চলচ্চিত্রের সেন্সর সনদ নিয়ে পরিচালক সমিতির ‘আজব’ দাবি
চলচ্চিত্রের সেন্সর সনদ নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। তার মাঝে পরিচালক-প্রযোজকদের গলায় আরেকটি ‘ফাঁস’ লাগাতে চায় খোদ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে এই ‘বেসরকারি সংস্থা’র কর্তাব্যক্তিরা মত বিনিময়কালে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন, তার মধ্যে একটি সেন্সর সনদ বিষয়ক।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে সমিতির প্রতিনিধিত্ব চান তারা। পাশাপাশি যেকোনো চলচ্চিত্র সেন্সরের জন্য পরিচালক সমিতির সনদপত্র বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেন।
পরিচালক সমিতির নবনির্বাচিত পরিষদ মন্ত্রীর সঙ্গে মত বিনিময়কালে লিখিত ৫ প্রস্তাব সংবলিতপত্র পেশ করে।
সেখানে পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান সংগঠনের পক্ষে সূচনা বক্তব্য দেন।
সমিতি নেতৃবৃন্দ চলচ্চিত্র বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও সমিতির প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন, সেন্সর বোর্ডে সমিতির প্রতিনিধিত্ব, যেকোনো চলচ্চিত্র সেন্সরের জন্য পরিচালক সমিতির সনদপত্র বাধ্যতামূলক করা, চলচ্চিত্রের বিভিন্ন কমিটিতে সমিতির প্রতিনিধিত্ব এবং সব টেলিভিশনে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সময় পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র পরিচালকের নামসহ দেখানোর পাঁচটি প্রস্তাব সংবলিতপত্র মন্ত্রীকে হস্তান্তর করেন।
এ সময় ড. হাছান মাহমুদ চলচ্চিত্রের নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবনচিত্র যেমন পরিস্ফুটন করা যায়, একইসঙ্গে মানুষের মনন তৈরি করার ক্ষেত্রেও চলচ্চিত্র বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। এ দেশের চলচ্চিত্রকার ও শিল্পী-কুশলীরা অনেক মেধাবী, বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার তারা পেয়েছেন এবং তাদের হাত দিয়ে তৈরি অনেক ছবি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পে শুধু স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনাই নয়, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যেন বিশ্ব অঙ্গনেও জায়গা করে নিতে পারে।’
ইতোমধ্যে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, বন্ধ সিনেমা হল চালু করতে কিংবা চালু থাকলেও তার আধুনিকায়নে এবং নতুন সিনেমা হল স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছেন। এই তহবিল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে শতকরা ৫ টাকা হার সুদে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে শতকরা ৪ দশমিক ৫ টাকা হার সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ চালু করা একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহযোগিতায়ই আমাদের এই প্রচেষ্টা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এটি কাজ হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি জেলায় নির্মীয়মাণ তথ্য ভবনের সঙ্গে একটি করে সিনেমা হল থাকবে, যা ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে পাস হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদানের বছরপ্রতি বরাদ্দ ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকায় উন্নীত করা, আগের ১০টি থেকে বাড়িয়ে গত বছর ১৬টি সিনেমাকে অনুদান দেওয়া, অনুদানের ছবি আগে হলে মুক্তি না পাওয়া থেকে এখন কমপক্ষে ২০টি হলে মুক্তি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
তিনি আরও জানান, এফডিসির নতুন ভবন নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধনে দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটির প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রামেও এফডিসির একটি আউটলেট করার জন্য বিটিভি থেকে এক একর জায়গা এফডিসিকে দেওয়া হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী এ সময় চলচ্চিত্র নির্মাণে এফডিসি নির্ধারিত ব্যয় কমিয়ে আনা এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এফডিসিকে থোক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সহ-সভাপতি ছটকু আহমেদ, মহাসচিব শাহীন সুমন, উপ-মহাসচিব কবিরুল ইসলাম রানা, আন্তর্জাতিক ও তথ্যপ্রযুক্তি সচিব নোমান রবিন, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সচিব শাহীন কবির টুটুল, নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন রাজু, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ মণি সভায় অংশ নেন।
/সূত্র: এক্সপ্রেস বাংলাদেশ