৮২ মিনিটে সামাজিক-রাজনৈতিক ও দার্শনিক বয়ান ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’
(‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ চলচ্চিত্রটি চরকির মিনিস্ট্রি অব লাভ অরিজিনাল সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র। ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর ২৮তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার হয়। চলচ্চিত্রটি নিয়ে এশিয়ান মুভি পালস সাইটে সমালোচনা লিখেছেন পানোস কোৎজাথানাসিস। বাংলা মুভি ডেটাবেজের পাঠকদের জন্য রিভিউটি বাংলায় উপস্থাপন করা হলো।)
জাপানি চলচ্চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী “সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি” থেকে ধার করা শিরোনামের চলচ্চিত্রটি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অভিনেতা হিসেবে প্রথম প্রয়াস। পাশাপাশি এটি যৌথভাবে রচনা করেছেন তিনি এবং তার স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, যিনি তার সহ-শিল্পী হিসেবেও অভিনয় করেছেন। এটি তাদের নিজেদের জীবন থেকেই অনুপ্রাণিত।
ফারহান একজন পরিচালক এবং তিথি একজন অভিনেত্রী, তারা ঢাকায় বসবাসকারী বিবাহিত সেলিব্রিটি যুগল। তাদের সফলতা ও জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তারা শো বিজনেসের উল্টো পিঠের সম্মুখীন হয়, কারণ বাংলাদেশের মুসলিম পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কোন যুগলের সন্তান না নেওয়াকে পাপ বলে গণ্য করা হয়। করোনা মহামারীর সময় তারা অবশেষে সময় বের করে এবং তিথি অন্তঃসত্ত্বা হয়। তার গর্ভকালীন শেষ ভাগের এক রাতে পাশের বাড়ি থেকে আসা বিকট শব্দে তিথি অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। ফারহান সেই বাড়িতে চলমান পার্টিতে অনুপ্রবেশ করে।
মাত্র ৮২ মিনিট দৈর্ঘ্যের হলেও ফারুকী সামাজিক-রাজনৈতিক এবং এমনকি দার্শনিক বয়ান সংবলিত একটি চলচ্চিত্র উপস্থাপন করতে পেরেছেন। স্থানীয় সমাজে সেলিব্রিটি ধারণাটি নানাভাবে কাজ করে, যেমন – দুজনেই বিভিন্ন মহল থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন, আবার তাদেরকেই ভক্ত ও বিদ্বেষীদের সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। দেশে কীভাবে দুর্নীতি সংগঠিত হয় এবং কীভাবে ধনীরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে, সে বিষয়গুলোর উপরও আলোকপাত করা হয়েছে। যে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে তা একইভাবে সমাধানও করা হয়েছে, যা এই বয়ানকে আরও প্রগাঢ় করে তোলে।
অধিকন্তু ফারুকী ও তিশার লেখনী দেখিয়েছে কীভাবে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা জনজীবন ধ্বংস করে দিতে পারে। কীভাবে মাঝে মাঝে একজনের বিশ্বাস এবং পরিবারের স্বার্থে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে বলিদান দেওয়াই বেঁচে থাকার একমাত্র পন্থা হয়ে দাঁড়ায়। সমৃদ্ধ বর্ণনার মাধ্যমে এই ধারাভাষ্যের উপসংহার টানা হয়।
পারিবারিক/সামাজিক নাটকীয় গল্প থেকে থ্রিলারে এবং পুনরায় নাটকীয়তায় রূপান্তর অসাধারণ, যা প্রথম থেকে শেষ অবধি আগ্রহ ধরে রাখে। দৃশ্যের গতি বৃদ্ধি ও হ্রাসের মাধ্যমে মোমিন বিশ্বাসের সম্পাদনা এই কাজকে সহজ করে দিয়েছে। সর্বশেষ, চলচ্চিত্রটি অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য বিবর্জিত, যা পরিচালনা ও সম্পাদনার অনন্য বৈশিষ্ট। তাহসিন রহমানের চিত্রগ্রহণও চমৎকার। তিনি রাতের ও উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যে চরমসীমা ধরতে পেরেছেন।
চলচ্চিত্রটি অভিনয়েও সাফল্য লাভ করেছে। যদিও হতাশার মুহূর্তে তিশার চমৎকার অভিনয় প্রত্যাশিত ছিল, ফারুকীর অকপট অভিনয় সুমধুর বিস্ময়। তাছাড়া উত্তেজনাপূর্ণ ও সুখী মুহূর্তে তাদের মধ্যকার রসায়ন ছিল লক্ষণীয়, যা এই চলচ্চিত্রের আরেকটি দারুণ বৈশিষ্ট।
“সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি” উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর কারণে একটি দারুণ চলচ্চিত্র। তাছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাতা তার ব্যক্তিগত ও স্থানীয় বিষয়াদি নিয়েছেন যা সারা বিশ্বের দর্শকের জন্য প্রযোজ্য।
অনুবাদ: মাহবুবুল হক ওয়াকিম