জসিম: বাংলার নায়ক
আমাদের উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় বাপ-দাদাদের বলতে শুনেছি ‘জসিম হামার নায়ক’। ‘হামার’ মানে ‘আমাদের।’ বাপ-দাদারা বুক চিতিয়ে বলত ‘জসিম হামার নায়ক।’ তাদের সময়ের শাসন করা নায়ক জসিম যার চোখের দৃষ্টিতে আর গলার আওয়াজে হলের পর্দা কাঁপত।
জন্ম ও প্রাথমিক তথ্য
১৯৫১ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জের বক্সনগর গ্রামে জন্ম। পুরো নাম আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন। একইসঙ্গে অভিনেতা, অ্যাকশন ডিরেক্টর, প্রযোজক, পরিবেশক। প্রথম ছবি ‘দেবর’ এবং অ্যাকশন ডিরেক্টর ‘রংবাজ’ ছবিতে। নায়ক হিসেবে প্রথম ছবি ‘মোকাবেলা।’ পড়াশোনা বিএ অনার্স। প্রথম স্ত্রী অভিনেত্রী সুচরিতা, দ্বিতীয় স্ত্রী নাসরিন। নাসরিন আশি-নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়িকা এবং বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে। জসিম-নাসরিন দম্পতির তিন ছেলে সামি, রাতুল ও রাহুল সঙ্গীতের সাথে যুক্ত।
উল্লেখযোগ্য ছবি
দেবর, রংবাজ, উৎসর্গ, দোস্ত দুশমন, লাইলী মজনু, মহেশখালির বাঁকে, হুর-এ-আরব, বারুদ, বদলা, কসাই, বাহাদুর, এক মুঠো ভাত, নবাবজাদী, সেলিম জাভেদ, বেদীন, সুন্দরী, জদুলারী, আসামী হাজির, বাঁধনহারা, দোস্তী, ওস্তাদ সাগরেদ, প্রতিহিংসা, মান-সম্মান, চ্যালেণ্জ, নাজমা, গাদ্দার, সবুজ সাথী, সিআইডি, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, অভিযান, আক্রোশ, মোহাম্মদ আলী, সালতানাৎ, অশান্তি, বিচার, সোনার হরিণ, দুই রাজকুমার, দাতা হাতেম তাই, আল হেলাল, দি রেইন, কুয়াশা, প্রতিজ্ঞা, নওজোয়ান, শাহজাদা, বিজয়িনী সোনাভান, বাগদাদের চোর, যুবরাজ, আলী আসমা, মাসুদ রানা, এপার-ওপার, হাসান তারেক, মাই লাভ, কোরবানী, অ্যাকসিডেন্ট, মুজাহিদ, অগ্নিতুফান, অগ্নিপুরুষ, হিম্মতওয়ালী, বিধান, কালাখুন, নাগরাণী, যাদুনগর, হালচাল, রাজমাতা, নিশানা, নিষ্পাপ, নিঃস্বার্থ, নিষ্ঠুর, স্বামীর আদেশ, নেপালি মেয়ে, সুখশান্তি, আদিল, দরদী শত্রু, দুই রংবাজ, প্রেম লড়াই, হিরো, শত্রুতা, ভাই আমার ভাই, ভরসা, ন্যায় অন্যায়, দাগী সন্তান, ধনবান, অবদান, মাস্তান রাজা, সারেন্ডার, স্বামী কেন আসামী, মেয়েরাও মানুষ, ভালোবাসার ঘর, ঘাত-প্রতিঘাত, পরাধীন, লাট সাহেব, ভাইজান, কালিয়া, আশিক প্রিয়া, রাজা গুণ্ডা, জালিমের দুশমন, সাহস, হাবিলদার, বিজয়, ছোট বউ, জিদ্দি, জোর, আখেরি মোকাবেলা, ওমর আকবর, রক্তের বদলা, চিরশত্রু, লক্ষীর সংসার, লালু মাস্তান, ধন দৌলত, গর্জন, স্ত্রী হত্যা, টাইগার, কাজের বেটি রহিমা, বাংলার নায়ক, হিংসা, গরিবের ওস্তাদ, রকি, বিশ্বনেত্রী।
ভিলেন থেকে নায়ক
ভিলেন জসিম ভয়ংকর এক জসিম। একই সাথে ভয় দেখায় আবার বিনোদন দেয় কথার মারপ্যাঁচে। ‘দোস্ত দুশমন’ এর খোঁচা খোঁচা দাড়ির জসিম যেমন ভয়ংকর কথা বলে আবার সুরে সুরে ছন্দ মিলিয়ে নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করতে বিনোদনও দেয়। এমনটা দেখা যায় না। খোদ বলিউডের অভিনেতা আমজাদ খান ‘শোলে’-র রিমেকের এ ছবিতে জসিমের অভিনয়ের প্রশংসা করেন বলে জানা যায়। দলের সর্দার গাব্বার সিং জসিম অপারেশন থেকে ফেরত আসা সহযোদ্ধাদের মজার ছলে গুলি করে মারে। ‘লাইলী মজনু’ ছবির জসিম আরো ভয়ংকর। রাজ্জাক-ববিতার প্রেমের পথে কাঁটা। সেই জসিম পরে হল নায়ক জসিমম। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়াই ছিল জসিমের কাজ।
জসিমের অ্যাকশন পারফেকশন
জসিমের অ্যাকশন পারফেকশন আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাস সৃষ্টি করা। তাঁর ‘দোস্ত দুশমন, মোহামম্দ আলি, সারেন্ডার,লালু মাস্তান, কালিয়া, আখেরী মোকাবেলা, কাজের বেটি রহিমা, হিংসা, স্বামী কেন আসামী, মেয়েরাও মানুষ’ এ ছবিগুলোতে অ্যাকশন ছিল দুর্দান্ত। তাঁর চোখের রাগী এক্সপ্রেশনে রগ ফুলে গিয়ে একটা ভয়ংকর মূর্তি ভাসে। তার সাথে কপালের সামনের দিকে ঝুলে থাকে চুল। এটা ছিল তার স্টাইল। জমকালো অ্যাকশন কস্টিউম ব্যবহার করত। গাছের গুঁড়ি দিয়ে ঢাল বানিয়ে ফাইটিং করত। বিদেশি অজানা অস্ত্র বা বন্দুক ব্যবহার করত যেগুলো তখনকার ছবিতে ছিল না। জসিমের অ্যাকশন পারফেকশন ক্ষেত্রবিশেষে তৎকালীন বলিউডি সানি দেওল, সুনীল শেঠি, সণ্জয় দত্ত-দের থেকে বেটার ছিল আর টলিউড থেকে তো এগিয়ে ছিলই।
পাঁচ সেরি ঘুষি
আমাদের বড়রা বলত-’জসিমের এক একটা ঘুষি নাকি পাঁচ সেরি ওজনের।’ একবার যার গায়ে পড়বে তার উঠে দাঁড়ানোটা মুশকিল। জসিমের ঘুষির সাথে মুখের আওয়াজও আসে আর ঐ সাউন্ডটা তো আসে তার মুখের ‘ভিসুএইক।’ এটা ছিল নিজস্বতা। কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান একবার স্মৃতিচারণায় বলেছিলেন জসিম তাঁকে দেখিয়ে দেয়ার পরেও ভুল করাতে ঘুষি খেতে হয়েছিল তারপর স্যুটিং প্যাকআপ করতে হয়েছে।
ভোলা যায় না যে সিকোয়েন্সগুলো
* বাংলার নায়ক
১.বস্তিতে আহমেদ শরীফের লোক হামলা করতে আসলে জসিমকে মোকাবেলা করতে উৎসাহ দেয় শাবানা। তারপর ঢোল বাজাতে থাকে আর বলে ‘জাগো বাংলার নায়ক, জাগো।’ জসিম তখন স্টিল পরা হাতে ফাইট করতে থাকে। আমাদের সিনেমায় এমন ফাইট আর নেই। ঢোলের তালে সুপার ফাইট।
২.লাস্ট সিকোয়েন্সে শাবানার বাবার বদলা নিতে বলে জসিম। তারপর সিগারেট ধরিয়ে একপা দু’পা করে পেছন ফিরে ড্রাম বাজাতে থাকে আর বলতে থাকে ‘মারুন।’ শাবানা রাগে জ্বলতে থাকে। জাস্ট সুপার।
* দোস্ত দুশমন
জসিম তার দলের তিনজন বিশ্বাসঘাতককে মারার জন্য গুলি লোড করে তারপর তিনজনের মাথায় তাক করে কিন্তু গুলি বের হয় না। আসলে চালাকি করে। তিনজনই বেঁচে যায় আর জসিম বলে-’ওরে তুইও বেঁচে গেলি?’একইসাথে ভিলেন ও কমেডি স্বাদ। তারপর হাসতে থাকে আর হাসি প্রতিধ্বিনি হয়ে ফিরে আসে পাহাড়ের গায়ে লেগে। তারপর গুলি করে মারে ঐ তিনজনকে। সুপার।
* লালু মাস্তান
বস্তিতে বুলড্রজার চালাতে এলে দাড়িগোঁফওয়ালা জসিম আসে সামনে। বলে ‘কার এত বড় সাহস এই লালু বেঁচে থাকতে বস্তি ভাঙতে আসে।’ খুবই সাদামাটা ডায়লগ কিন্তু বলার যে ভঙ্গি সেটাই এ ডায়লগের শক্তি। অ্যাকশন অভিনয় যে সস্তা না সেটা জসিম জানিয়ে দেয়।
* কাজের বেটি রহিমা
১.শাবানার চোখ অপারেশনের জন্য টাকা যোগাড় করতে যায়। বক্সিং প্রতিযোগিতার সুযোগ আসে। বক্সিংয়ে প্রথমদিকে অনেক মার খেয়ে যখন পড়ে যায় রক্তমাখা মুখে মনে মনে বলতে থাকে ‘তুমি আমাকে শক্তি দাও খোদা।’ তারপর উঠে দাঁড়িয়ে পা দুটো মঞ্চে ঘষে হাত দুটো মঞ্চের মোটা রশিতে পরীক্ষা করে আর মুখের রক্ত ফেলে দেয়। তখন জসিমের চোখ জ্বলছে। নিখুঁত অভিনয়।২.হাসপাতালে শাবানাকে মারার জন্য মাহবুব খান ষড়যন্ত্র করে। জসিম ও নূতন জেনে যায় তারপর তারাই ওদের অপারেশন করার আয়োজন করে। বুদ্ধি করে শাবানাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে মাহবুব খান ও তার দলকে ছাদে নিয়ে যায়। ছাদে গিয়ে দরজাটা আটকে ডাক্তারের পোশাক খুলেই সুপার একটা অ্যাকশন এক্সপ্রেশন দেয় জসিম। ঐ এক্সপ্রেশনটা তাঁর ওয়ান অফ দ্য বেস্ট। তারপর সুপার ডায়লগ ‘তোরা সবাই রহিমার চোখ অপারেশন করতে এসেছিস না? কিন্তু আজ আমি তোদের অপারেশন করব।’
* ঘাত প্রতিঘাত
শাবানা জসিমের সাথে হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে তর্ক করতে করতে ক্লান্ত হয়। তারপর বসে পড়ে টেবিলে। ঘামতে থাকে। জসিম ফ্যান ছেড়ে দেয় আর বলে ‘চা খাবে?’ অসাধারণ সিকোয়েন্স।
* জিদ্দি
শাবানার মহল্লায় বখাটেরা তাঁকে উত্যক্ত করে। আহত জসিমকে সুস্থ করার পর তাঁকে দেখে বখাটেরা বাজে কথা বলে। শাবানাকে ঘরে ঢুকিয়ে শিকল আটকে দিয়ে বখাটেদের বলে-’কাম অন হিট মি।’ অসাধারণ অভিনয়।
* মাস্তান রাজা
ছোটবেলায় টাকা ছিনিয়ে নেয়া লোকাল চাঁদাবাজ গাংগুয়াকে জেল থেকে বের হবার আবার সামনে পায় জসিম। গাংগুয়া জানায় ট্যাক্স দিয়ে যেতে হবে। ফাইট শুরু হয়। ফাইটে জসিমের শারীরিক কসরত যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
* ভালোবাসার ঘর
অমিত হাসান বড়ভাই জসিমকে ভুল বুঝে মারতে থাকে। ভাবী শাবানার প্রতিবাদে অমিত চলে যায়। তখন জসিম পেছন থেকে বলে-’ভাই তুই আমাকে আরো মার।’ তারপর শাবানাকে বলে-’তুমি ওকে যেতে দিও না। ও শুধু আমার ভাই না ও আমার সন্তান।’
ছবি যখন আলোচিত
জসিমের ‘ভাইজান’ ছবি দেখে আমাদের বাপ-দাদারা সিনেমাহলে চোখের পানি ফেলেছে। বোনের জন্য নিজের সুখ বিসর্জনের অসাধারণ পারিবারিক গল্পের ছবি। শাবানা থাকে বোন এবং এখানেই ছবিটি আকর্ষণ করেছিল তখনকার দর্শকদের। গোলাম মোস্তফাকে লাথি দিয়ে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেবার সময় মায়ের মৃত্যুর যে করুণ কাহিনী আমরা শুনি সেটাও ঐ সময়ে দর্শককে কাঁদিয়েছে। ‘অবদান’ ছবিতেও শাবানা থাকে বড়বোন। ভিলেনের ভূমিকায় ‘দোস্ত দুশমন’ মানুষের মন জয় করা ছবি। এ ছবি দিয়েই মানুষের মুখে মুখে জসিম আদর্শ ভিলেন হয়ে ওঠে। ছবিগুলো আলোচিত।
লটারি জসিম
এখনো মনে আছে ক্লাবে জসিমের সিনেমা দেখার সময জসিম বের হলেই সবাই বলে উঠত ‘লটারি জসিম।’ দেখতে দেখতে কেউ কেউ বলত ‘আজকে আরো বেশি টাকার লটারি জিতবরে।’ অনেক ছবিতে লটারি জিতেছিল জসিম কিন্তু ভাগ্যটা বেজায় খারাপ। কারণ লটারি জিতে টাকা হাতে যেই বাড়ি ফেরে রাস্তায় ওৎ পেতে থাকে গুণ্ডার দল আর কেড়ে নেয় সব। জসিমও ওদের উচিত শিক্ষাটা দিয়ে দেয়। হঠাৎ চলে না গেলে আরো অনেক সিনেমাতেই হয়তো লটারি জিতত আর গিনেসে নামটা উঠলেও উঠতে পার। এছাড়া রক্ত নিয়ে ফেরার সময়ও গুণ্ডারা তাঁকে আক্রমণ করত।
জসিম ও রাজু
জসিমের পর্দা নাম সবচেয়ে বেশি ছিল ‘রাজু’ । রাজু বললেই সবাই বলত, ওটা তো জসিমের নাম।
জসিম রসায়ন
জসিমের রসায়ন জমত দুইভাবে-
১. নায়িকা রসায়ন
২. ভিলেন রসায়ন
নায়িকা রসায়ন জমত শাবানা, নূতন, নাসরিনের সাথে।
ভিলেন রসায়ন জমত আহমেদ শরীফ ও জাম্বুর সাথে। আহমেদ শরীফের সাথে ‘স্বামী কেন আসামী, কালিয়া, বাংলার নায়ক, ঘাত-প্রতিঘাত, মাস্তান রাজা, গরিবের ওস্তাদ, আখেরি মোকাবেলা’ ছবিগুলোতে অনবদ্য লড়াই ছিল দুজনের। ‘আশিক প্রিয়া’ ছবিতে আহমেদ শরীফের হাতের আস্ত একটা তলোয়ারই বাঁকা করে ফেলে জসিম। ‘গরিবের ওস্তাদ’ ছবিতে বোনের সংসার বাঁচাতে আহমেদ শরীফের কথায় পেটের ভাত বের করে দেয় নিজের পেটে নিজে ঘুষি মেরে। এভাবে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হত।
ফুল প্যাকেজ জসিম
জসিম ফুল প্যাকেজ নায়ক। বাণিজ্যিক ছবির সব ধরনের গল্পতেই জসিম ছিল ফুল প্যাকেজ নায়ক। গল্প, গান, অ্যাকশন সবকিছুতে ফাটাফাটি। তাঁর গল্পে পরিবার থাকত, রাজনীতি থাকত, আনন্দ থাকত, হতাশা থাকত। ‘গরিবের সংসার’ বা ‘লক্ষীর সংসার’ যেমন পারিবারিক গল্পের অসাধারণ ছবি তেমনি অ্যাকশন থাকে ‘ঘাত প্রতিঘাত, বিশ্বনেত্রী’-র মতো দুর্দান্ত রাজনৈতিক ছবিতে।
জসিমের কালজয়ী গানগুলো
সবাই তো ভালোবাসা চায় – সারেন্ডার, রুমাল দিলে ঝগড়া হয় – গর্জন, বাতাসটা এসে কি বলে গেল – স্বামী কেন আসামী, রুবি – হিংসা, হাজার জনের মাঝে একজনই শুধু তুমি – মেয়েরাও মানুষ, এ জীবন কেন এত রং বদলায় – স্বামী কেন আসামী, তুমি ছাড়া কাটে না – ভালোবাসার ঘর, পৃথিবী আমায় ভুলে যাও – কালিয়া, ভালোবাসা ভালোবাসা – লক্ষীর সংসার, ভালোবাসা কখনো হয় না পুরনো – আখেরি মোকাবেলা, ভাই আমার ভাই তুমি – ভাই আমার ভাই, আশা ও আশা আমার ছোটবোন – জোর, ও তুই কাঁদিস না রে বোন – গরিবের সংসার।
প্রোডাকশন আইকন জসিম
জসিমের ‘জ্যাম্বস গ্রুপ প্রোডাকশন’ একটা বিপ্লব এনেছিল আমাদের বাণিজ্যিক ছবিতে। অ্যাকশন ছবির জগতে এ প্রোডাকশন ছিল আদর্শ। জসিম, মাহবুব, আমান, বুলবুল চারজন সদস্যের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে ‘জ্যাম্বস’ গঠিত হয়। ‘দোস্ত দুশমন’ ছবি মুক্তির আগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকাই ছবির প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যাকশন ছবি ‘রংবাজ’-এ জসিম নির্দেশনা দিয়েছিল। জসিমই অ্যাকশনের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকাই ছবিতে তথা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে।
দরদী ভাই জসিম
জসিম ছবিতে অন্যতম সেরা দরদী ভাই বোনের জন্য। জসিমের বোনের চরিত্রে সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছে নায়িকা কবিতা। এছাড়া শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, সোনিয়া তারা থাকত। বোনের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখত তাঁর ছবিগুলোতে। শাবানা-র ভাই ছিল ‘ভাইজান, লাট সাহেব’ ছবিতে এবং বোনের জন্য নিজের সবকিছু বিসর্জন দেয়।
মুক্তিযোদ্ধা জসিম
জসিম দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ২ নং সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে সশস্ত্র মু্ক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। এ বিষয়টি তাঁকে আলাদাভাবে সম্মানের জায়গায় রেখেছে মানুষের মনে।
উদার জসিম
জানা যায় একজন পরিচালকের শেষ বয়সের খরচ যোগাত জসিম। বিষয়টা খুব একটা লাইমলাইটে আসেনি। জসিম চাইত না প্রকাশ করতে। নিয়মিত তাঁর বাসায় খোঁজখবর রাখত এবং আর্থিক সাহায্য করত। মনের দিক থেকেও জসিম ছিল উদার।
শিল্পী চেনা জসিম
নায়ক রিয়াজকে প্রথমবার ছবি করার প্রস্তাব জসিমই দিয়েছিল। ‘বাংলার নায়ক’ ছবিতে সুযোগও দিয়েছিল। জসিম শিল্পী চিনতে পেরেছিল তাই রিয়াজ আজ আরেক কিংবদন্তি নায়ক।
জসিম ফ্লোর
চলচ্চিত্রে অনেক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জসিমের নামে এফডিসি-তে একটি ফ্লোর আছে। নাম মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসিম ফ্লোর।
মৃত্যু
১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মাত্র ৪৭ বছর বয়সে কিংবদন্তি জসিমের মৃত্যু হয়।
একজন জসিম তাঁর কর্মে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে একাই একশো। তাঁর অবদান অনেকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে জসিম হয়ে থাকবে গর্বিত অধ্যায়।