Select Page

জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ও মহাকবি ইকবাল

জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ও মহাকবি ইকবাল

জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমার মুক্তির তারিখ খুঁজতেছিলাম। কিছুদিন আগে। বাংলা মুভি ডেটাবেজে মুক্তির তারিখের সঙ্গে অন্য ইনফোগুলো দেখতেছিলাম। সেখানে গীতিকারের তালিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, খান আতার সঙ্গে দেখি মুহাম্মদ ইকবাল!

সিনেমাটি ছোটবেলার পর আর দেখা হয় নাই। ডেটাবেজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সব ইনফো খুটে দেখা হয় না। যাই হোক, মুহাম্মদ ইকবাল বলতে একজনকেই জানি। সেই হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলনের একমাত্র সিনেমার দাবিদার ‘ফাগুন হাওয়ায়’ এর একটা দৃশ্য মাথায় এলো। পরে শিওর হওয়ার জন্য ইউটিউবে গিয়ে দেখি গীতিকারের তালিকা মুহাম্মদ ইকবাল নন, আছেন ‘মহাকবি ইকবাল’।

‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমার বিষয়টা হলো তৌকীর আহমেদের ওই সিনেমায় মফস্বলে ভাষা আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় উর্দুভাষী এক পুলিশ অফিসার। ঘটনার কৌতুককর অংশে তার মুরগি খেয়ে ফেলে আন্দোলনকারীরা। তখন তারা একেকটা মুরগি একেকটা নাম দেয়, তার একটা ইকবাল। মানে ইকবালকে হত্যা করে খেয়ে ফেলে। এ নিয়ে ‘ফাগুন হাওয়া’ সিনেমার রিভিউতে বিস্তারিত লিখছিলাম। এখন মনে হইতেছে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হলে যা হয়। মানে জহির রায়হানের মতো সামনের সারির আন্দোলনের মানুষদের কাছে ইকবাল কোনো সমস্যা ছিল না! তাইলে আমাদের ইতিহাস-সংস্কৃতির কী অবস্থা?

গুগল করে দেখলাম, ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় ইকবালের গান ব্যবহার নিয়ে কিছু আছে কিনা। একটা লেখা পাইলাম। কয়েক বছর আগে লিখছিলেন পিনাকী ভট্টাচার্য। সেখান থেকে জানলাম, মূলত রুশ বিপ্লবকে স্বাগত জানাইতে গিয়া ইকবাল তিন পর্বের কবিতা লিখছেন। সেখান থেকে জহির রায়হান শেষ অংশ ইউজ করছেন তার সিনেমায়।

‘খোদা কি ফরমান ফিরিশতে কি লিয়ে’ কবিতা থেকে বাংলা গান ‘দুনিয়ার যত গরীব কে আজ জাগিয়ে দাও’। সিনেমায় একটা দৃশ্যে শ্রমিকদের ধর্মঘটে আনোয়ার হোসেন ও রাজ্জাক এ গানটা গাইছেন এমন দেখা যায়। কিন্তু শব্দের ব্যবহারজনিত কারণে গানের রিপ্লেসমেন্ট ভুল বলে মনে করেন পিনাকী দা। তিনি বলছেন, ‘এটা খোদার ফরমান, খোদা বলছেন ফেরেশতাদের। তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন ফেরেশতাদের, আমার নিপীড়িত বান্দাদের জাগিয়ে দাও। জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমকে খোদা বিপ্লবের নির্দেশ দিচ্ছেন। খোদা তাঁর পেয়ারের বান্দার দারিদ্রে পীড়িত তাই খোদা বলছেন “আমার এই মন পায় না শান্তি শ্বেত পাথরের মহলে।। আমার জন্য মাটির একটি কুটির বানিয়ে দাও”। খোদার তো শ্বেত পাথরের মসজিদে মন শান্ত হচ্ছে না, খোদা চান মাটির কুটির; খোদা তো তাঁর দুঃখী বান্দার সাথেই থাকতে চাইবেন। এই গানটি কি শ্রমিকদের গলায় সুপ্রযুক্ত হয়েছে?’

আমার ধারণা গানের এ ধরনের ব্যবহার নিয়ে ততটা সিরিয়াস না হইলেই হয়। আবার সুফিটিক এক্সপ্রেসশনে অনেককিছু এমনই হয় হয়তো। কিন্তু ধরেন, বাস্তবে আসলে শ্রমিকদের কে নেতৃত্ব দেয়, তাদের ক্লাস কী। এই তো মিডল ক্লাস, জমিদারি হারানো মানুষ বা এলিট লোকজন। ইভেন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনে সাধারণ মানুষ, এমনকি ছাত্রদের এজেন্সি না করেই দেয়া হচ্ছে। যাই হোক, এটা প্রসঙ্গান্তর। আমরা ছেলে তো রাধা হালে কত গান-টান করি, আসলে কি তাই!

অবশ্য এত ছোট জায়গায় পিনাকী দা’র আলোচনাটা বোঝা যাবে না। উনারটা উনার জায়গায় ঠিকঠাক। এখানে উনার লেখার লিংক থাকল। আর ‘ফাগুন হাওয়ায়‘ এর রিভিউ।


About The Author

বিএমডিবির সহপ্রতিষ্ঠাতা

Leave a reply