জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘চিতা’ নিয়ে দুইপক্ষের আপত্তি
সম্প্রতি কাজী আনোয়ার হোসেনর ‘অপারেশন চিতা’ নিয়ে নতুন সিনেমার ঘোষণা দিয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। কিন্তু ‘চিতা’ নামের সেই ছবির ঘোষণা দিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সেবা প্রকাশনীর কর্তা ব্যক্তি ও বইটির লেখক।
এমআর নাইন ছবিতে এবিএম সুমন
‘চিতা’ খবরটি সেবার ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করা হলে সেখানে মন্তব্য করেন কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ ও বর্তমানে প্রকাশনা সংস্থাটির দায়িত্বে থাকা মাসুমা মায়মুর। মন্তব্যের ঘরে তিনি লেখেন, ‘ভুল তথ্য। এটা মাসুদ রানা নিয়ে নয়।’
এর আগে জাজের প্রযোজনায় মাসুদ রানার কাহিনি নিয়ে ‘এমআর নাইন’ নির্মিত হলেও তা নিয়ে বিস্তর অসন্তুষ্টি রয়েছে। তারও প্রকাশ দেখা গেল সেবা প্রকাশনীর ফেসবুক গ্রুপের একাধিক পোস্টে।
আরেক মন্তব্যে জাজের আব্দুল আজিজের ঘোষণা সম্পর্কে মাসুমা মায়মুর বলেন, ‘প্রচারের জন্য বলেছে। মূলত তা না।’
‘অপারেশন চিতা’ বইটি প্রকাশ হয়েছিল ১৯৯১ সালে। ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের বইয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম গেলেও মূলত একাধিক লেখক এ সিরিজের বইগুলোর লেখক। এর মধ্যে ‘অপারেশন চিতা’র লেখক ইফতেখার আমিন। তিনিও জাজের ঘোষণা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। কারণ তার লেখা মাসুদ রানা সিরিজের চারটি বইয়ের স্বত্ব নিয়ে কপিরাইট অফিসের অভিযোগ ঝুলে আছে।
সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে ইফতেখার আমিন লেখেন, “অপারেশন চিতা মাসুদ রানা সিরিজের ১৮৩ নং বই। এটি আমার লেখা ৫৮টি মাসুদ রানার মধ্যে প্রথম থ্রিলার। প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালের অক্টোবর মাসে। ফেসবুক সূত্রে আজ জানতে পারলাম জাজ মাল্টিমিডিয়া আমার সেই রোমাঞ্চোপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এবং তারা এ কাজে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে। কার অনুমতি নিয়ে জাজ মাল্টিমিডিয়া আমার অপারেশন চিতা অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে আমি জানি না। ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম সেবা প্রকাশনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা এর সাথে জড়িত নয়। কে কোন সূত্র থেকে নিশ্চয়তা পেয়ে এ কাজে হাত দিয়েছে, এ কাজে কোন আর্থিক ডিল হয়েছে কি না তা-ও আমি জানি না।
তবে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, অপারেশন চিতাসহ আরও ৪টি মাসুদ রানা কপিরাইট অনুমোদন করার জন্য আমি অনেক আগেই কপিরাইট অফিসে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন সাহেবকে এ বিষয়ে অনেকবার শুনানিতে হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে কিন্তু তিনি হাজির হননি। বিষয়টি আজও অমীমাংসিত রয়েছে।
এমতাবস্থায় সকল পক্ষের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, কেউ আমার লেখা মাসুদ রানা নিয়ে কোন পক্ষের সাথে ডিল করতে গেলে, টাকা-পয়সা লেনদেন করলে আইনগত সমস্যার বিষয়টা মাথায় রেখে করবেন। ধন্যবাদ।”
গত ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ জানান, এবার মাসুদ রানা সিরিজের ‘অপারেশন চিতা’ গল্পটি নিয়ে ছবি বানাবেন তারা। আগামী ২৮ জানুয়ারি ছবিটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অর্থাৎ মহরত সারবেন। আজিজ বলেন, “ছবির নাম রাখা হয়েছে ‘চিতা’। নির্মাতা ও নায়ক-নায়িকার নাম আপাতত গোপন থাক। মহরতে জানানো হবে। তবে এটুকু বলতে পারি, কাস্টিংয়ে অনেক বড় চমক থাকবে।”
আজিজ জানালেন, বাংলাদেশের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে হবে ‘চিতা’র চিত্রায়ন। আগামী মার্চেই শুরু হবে শুটিং। নির্মাণ শেষে বিশ্বব্যাপী ৩০টির বেশি দেশে ছবিটি বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় মুক্তি দেওয়া হবে।
‘মাসুদ রানা’ সিরিজ নিয়ে প্রথম সিনেমা নির্মিত হয় ১৯৭৪ সালে। যেখানে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সোহেল রানা। এরপর গত চার দশকে আর পর্দায় পাওয়া যায়নি চরিত্রটিকে। শেষমেশ জাজ মাল্টিমিডিয়া উদ্যোগ নেয়, মাসুদ রানা সিরিজের কয়েকটি গল্প সিনেমায় তুলে আনবে। যার একটি ‘এমআর-৯’; মুক্তি পায় গত বছরের ২৫ আগস্ট। আসিফ আকবরের পরিচালনায় ছবিটিতে মাসুদ রানার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এবিএম সুমন। এছাড়াও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রাঙ্ক গ্রিলো, কেলি গ্রেসন, ভারতের সাক্ষী প্রধান, বাংলাদেশের জেসিয়া ইসলাম প্রমুখ।