চলচ্চিত্র খাতে ৭০০ কোটি টাকা, ‘অস্পষ্ট’ তথ্য নিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা
চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট নেতাদের উল্লেখ করে শনিবার একাধিক সংবাদমাধ্যম জানায়, সিনেমা হল বাঁচাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে এর প্রমাণ হিসেবে কারো সরাসরি মন্তব্য হাজির করতে পারেননি তারা। সুদের হার নিয়েও রয়েছে গড়মিল। এমনকি তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো তহবিল নিয়ে মন্তব্য করা হয়নি। তাহলে?
বাংলা ট্রিবিউন বলছে— ৭০০ কোটি টাকার যে বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে সরকার, সেটি সরাসরি সরকারি কোষাগার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হবে। যা খুবই স্বল্প ঋণে ও দীর্ঘ মেয়াদি কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবেন হল মালিকরা।
‘৭০০ কোটির তহবিল’ নিয়ে নিশ্চিত না করলেও বিষয়টি নিয়ে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খসরু বলেন, ‘এটি কোনও ব্যাংকের টাকা নয়। সরাসরি সরকার এই তহবিল গঠন করেছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাংকে রাখা হবে। আগ্রহীরা এখান থেকে ঋণ নিতে পারবেন। যতদূর শুনেছি ১-২ শতাংশ সুদে এটি নেওয়া যাবে। শোধ করতে হবে ২০-২৫ বছর মেয়াদে। সবকিছু ঠিক থাকলে বরাদ্দের টাকাটা দ্রুত ব্যাংকে পৌঁছাবে।’
আবার সুদের বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে হল মালিক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশিদ বলছেন, ‘করোনার কারণে অনেক হল মালিক স্বচ্ছলতা হারিয়েছেন, এরকম অনেকেই আমাদের বলছিলেন যে, ঋণ না দিয়ে সরকার যদি এই বরাদ্দকৃত অর্থ অনুদান হিসেবে দিতেন, তাহলে বেশি উপকৃত হতেন। ৪ শতাংশ সুদ দেয়া অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।’
আরও বলা হচ্ছে— চলচ্চিত্র নেতাদের অনেকেই জানান, এর বেশিরভাগ টাকা খরচ করা হবে প্রেক্ষাগৃহ পুনরায় চালু ও সংস্কারের কাজে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের ১৯টি সংগঠনের পক্ষ থেকেও আলাদা আবেদনপত্রে চলচ্চিত্র নির্মাণে বরাদ্দ রাখার আর্জি করা হয়েছে।
সারাবাংলা ডটনেটকে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘আমাদের দাবি থাকবে এখান থেকে যেনো ১০০ কোটি টাকা চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। যাতে করে ভালো প্রযোজকরা ছবি বানাতে পারেন এবং হলগুলোতে যেনো ভালো বাংলা ছবির অভাব না হয়।’
নিশ্চিত ঘোষণার আগে আশঙ্কারও অভাব নেই। যেমন; অনেকেই বলছেন, নামমাত্র সুদের এই ঋণ পেতে দেশের অনেক অসাধু ব্যক্তি চাল-ডালের গোডাউনকে সিনেমা হল বানিয়েও প্রণোদনা নিতে পারে! যার ফলে, সিনেমা হল বা সিনেমার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের ভাষ্য এমন, ‘এমন আশঙ্কা তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে আমাদের চোখ-কান খোলা রাখছি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে আমাদের জন্য যে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছেন সেটি তো মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো। ফলে এটার সঠিক মূল্যায়ন আমাদের করতে হবে। চলচ্চিত্রটাকে বাঁচাতে হলে এই সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে আমাদের।’
এ দিকে পুরো বিষয়টি নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে বলা হয়, চলচ্চিত্র খাতের প্রণোদনা বা তহবিল নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ৭০০ কোটি টাকার বিষয়টি কোথা থেকে এলো তারা জানেন না। এমনকি সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য দেওয়া কোনো কোনো নেতা বলছেন- তারা সংবাদমাধ্যম থেকে খবরটি জেনেছেন। আবার সংবাদমাধ্যম বলছে চলচ্চিত্র নেতারাই এ কথা বলেছেন।
তবে একটি সূত্র জানায়, সংবাদমাধ্যমগুলো ‘টেকনিক্যাল’ কোনো কারণে সূত্র হাজির করতে না পারলেও চলচ্চিত্রে বড় অঙ্কের তহবিল দেওয়ার ইচ্ছা সরকারের রয়েছে। যা ১ হাজার কোটিও হতে পারে! এ ছাড়া সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বসবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। তহবিলের গুঞ্জনের প্রেক্ষিতে ‘সেখানে ঋণ বিষয়ে চূড়ান্ত দিক নির্দেশনা পাবেন বলে আশা করছেন’ অনেকে। এছাড়া করোনা পরবর্তী সময়ে প্রেক্ষাগৃহ চালুর বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘোষণা আসতে যাচ্ছে।