চরকি চলে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের বছরে ক্ষতি ৩০ কোটি রুপি!
বাংলাদেশকে ‘বিদেশ’ গণ্য করে চরকির কনটেন্টের জন্য চারগুণ পারিশ্রমিক চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের টেকনিশিয়ানরা। এ কারণে স্থগিত চরকির কলকাতাকেন্দ্রিক সব কাজ। তাতে নাকি ভারতীয় রাজ্যটি হারিয়েছে ৩০ কোটি রুপির কাজ। শুরু তা-ই নয়, টেকনিশিয়ানদের একগুয়েমির জন্য সেখানে কলকাতাসহ ভারতের অন্য রাজ্য থেকে কাজও নাকি কমে যাচ্ছে। যার ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি রুপি বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
‘লহু’ ওয়েব সিরিজের দুই অভিনেতা সোহিনী সরকার ও আরিফিন শুভ
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেডারেশনের মতে, এক একটা শুটিংয়ে গড়ে ১২০ জন টেকশিয়ান নিতে হবে। অর্থাৎ, মানুষ বেশি, ছবির বাজেট বড়। ছবির বাজেট ছোট হলে চলবে না। কিন্তু এই বাজেট দিতে রাজি হন না কোনও প্রযোজক। পরিচালকদের কাছে তাঁদের দু’টি প্রশ্ন, এক ছবির বিষয়, দুই ছবির বাজেট। সেই পরিচালক যদি কম বাজেটে ছবি না বানাতে পারেন, কাজটি অন্য পরিচালকের কাছে চলে যায়। যে ভাবে ফেডারেশনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশের ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’ কলকাতা থেকে চলে গেল। ফেডারেশনের দাবি, বাংলাদেশ হল ‘বিদেশ’। তাই এখানকার টেকনিশিয়ানেরা কাজ করার জন্য চার গুণ বেশি অর্থ নেবেন। স্বাভাবিক ভাবেই ‘চরকি’ সেই টাকা দেবে না, ফলে তারা বাইরে চলে গেল।
ধরা যাক, একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বছরে ১২টি ছবি ও ১২টি ওয়েব সিরিজ় নিয়ে আসে। ওয়েব সিরিজ়ের খরচ ধরা যাক গড়ে ১.৫ কোটি। তা হলে ১২টি ওয়েব সিরিজ়ের খরচ ১৮ কোটি। গড়ে একটি ওটিটি ছবির খরচ যদি ১ কোটি হয়, তা হলে ১২টি ছবির হিসেবে ১২ কোটি। অতএব, ‘চরকি’ চলে যাওয়ায় মোট ৩০ কোটির আর্থিক ক্ষতি হল পশ্চিমবঙ্গে!
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘চরকি’ কলকাতায় শুটিং করতে পারলে আরও অনেক ওটিটির শুটিং হত এখানে। যদি কম করে তিনটি ওটিটির শুটিং হত, তা হলে অঙ্ক দাঁড়াত মোটামুটি দেড়শো কোটি!
আরো বলা হয়, কলকাতায় কোনও হিন্দি ছবি শুট করা হলে চোখ বন্ধ করে ৬.৫ কোটি বাজেট থাকে টেকশিয়ানদের জন্য। তামিল, তেলুগু ছবির ক্ষেত্রেই একই হিসেব। যদি ৫টি হিন্দি ছবি আর ৫টি দক্ষিণী ছবি কলকাতায় হয় তা হলে অঙ্ক দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৭০ কোটি। মাঝেমধ্যে তা ১০০ কোটিও ছুঁয়ে ফেলে। হিন্দি ওটিটির শুটিং সব বাইরে চলে গিয়েছে। হিন্দি ওটিটি থেকে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারত। শুধুমাত্র ফেডারেশনের কঠোর নিয়মাবলির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমার অবস্থা উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলা ছবির ক্ষেত্রে প্রেক্ষাগৃহ থেকে সাধারণত কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষ টাকা আসে। স্যাটেলাইট ও ডিজিটাল রাইটস কেনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ছবি চললে গড়ে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা উপার্জনের জায়গা থাকে। এই টাকার মধ্যে বাংলার পরিচালকদের ছবি বানাতে হয়। প্রচারের খরচ এর মধ্যে থাকে না। প্রযোজকও আর্থিক ক্ষতির কথা মাথায় রেখেই ছবি করেন। ফলে কম বাজেটে, কম সময়ে, কম লোক নিয়ে শুটিং করাটাই সুবিধাজনক।
কিন্তু টেকশিয়ানদের দাবি, তাঁদের কাজ দিতে হবে। শুধু কাজ দেওয়া নয়। অনেক ক্ষেত্রে ধারাবাহিকে খ্যাতনামী অভিনেতাদের তুলনায় তাঁরা বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। কম পারিশ্রমিকে খ্যাতনামী অভিনেতারা কাজ করতে চাইছেন না। ফলে ধারাবাহিকের মান পড়ছে। তাঁদের জায়গায় তাঁরা হয়তো ঠিক। বৃহৎ সংখ্যক সদস্য তাঁদের। এটা খানিকটা ‘ক্যাচ-২২ সিচ্যুয়েশন’-এর মতো। কাজ না এলে লোকে পাবে না। যত বেশি কাজ আসবে, তত বেশি লোকে কাজ পাবে। ‘সিনেমা ফ্রেন্ডলি রাজ্য’— পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই তকমা সরে গিয়েছে।
আগে বছরে ১৪০টি বাংলা ছবি হত। এই বছরে তা ৬৫ থেকে ৭০। প্রতিটি ছবি যদি ১.৫ কোটির হয়, তা হলে প্রায় মোট প্রায় একশো কোটি। যদি বিজ্ঞাপনী ফিল্মের কথা বলা হয়, কলকাতার বিজ্ঞাপনী ফিল্মের বাজেট থাকে ২৫ লক্ষ, মুম্বইয়ের ক্ষেত্রে তা ৭০ লক্ষ। আগে পুজোর সময় অধিকাংশ বিজ্ঞাপনী ফিল্মের শুটিং হত কলকাতায়। ঠিক যে রকম আইপিএলের মরসুমে শুটিং হয় মুম্বইয়ে। সে ক্ষেত্রে হিসেব করলে আয় হতে পারত একশো কোটি। ফেডারেশনের পরিকাঠামোর জন্য সেই পথও বন্ধ!
উল্লেখ্য, কলকাতায় চরকির অসমাপ্ত সিরিজ ‘লহু’র শুটিংয়ের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন পরিচালক রাহুল ব্যানার্জি। এ নিয়ে হট্টগোল করে টেকনিশিয়ানরা রাহুলকে বয়কট করে। অন্যদিকে পরিচালক ও শিল্পী তার পক্ষ নিলে কয়েকদিন স্থগিত হয় কলকাতার সব কাজ। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হস্তপেক্ষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।