জাজের সিনেমায় কেন নেই দেশী নায়ক
বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনার নতুন ট্রেন্ড শুরু করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। তবে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। বলা হয়ে থাকে, দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। দেশের নায়ক থাকে না এ সব সিনেমায়।
এ প্রসঙ্গ’সহ আরো কিছু বিষয়ে জাজের অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে বুধবার। সেখানে আরও বলা হয়েছে সিনেমা শিল্প, সিনেমা হল, সংবাদমাধ্যমের উপর জাজ নির্ভরশীল নয় ও বলিউডে সিনেমা নির্মাণ নিয়ে। লক্ষণীয় যে, ‘অঙ্গার’কে ‘সিনেমা’ না বলে ‘বই’ বলা হয়েছে। শাকিব খান ও আরিফিন শুভের নাম ভুল বানানে লেখা। নামের বানান শুদ্ধ করে পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো—
কিছু কথা :
অনেকেই অভিযোগ করে জাজ কেন বাংলাদেশ থেকে নায়ক নেই না। নিন্মে কিছু কারণ দেওয়া হল :
১। আপনারা জানেন বাংলাদেশ বা কলকাতা বর্তমানে নায়ক নির্ভর সিনেমা হয়।
২। জাজ এর ৭০% সিনেমা হয় নায়িকা নির্ভর।
৩। বাংলাদেশের সিনেমার দর্শক মূলত নায়ক নির্ভর।
৪। এমনিতেই আমাদের এখানে ভালো বা বাণিজ্যিকভাবে চলার মত সিনেমা কম। আর বর্তমানে বাংলাদেশে মূলত ৩ জন নায়ক এর সিনেমা ডিস্ট্রিবিউশন এ কম বেশি চাহিদা আছে, যেমন শাকিব খান, বাপ্পি, আরিফিন শুভ।
৫। অন্য প্রযোজকরা এদের সিনেমাতে নিয়ে মূলত নিরাপদ বোধ করে এবং তাদের কলকাতা থেকে নায়ক আনার সুযোগও কম। কিছু প্রযোজক আছে যারা এই তিনজনের বাহিরে সিনেমা বানাতে চায় না।
৬। জাজ বর্তমানে বছরে ১২টা সিনেমা বানানোর জন্য কাজ করছে। আর জাজ যদি এই ৩ জনকে নিয়ে বছরে ১২টা সিনেমা করে, তবে অন্য প্রযোজকর কী করবে? তারা তো সিনেমা বানাবে না।
৭। তাই জাজ যদি নায়িকা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আর নায়ক কলকাতা থেকে নিয়ে ১২টা সিনেমা করে, তাহলে অন্য প্রযোজকরা ওদের তিনজনকে নিয়ে ১২-১৫ তা সিনেমা করে, তবে বছরে আমাদের সিনেমা হলগুলো আনুমানিক ৩০টা সিনেমা পাবে, এতে হলগুলো বাঁচবে।
৮। সবার আগে হল বাঁচাতে হবে। হল না বাঁচলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বাঁচবে না। শুধু দেশ প্রেম দিয়ে চলচ্চিত্র বাঁচানো যাবে না। চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে দরকার সঠিক পরিকল্পনা। জাজ এই কাজটি করতে হচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’কে বাঁচিয়ে রাখতে। বলতে পারেন জাজ এককভাবে যুদ্ধ করে যাচ্ছে গত ৪টি বছর।
৯। তাই অহেতুক, দেশপ্রেম দেখিয়ে, সিনেমা হল বন্ধ করা বা বাংলাদেশ চলচ্চিকে ধ্বংস করার মত দেশপ্রেম মোটেও আমাদের নেই।
১০। যারা বলেন, জাজ দেশ বেচে দিল, বেচে দিল – আসলে তারাই খারাপ। তারা নিদিষ্ট কারো পাগল ভক্ত। তাদের সিনেমা বানাতে বলে। তারা বুঝতে চায় না , এতে আমাদের চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমে যাবে । যা এই ভঙ্গুর শিল্পটাকে দ্রুত শেষ করে দিবে।
১১। নতুন নায়ক তৈরি করতে বলে। বললেই কি নায়ক তৈরি হয়ে যায়? নায়ক হতে হলে নায়ক সুলভ চেহারা লাগে। আচরণ ভাবভঙ্গিতে হিরোইজম লাগে। যা খুঁজে পাওয়া খুব দুঃসাধ্য ব্যাপার। আমরা গত ৩ বছর যাবত খুজচ্ছি । পাচ্ছি না। আগামী ৭ দিন এর ভিতর, আমরা অনলাইনের মাধ্যমে, এবার নতুন নায়ক খোঁজা শুরু করবো। দেখি পাওয়া যায় কিনা?
১২। কেউ কেউ বলে বেশীর ভাগ টেকনিশিয়ান ও আর্টিস্ট ভারত থেকে নেওয়া হয়। এই কথা ও ঠিক না। টেকনিশিয়ান ও শিল্পী প্রায় সমান সমান থাকে। তবে ইংল্যান্ড বা থাইল্যান্ডে শুটিং করলে একটা সমস্যা পড়তে হয়। আমাদের দেশের অনেক শিল্পী কলাকুশলী ভিসা না পাওয়ার জন্য যেতে পারে না।
১৩। যেমন ‘অগ্নি’ সিনেমার পরিচালক ছিলেন আমাদের ইফতেখার চৌধুরী। ভারতের পোস্টারেও শুধু তারই নাম গেছে। এটা নিয়ে কলকাতার কারো মাথাব্যথা নেই। ওদের মাথাব্যথা নেই কোথায় কতদিন শুটিং হল। ওদের মাথাব্যথা নেই ওদের কতজন আর্টিস্ট টেকনিশিয়ান কাজ করল।
১৪। ‘অঙ্গার’ বই এর পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন। কাহিনী – আব্দুল্লাহ জহির বাবু। সংলাপ – জাকির হোসেন রাজু। সম্পূর্ণ বই এর শুটিং হয়েছে FDC ও বান্দরবানে। শুধু গানের শুটিং হচ্ছে দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি’তে। গানও বান্দারবান করার কথা ছিল। কিন্তু বইটা এতো ভালো হয়েছে যে আমরা গানগুলোও অনেক ভালো করার জন্য ভালো লোকেশনে গিয়েছি এবং কিছু বৈচিত্র্য আনতে চেয়েছি, বইটার ভালোর জন্য। বইটার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ডিরেক্টর শুধু ইমন সাহা। সঙ্গীত পরিচালনা করেছে আমাদের দেশের আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ও ইমন সাহা (৩টা), কলকাতার আকাশ (২টা)। গান গেয়েছে ন্যান্সি, খেয়া, ইমরান (বাংলাদেশ) ও শুভ মিতা, নেহা কাক্কার (ভারত)। অঙ্গার বইতে অভিনয় করেছে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৩ জন শিল্পী। ভারত থেকে ৪ জন, বাকি সবাই বাংলাদেশের। VFX করছে জাজের আমিন। কালার করছে জাজের আসফাক। অর্থাৎ বেশীর ভাগ কাজ করেছে, হয়েছে, হচ্ছে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশের কলাকুশলীরা। এরপরও কিছু লোক, অনলাইন পোর্টাল, পত্রিকা বলছে জাজ দেশ বেচে দিচ্ছে। যারা বলে, তারা না বুঝে , না জেনে বলে বা তারা বাংলা চলচ্চিত্রের খারাপ চায় বলে।
১৫। জাজ এরপর যত সিনেমা বানাবে শুধু যৌথ প্রযোজনার সিনেমা বানবে। কারণ জাজের একটা সিনেমার বাজেট কমপক্ষে ২ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশের মার্কেট এখন ১ কোটি টাকা (যদি ছবি হিট হয়)। তাই বাকি টাকা অবশ্যই ভারত বা অন্য দেশ থেকে আসতে হবে। যদি যৌথ সিনেমা না বানাতে পারি, তবে বাংলাদেশে সিনেমা বানানো বন্ধ করে দিব। বম্বেতে সিনেমা বানাবো। সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি জাজ ২০১৬ তে বম্বেতে সিনেমা বানাবো। যা সারা পৃথিবীতে চলবে।
১৬। কিছু অনলাইন পোর্টাল আছে যারা ঘোষণা দিয়েছে জাজের কোন কিছু প্রচার করবে না। আরে ভাই আমরা কি আপনাদেরকে বলেছি আমাদের সিনেমার প্রচার করার জন্য। আমরা তাদের উদ্দেশে বলছি, জাজ ৫ বছরের পরিকল্পনা করে এই ব্যবসায় নেমেছে। একমাত্র দর্শক ছাড়া জাজ আর কারো উপর নির্ভরশীল নয়। সিনেমা বানানো বা প্রচারনা বা বিপণনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আটঘাট বেধে নেমেছে। জাজ তার একটি পোস্ট খুব সহজেই ২৪ ঘণ্টায় ১০ লক্ষ profile এ reach করতে পারে। আপনার নিউজ পোর্টালের একটা নিউজ জাজ যদি share করে তবে হয়তোবা আপনার নিউজটি অনেক বেশী লোকের কাছে পৌঁছাতে পারে বা আপনার পেইজ এর like কিছু বাড়তে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন জাজ নিজের কাজের জন্য অন্য কারো উপর নির্ভর নয়। আশা রাখি এনিমিটেড মুভি ডিটেকটিভে আমরা শুদু facebook এ কমপক্ষে ১ কোটি লোকের কাছে পৌঁছে দিব।
১৭। তাই সবার কাছে অনুরোধ করছি, শুধু সমালোচনার জন্য সমালোচনা করবেন না। বা কারো প্রতি অন্ধ ভক্ত হয়ে, অন্যকে গালি দিবেন না। মনে রাখবেন , বাংলা চলচ্চিত্র না থাকলে, আপনার পছন্দের নায়ক বা নায়িকাও থাকবে না।
ধন্যবাদ সবাইকে।।