা আমরা ফিরে পেয়েছি। অসাধারণ ঘটনা। তার মানে, বাণিজ্যিক ছবির চাহিদা এখনো রয়েছে। আবার দেখুন, বলিউডের অনেক ছবি কিন্তু বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারছে না। এ পারে ‘হাওয়া’র পর ‘সুড়ঙ্গ’-এর ক্ষেত্রে একটু ভালো ব্যবসা করেছি। ‘তুফান’-এ সেটা আরও একটু ভালো হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আগামী দিনে বাংলাদেশের ছবি পশ্চিমবঙ্গে আরও বেশি সংখ্যক দর্শককে আকর্ষণ করবে। এক দিনে তো নজির তৈরি হয় না! ছোট ছোট পদক্ষেপে একদিন সাফল্য আসবেই।”

উল্লেখ যে, গত বছরের ডিসেম্বর ‘তুফান’-এর ঘোষণাকালে জানানো হয়, দুই দেশের তিন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে নির্মিত হচ্ছে শাকিব খান অভিনীত সিনেমাটি। ঢাকার আলফা আই স্টুডিও ও চরকির সঙ্গে মিলে ‘তুফান’ নির্মাণ করছে ভারতের এসভিএফ। কিন্তু মুক্তির সময়ে শুধু এসেছে আলফা আইয়ের নাম। অন্য দুটিকে যথাক্রমে স্ট্রিমিং পার্টনার ও ভারতে পরিবেশক হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এতে ‘জালিয়াতি’ বলে আপত্তিও তুলেছেন কোনো কোনো পক্ষ। সম্প্রতি বেশ ঢাকডোল পিঠিয়ে সেখানে রিলিজ হলেও যথারীতি ‘বাংলাদেশি সিনেমা’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে সেখানকার দর্শকরা। মূলত বিদেশের বাজারে বাংলাদেশিরাই বাংলাদেশি সিনেমা দেখে তা আবারো প্রমাণ হলো।

ভারতে চরকির এ জটিলতা অবশ্য কয়েক মাস পুরনো, যা সেখানকার স্থানীয় পত্রিকা আজকালের এ প্রতিবেদনেও উঠে আসে।

গত ৭ এপ্রিল ‘চারগুণ অর্থ চাওয়ায় ভারতে কাজ স্থগিত চরকির! কী বলছেন স্বরূপ বিশ্বাস?’ প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত রয়েছে।

হুবহু পুরো প্রতিবেদনটি এমন— “ভারতে চরকি ওয়েব প্ল্যাটফর্মের সিরিজ যথেষ্ট জনপ্রিয়। সেই জায়গা থেকেই গত বছর সংস্থার কর্ণধার রেদওয়ান রনি ভারতে এসে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছিলেন, এদেশে তাঁরা কাজ করবেন। আগামী ৩ বছরে ৩০টি সিরিজ উপহার দেবেন। গত বছরের শেষ থেকেই কানাঘুষো, এদেশে কাজের জন্য ফেডারেশন চারগুণ অর্থ দাবি করেছে। যার ফলে, হাত গুটিয়ে বসে প্রযোজনা সংস্থা। আজকাল ডট ইন যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে। সংস্থার কেউই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। কারণ, বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। সবিস্তার জানতে আজকাল ডট ইন যোগাযোগ করেছিল ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গেও। তাঁর সাফ জবাব, যা ন্যায্য সেটাই চাওয়া হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই এপার বাংলায় চর্চা শুরু। এর আগে ডিজিপ্লেক্সও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নাকি একই কারণে। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের যে কোনও সিরিজ, নাটক বা ছবি বানানোর খরচ অনেক। সেই খরচের পর ভারতে আরও চারগুণ খরচ করা শুধু তাদের পক্ষে কেন, অন্য কোনও প্রযোজনা সংস্থার পক্ষেও করা সম্ভব নয়। ফলে, নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে চরকি। তাই গত ডিসেম্বরে যে কাজ শুরু হওয়া কথা সেই কাজ আজও বিশ বাঁও জলে। তবে তারা নাকি ফেডারেশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে। যাতে ইতিবাচক কোনও রাস্তা বেরিয়ে আসে।

এদিকে স্বরূপের দাবি, ফেডারেশন কোনও অন্যায্য দাবি চরকির কাছে করেনি। এখানে হিন্দি ভাষার শুটিংয়ের অর্থ দ্বিগুণ। আন্তর্জাতিক মানের কাজের অর্থ চারগুণ। বাংলাদেশ আর ভারতের ভাষা এক। কিন্তু দেশ এক নয়। এবং ওপার বাংলা বিদেশের তকমা পেয়েছে। ফলে, সঠিক অর্থ তাঁদের বিরুদ্ধে ধার্য করা হয়েছে। চরকির পক্ষ থেকে আলোচনার অনুরোধ জানানো হলে ফেডারেশন কি কথা বলবে? স্বরূপের কথায়, ‘‘অবশ্যই আমরা আলোচনায় বসব। এতে অবশ্যই কোনও না কোনও রাস্তা বেরিয়ে আসবে। তবে, এখনও পর্যন্ত ওঁরা কোনও রকম আলোচনায় বসার কথা জানাননি।’’

যতদূর জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে এরই মধ্যে ‘লহু’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেছে চরকি। এতে অভিনয় করেন ঢাকার আরিফিন শুভ ও কলকাতার সোহিনী সরকার। পরিচালনা করেছেন অরিন্দম শীল। এছাড়া সম্প্রতি একটি সিরিজে অভিনয়ের জন্য ঢাকায় আসেন সেখানকার অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। তবে এ প্রডাকশনটি কোন প্রক্রিয়ায় নির্মিত তা স্পষ্ট নয়।


মন্তব্য করুন