ছুঁয়ে দিলে মন : মন ছোঁয়া শিল্প
মন ছুঁয়ে যেতে কী লাগে… খুব বেশি কিছু লাগে না। আপনার প্রিয়তম বা প্রেয়সীর সামনে একগোছা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে যান তার মন ছুঁয়ে যাবে কেননা আপনি তাকে ভালোবাসেন, সে আপনাকে ভালোবাসে… হয়তো সে আপনাকে ভালোবাসার আবেগে জড়িয়ে বলবে (ভালোবাসি).. মন ছুঁয়ে যেতে ওটুকুই যথেষ্ট।
যে কোনো শিল্পকে মানুষের মন ছুঁয়ে যাবার একটা গভীর কাজ ভেতরে ভেতরে করে যেতে হয়। শিল্পী যেভাবে ছবি আঁকে,ভাস্কর যেভাবে ভাস্কর্য বানায়, কণ্ঠশিল্পী যেভাবে গান গায় এদের সবার মধ্যে একটা গভীর চেতনা ও সাধনা কাজ করে যাতে তারা মানুষের মনকে ছুঁযে যেতে পারে। এমন এক সাধনা সিনেমার শিল্পী পরিচালকেরও থাকে যাতে তাঁর সিনেমা দেখে মানুষ বলে (ছুঁয়ে দিলে মন)… এমনই এক প্রেমের গল্প নিয়ে পরিচালক শিহাব শাহীনের এবছরের আলোচিত নতুন সিনেমা.. (ছুঁয়ে দিলে মন)… সিনেমায় কী আছে যার জন্য আমরা বলতে পারি মন ছুঁয়ে গেছে বা যারা এখনো সিনেমাটি দ্যাখেননি তাদের জন্য কী বলতে পারি যাতে তারাও ভাবতে পারে (ছুঁয়ে যাবে মন)… দুটোরই একটা খসড়া করা যাক এবার….
গল্পের মত জীবন
ট্রেলারে যেমনটি বলা হয়েছিল (একটি মেয়ে আর একটি ছেলে…প্রেমে ডোবে প্রেমে ভাসে…).. গল্প সেখানেই দানা বেঁধেছে..গল্প সবারই থাকে। গল্পটা শুরু হতে পারে ঘরের জানালার সামনে থেকে যেখানে রোজ ঢিল পড়ে কারো সাথে সময়মত দেখা করার জন্য বা গল্পটা শুরু হতে পারে গলির মোড় থেকেও যে গলিতে (হৃদয়পুর) শুরু হয়েছে। সেই গলির মোড় থেকেই আবির (শুভ) ও নীলার (মম) প্রেমের মিষ্টি গল্পটা শুরু হয়েছে। গল্পে রং থাকে রঙিন হবার জন্য আবার গল্পে বেদনা থাকে বেদনায় নীল হবার জন্য। এ সিনেমার গল্পে দুটোই আছে। আবেগী বয়সে বালক-বালিকার প্রেম দানা বাঁধে গীটার বাজিয়ে গান শোনানোতে।বালক বয়সের প্রেম বড়রা মানতে চায় না এটাই সামাজিকতা। তাই সালিশ ডেকে আবির ও নীলাকে যখন আলাদা করা হয় আর নীলা বাবা চাচার ভয়ে মিথ্যে বলে আবিরকে দোষারোপ করে তাতে গল্পটা বেদনার দিকেই যায়। নীলের মাত্রাটা বাড়ে…. সে নীলের ছটা গিয়ে লাগে অন্যভাবে যেখানে বাড়ির গেটে ঢিল পড়ে, রাস্তায় অপমান করা হয় আবিরের বোনকে অতঃপর এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় আবিরের পরিবার। এরে মধ্যে মারা যায় আবিরের মা আর থেকে থেকে আবিরের মুখ ফসকে (হৃদয়পুর) নামটা বেরিয়ে এলে দর্শক বুঝতে পারে আবিরের জীবনে যে গল্পটা আছে সেটা ছোট থেকে বড় হয়েছে… হারায়নি… আসলে প্রেমের গল্প হারায়ও না…যারা একবার হলেও জীবনে প্রেমে পড়েছেন বা প্রথম প্রেমে পড়েছেন তারা এটা একবাক্যে স্বীকার করবেন-ই….
গল্পের মোড়
সব গল্পেই মোড় থাকে।পরিচালক এ গল্পেও মোড় এনেছেন। হোক তা টিপিক্যাল প্রতিশোধ নেয়ার মত গল্পের মোড় কিন্তু দর্শককে বেঁধে রাখার মত শক্তিটা যে তাঁর আছে তা বোঝাও গেল সেখানেই। শুভ পথ হারিয়ে হৃদয়পুর খুঁজে পেলে মমর সাথে তার দেখা হল, পুরনো প্রেম আবার শুরু হল এভাবে (আমরা আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করব)…নতুন শুরুটা কেমন হবে সেটি তখন পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছিল না। বোঝা গেল বিরতির আগেই। শুভ মমকে ছেড়ে গেল স্টেশনে। ছোটবেলার পারিবারিক অপমান আর সালিশে মিথ্যে বলার দায়ে মমকে পুড়তে হল বিচ্ছেদে। বাড়ি ফিরে বাবার মুখোমুখি হতেই হৃদয়পুরের সব ঘটনা শুনে বাবা খালেকুজ্জামান ছেলেকে চড় দিলেন আর বললেন মেয়েটার দোষ ছিল না। মেয়েটার সাথে যে অন্যায় হয়েছে সেটা দুলাভাই মিশা সওদাগরও বললেন। গল্প গেল পাল্টে..এরপর শুভ আবার গেল হৃদয়পুর…হারানো প্রেমকে বাঁচাতে…স্টেশনে ছেড়ে যাবার মধ্যে যে মোড় গল্পে এসেছিল বাণিজ্যিক সিনেমার মধ্যে তা থাকাই উচিত…
রোমান্স ও স্যাড কম্বিনেশন
রোমান্টিক সিনেমায় খালি রোমান্সই থাকবে তা হয় না… স্যাডনেসও থাকবে.. দুটো বিনি সুতার মালা। সিনেমায় রোমান্স ছিল প্রথম থেকেই। পাহাড়ে গিয়ে শিশুশিল্পী পিদিমের গীটার বাজিয়ে গান করা আর অর্পার ইনোসেন্ট লুকের রোমান্টিক এক্সপ্রেশন দর্শককে মুগ্ধ করেছে। বন্ধু যখন জিজ্ঞেস করে পিদিমকে (আরে ওর নামটা জিজ্ঞেস কর না)… দর্শক তখন করতালি দিয়েছে.. বালক বয়সটা বড় আবেগের হলেও ভালোবাসার অনুভূতিগুলো খাঁটিই থাকে। ছোটবেলায় যে বেদনাটা আমরা পাই বড়বেলায় এসে পুরনো ব্যথার মত জেগে ওঠে। পথ ভুলে হৃদয়পুর আসা শুভ বন্ধু আনন্দকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এল সেখানে মমর সাথে দেখা। হাসপাতালের বাইরে শুভর মধ্যে পরিচিত মানুষের লক্ষণ দেখে মমর ঘন ঘন নিঃশ্বাস ওঠানামার পর বলা সংলাপটি (আপনি কি এ শহরে আগে কখনো এসেছেন?).. শুভ ও মমর কথোপকথনটি রোমান্টিক ছিল। তারপর মম পিছু নিয়ে জুতা খোলার ভান করে,রিকশায় উঠে অন্যদিকে তাকানো এভাবে সোজা মমর বাড়ির সামনে এসে ফ্যাক্টরির বাহানা দেয়া এসব ছিল রোমান্টিক… শুভ ততক্ষণ পর্যন্ত জানে মমই ছোটবেলার নীলা। কলেজে মম যাবার পর শুভ পেছন থেকে বলে (আপনি আমার জন্য এসেছেন).. মম মানতে পারে না.. এরপর রিকশায় ওঠামাত্র ভেসে আসে (ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও) গানের সুর যে গানটা ছোটবেলায় লাল পাহাড়ে গীটার বাজানো পিদিম শুনিয়েছিল… মমর রিকশা থেকে নামার ভঙ্গি, কনসার্টে আসা, শুভর অভিব্যক্তি, দ্বিতীয় অন্তরা-তে লাল পাহাড়ে দুহাত বাড়িয়ে থাকা আর মম বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লে দুজনের সংলাপ সবকিছু পিওর রোমান্টিক… কেমিস্ট্রি বলতে যে ব্যাপারটা ঘটে নায়ক-নায়িকার তার সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল শুভ-মমতে…
রোমান্স ও স্যাডনেস কম্বিনেশন আলাদাভাবে থাকার পর একসাথেও এসেছে একই সিকোয়েন্সে.. এটা মোটেও সহজ কাজ নয়… যত্নের কাজ…
**পরেরবার হৃদয়পুর গেলে মমর বাবা আলীরাজের সাথে দেখা শুভর। পরিচয় দেয় কলেজের নতুন টিচার সে। তারপর বাড়িতে নিয়ে গেলে মমর সাথে দেখা এবং মমর দিকে তাকিয়ে টানা বলে যাওয়া শুভর কথাগুলো (ব্রঙ্কাইটিস ও আখ্রাইটিসির কম্বিনেশনটা খুব দরকার).. দুজনের এক্সপ্রেশনে রোমান্স ও স্যাড দুধরনের ব্যাপারই কাজ করেছে।
**(শূন্য থেকে আসে প্রেম)- গানের পরে মাঠে মম দেীড়ে যেতে থাকলে শুভ বলে (ভালোই যদি বাসো তবে দূরে থাকো কেন?)..মম ঘুরে বলে (কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি?).. (আমি জানি… তোমার চোখ বলছে… ঐ চোখের পানি কার জন্য).. মম.. (তুমি ভুল জানো).. শুভ হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে চাইলে মম হাত সরায় আর অপূর্ব সব এক্সপ্রেশন দেয়.. রোমান্স ও স্যাডকে এক করা যায় এভাবেই…
**আলীরাজের শর্তমত মূর্তি সোজা করতে গিয়ে মার খাবার পর ক্লিনিকের বাইরে মমর সাথে শুভর সিকোয়েন্সে মমকে (ভালোবাসি) বললে পেছন ফিরে তাকায় মম… কান্নার মধ্যেও একটা আনন্দ ছিল মমর… চলে গেলে শুভ বলে (নীলা আমাকে অনেক ভালোবাসে).. বন্ধু আনন্দ খালেদ বলে (মুখের ওপর তো না করে দিল) … শুভর সংলাপটি ছিল দুর্দান্ত.. (ঐ না যদি বুঝতি তাহলে জীবনে একটা হলেও প্রেম করতি).. রোমন্টিক স্যাড দুরকম আমেজ ছিল এখানেও…
আইডিয়া ও টেকনিক
আইডিয়া ও টেকনিক হাত ধরাধরি করে চলে। একটা আইডিয়া যে নতুনত্ব আনে তাকে কাজে লাগাতে টেকনিক লাগে। পরিচালক শিহাব শাহীন এ দুয়ের সমন্বয় করেছেন। এখনকার বাণিজ্যিক সিনেমাতেও এ দুটির সমন্বয় ঘটছে বা সমন্বয় ঘটানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন পরিচালকরা যাতে দর্শক খুশি হয়… (ছুঁয়ে দিলে মন) এ দুটো আলাদাভাবে আছে.. দুটোর কম্বিনেশনও আছে ঠিক রোমান্স ও স্যাডের মত করেই..
**শুভর ( sorry) বলার আইডিয়াগুলোতে নতুনত্ব ছিল যা দর্শক পছন্দ করেছে.. গাছের মধ্যে অক্ষর বসিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে (sorry) বলা এ ক্রিয়েটিভ আইডিয়াগুলো প্রশংসনীয়…
*মিশা সওদাগরকে পজেটিভ ক্যারেক্টারে দেখানোটা টেকনিক যাতে করে দর্শক নতুন কিছু পায়। এর আগেও মিশা এ ধরনের ক্যারেক্টার করেছেন কিন্তু বেীয়ের কাছে বিনীত থাকার ক্যারেক্টারে এই প্রথম এবং তা নতুন ছিল..
**মমকে ছেড়ে আসার পর শুভ নিজের ভুল বুঝতে পারলে চলতে পথেও মমর খোঁজ করে.. তাই বাসে উঠলে সে দ্যাখে (নীলা ফ্যাশন) এর বিলবোর্ড… কিংবা (নীলা মেহেদী মার্ট).. সাইনবোর্ড… এগুলো আইডিয়ার কাজ…
**মূর্তি তোলার সময় কালচারাল প্রোগ্রামে গানগুলো ছিল টেকনিক্যাল কাজ।জাগরনের গান,বিদ্রোহের গান আলাদা করে (দুর্গম গিরি কান্তার মরু… কারার ঐ লেীহ কপাট… তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর..) এরকম বাছাই করে মিশা, শুভ ও ছোটদের নিয়ে করা সেটজ পারফরম্যান্সটি ছিল মনোরম… বাণিজ্যিক সিনেমার মধ্যেও যে কালচারাল সেন্স এন দর্শকের মন দখল করা যায় শিহাব শাহীন তা দেখিয়েছেন…
**আইডিয়া-টেকনিক মিলে একাকার হয়ে গেছে আরা একটি সুন্দর সিকোয়েন্সে.. মমর বিয়ের দিন শুভ শেষ দেখা করার পর চলে গেলে জানালার ওপাশ থেকে ভেসে আসা শিশুদের গান.. (আমি তোমাকে আরো কাছে থেকে).. কিছুক্ষণ পরে আবারও ভেসে আসা (আমি তোমাকে আরো কাছে থেকে).. অদ্ভুত রকমের আবেগ তৈরি করে। দর্শকের আবেগ ধরে রাখার কাজে এটা ছিল আইডিয়া এবং সিকোয়েন্সটিকে বাস্তবিক করার জন্য যেভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দেয়া হয়েছিল তাতে করে টেকনিক্যাল কাজটাও হয়েছে দারুণ…
আইডিয়া ও টেকনিকে রয়েছে মন ছোঁয়া্র নিপূণ চেষ্টা…
নির্মাণ, ফান, অভিনয়, সংলাপ
সিনেমার নির্মাণ অসাধারণ… যত্নের ছাপ আছে আগাগোড়া.. শিহাব শাহীন ভালো নির্মাতা আমরা জানি। নাটকগুলো তার প্রমাণ।সিনেমার হিশাব আলাদা জানি তবে সিনেমাতেও তিনি দেখিয়ে দিলেন তাঁর সামর্থ্যর চমৎকারিত্ব… সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক পারফেক্ট। যেখানে যে দৃশ্যের জন্য যে আবহ সঙ্গীত লাগে তাই দিয়েছেন পরিচালক।লোকেশন বাছাই প্রশংসনীয়।ক্যামেরার কাজ খুবই যত্নের। লাল পাহাড় থেকে শুভ-মম নিচে পানিতে পড়ে যাওয়ার পর এক মিনিটের যে আবহটা ছিল তাতে চোখ ধাঁধিয়ে যায়.. পানির মধ্যেই ভেসে ওঠে শুভ-মমর ছেলেবেলা.. লং শট এবং ক্লোজ শটে রোমান্টিক সিকোয়েন্সগুলো ছিল দেখার মত আর পর্দায় হা করে তাকিয়ে থাকার মত… স্যাড সিকোয়েন্সেও ছিল আর্টিস্টদের কাছ থেকে সেরা অভিনয় বের করার চেষ্টা এবং তাই ঘটেছে… লোকেশনে গানের ক্ষেত্রে ছিল মনোরম সব রুচিসম্মত দৃশ্যের সমাহার… রোমান্টিক হবার জন্য প্রকৃতির বিকল্প নেই তাই পরিচালক চলে গেছেন পাহাড়ে, নদীতীরে, গাছঘেরা নিঝুম পথে..
ফান যা করার অর্ধেকেরও বেশি করেছে শুভর বন্ধু আনন্দ খালেদ। স্টেশনে শেষবার মাংকি স্টাইল টাইগার পাঞ্চ করার সময় শুভর কল্পনায় বন্ধুর সবসময় দেখানো মাংকি স্টাইলের ঐ পাঞ্চটা ভেসে আসে আর পাঞ্চটা করার সময় সিনেমাহলের দর্শক শেষবারের মত হাততালি দেয়.. অ্যাকশন, ফান একসাথে পেয়ে যায় তারা.. ইরেশ যাকেরের মমর সাথে সিকোয়েন্সগুলোতে মেয়েদের ভয় পাওয়ার অভ্যাসটা যেভাবে দেখায় সেখানেও ফান ছিল.. মিশা সুষমার কাছে বাধ্যগত স্বামী হয়ে থাকার অভিনয়ে যখেষ্ট বিনোদন দিয়েছে দর্শককে… ইরেশের সহকারী একটা ছেলে যে মেয়েদের গলায় কথা বলে সেটাও আনন্দের ছিল… লাস্ট সিকোয়েন্সে মমকে নিয়ে শুভ ট্রেনেে উঠলে জড়িয়ে ধরে দুজন দুজনকে তখন মিশাকে দেখে থেমে যায় শুভ আর মিশা মুদ্রাদোষে বলে দেয়.. (ধরো ধরো…মানে প্রত্যেকটা জিনিসের একটা ভালো দিক আর খারাপ দিক আছে…) ..দর্শক এ সংলাপেও ভালোই মজা করেছে…
অভিনয়ে মম এককথায় অপূর্ব ছিল.. তাঁর হাসি ও কান্নার অভিনয়ে দর্শক হাসতেও পারে,কাঁদতেও পারে.. এই সক্ষমতা অব্যাহত থাকলে তিনি ভবিষ্যতে উদাহরণ হতে পারেন অন্য নায়িকাদের জন্য… শুভ অন্য যেকোনো্ সিনেমার থেকে পরিপক্ব অভিনয় করেছে.. লুক খুব ভালো ছিল.. রোমান্টিক,স্যাড,সিরিয়াস সবকিছুতে পারফেক্ট ছিল… মিশা সওদাগর আদর্শ শিল্পী তাই পজেটিভ ক্যারেক্টারেও বাজিমাত করেছে… সিনিয়র শিল্পী হিশেবে আলীরাজ বংশগেীরবের দাবি করা বাবার চরিত্রে অসাধারণ.. শুভর বন্ধু পাভেলের চরিত্রে আনন্দ খালেদ মাতিয়েছে… খালেকুজ্জামান শুভর বাবার চরিত্রে চমৎকার ছিলেন.. সুষমা সরকার বরাবরই ভালো অভিনেত্রী.. মডেল হিশেবেও তিনি স্বচ্ছন্দ… এ সিনেমায় শুভর বোন আর মিশার স্ত্রী হিশেবে দুদিকেই সমানতালে অভিনয় করেছেন… শিশুশিল্পী পিদিম ও অর্পার এক্সপ্রেশন দেখে মনে হয় তাদের ভবিষ্যত যথেষ্ট ভালো…
সিনেমায় মনে রাখার মত অসংখ্য ভালো সংলাপ ছিল.. তার মধ্যে..
১. মমর বিয়ের দিন তার বোন কণা নিজের প্রিয়মানুষকে হারানোর বেদনায় বলে..(আমর সারাজীবনের বিনিময়ে একটা দিন যদি তাকে পেতাম..একদিন..একমুহূর্ত..)…
২. মিশা শুভকে বাঁচায় ইরেশের হাত থেকে..বলে.. (একটা ভালো মানুষ যখন খারাপ হয় একশোটা খারাপ মানুষের বাপ হয়)…
৩.লাল পাহাড়ে আলীরাজ মমকে নিতে এলে শুভকে জড়িয়ে মম বলে (বাবা,তুমি আমাদের একসাথে বাঁচতেও দেবে না..একসাথে মরতেও দেবে না!!)… এ সংলাপগুলো মনে রাখা যায় ভালো করেই..
যদি এমন না হত
ভালো শিল্পেও কখনো কখনো আক্ষেপ থাকে হোক তা ছোট তবুও তা আক্ষেপ… মনে হয় ইস যদি এমন না হয়ে আরেকটু ভালো হত বা হতে পারত এরকম সীমাবদ্ধতা থাকেই…এ সিনেমায় তেমন কিছু একটু হলেও আছে…
১. শুভর প্রথম ফাইট সিকোয়েন্সটা জমেনি..শুভকে নিয়ে ফাইটের কথায় শোনা যায় যে ছেলেটা পাইট ভালো পারে না…(কিস্তিমাত) এ একটা পরিবর্তন ছিল বটে কিন্তু এ সিনেমায় প্রখম ফাইট সিকোয়েন্সটা তত জমল না..ফাইট ছিলও অল্প একটু..শুভকে যত্নশীল হতে হবে ফাইটের প্রতি….
২. মমর কড়া মেকাপ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে তবে সেটা ক্লোজ শটের ক্ষেত্রে একটু বেশি প্রভাব ফেলেছে.. গানের সময় বা ক্লোজ শটে শুভর সাথে সিকোয়েন্সগুলোতে কড়া মেকাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল এবং সিনেমাহলেও এ নিয়ে কথা বলেছে অনেক দর্শক… তারা মমর ন্যাচারাল সেীন্দর্যটাকে পর্দায় দেখতে চেয়েছে… ছোটখাটো এমন দুএকটা ব্যাপার তো থাকবেই তবে সিনেমার সার্বিক যত্নের কাছে সেগুলো তুচ্ছও বটে…
মন ছুঁয়ে যেতে এমন অনেক কিছু আপনিও পাবেন যা হয়তো আমি বলতে পারলাম না ভালো করে… সেগুলো খুঁজে পেতে আপনাকে সিনেমাটি দেখতে হবে… আপনিও পেতে পারেন মন ছুঁয়ে যাবার নতুন কোনো ইশারা… আপনি বলতে পারেন সিনেমা দেখা শেষে (ছুঁয়ে দিলে মন)…..
দর্শকের স্বপ্ন ও নির্মাতার দায়
আমাদের বাণিজ্যিক সিনেমায় যে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে তার স্বপ্নটা দর্শকের অনেক বেশি। দর্শক ভালো সিনেমা দেখতে চায়…বিনোদন পেতে চায়। সে স্বপ্নটা শিহাব শাহীনের মত পরিচালকরা নতুন করে দেখাচ্ছেন। আর যে স্বপ্ন দেখায় তার দায় যে কত বড় সে কথা আর না-ই বা বললাম…
শ্লোগান
এমন একটা অপূর্ব সিনেমা দেখার পর বলতেই পারি…
আসুন দেশের সিনেমা দেখি,নিজের সিনেমা এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাবেন আপনিও)