জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ও ডিজিটাল চলচ্চিত্রের সমস্যা, সম্ভাবনা
আজ ৩ এপ্রিল ‘জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস।’শ্লোগান নির্ধারিত হয়েছে ‘ডিজিটাল চলচ্চিত্র : সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।’
ডিজিটাল সিনেমার হাত ধরে দেশের সিনেমাশিল্প এগিয়ে যাবে এ স্বপ্ন আমরা দেখি।এ পর্যন্ত যেসব ডিজিটাল সিনেমা রিলিজ হয়েছি সেগুলো দর্শক পছন্দে কোনোটাে গ্রহণযোগ্য হয়েছে কোনোটা হয়নি।দর্শক কী চায় সেটি বোঝা যায়। দর্শক পরিবর্তন চায়। সে পরিবর্তনটি কখনোই অতীতকে অস্বীকার করে নয়। অতীতকে স্মরণ করে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন দিনের সিনেমার দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এ পর্যন্ত দেশের ডিজিটাল সিনেমাজগতে অর্জন ও ব্যর্থতা কেমন তার একটা হিশেব কষলে যা মেলে তা হচ্ছে, সিনেমা রিলিজ হচ্ছে একের পর এক তবে এর পাশাপাশি সিনেমাহল বন্ধ হওয়া, হিন্দি-তামিল থেকে গল্প নকল করে সিনেমা বানানো, কারিগরি সমস্যা, সিনেমার মধ্যে নাটকীয় সাউন্ড বা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ইত্যাদি সমস্যা থেকে গেছে।
দর্শক যে পরিবর্তনটা চায় তার জন্য গল্প ও নির্মাণ দুটিরই আধুনিক উপস্থাপন তারা দাবি করে। দাবি করাটা তাদের অধিকার। পরিবর্তনটা একদমই হচ্ছে না তা না তবে ধীরগতিতে। গতি বাড়াতে হলে সরকারি সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। দুঃখজনক হলেও সত্য সরকারিভাবে দেশের সিনেমাশিল্প বরাবরই অবহেলিত ছিল। এ মুহূর্তে খুব দরকার সরকারের এগিয়ে আসাটা। পাশাপাশি ডিজিটাল সিনেমার নতুন দিগন্ত নিয়ে ভাবতে গেলে কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি যার মধ্যে এরকম নমুনা থাকতে পারে –
* এফডিসিকে ঢেলে সাজানো জরুরি। সেকেলে সিস্টেমে কোনোকিছু থাকা উচিত না। যন্ত্রপাতির পাশাপাশি নতুন-পুরাতন ভবন দরকার, টেকনিশিয়ান দরকার, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দরকার। এফডিসিভিত্তিক স্যুটিং- এর একঘেয়েমিতা না বাড়িয়ে বাইরের লোকেশন রাখা জরুরি।দেশ-বিদেশ কম্বিনেশন দরকার।
* দর্শকের কাছ থেকে সিনেমা স্ক্রিপ্ট আহবান করা। এজন্য প্রতিযোগিতা করা যেতে পারে। দর্শক নতুন গল্পের জন্য সবচেয়ে বড় নির্ভরতা হতে পারে।অনেকে স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসে আছে অথচ প্রয়োজনীয় সুযোগ পাচ্ছে না। স্বচ্ছতা রেখে স্ক্রিপ্ট রাইটারকে গুরুত্ব দিয়ে সিনেমায় তার নামটা যাতে ব্যবহার হয় বা প্রতারণা জাতীয় কিছু না ঘটে সেটা মনে রাখতে হবে।
* সিনেমার পর্দা ফ্রেশ হলেও তাতে নাটকের একটা অাবহ থেকে যাচ্ছে যা ক্ষেত্রবিশেষে বিরক্তি আনে। তাই টলিউডভিত্তিক বাংলা সিনেমার মতো ওয়াইড স্ক্রিন করলে এ সমস্যাটা বোধ হবে না।
* সিনেমায় পারফেক্ট ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের অভাব এখন অন্যতম সমস্যা। এ সমস্যাটা সমাধান করা উচিত।স্টাডি করা যেতে পারে।
* লোকেশনে ভিন্নতা দরকার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একই রকম লোকেশন বারবার দেখা যায়। বাজেট অনুযায়ী লোকেশনে একটা প্রভাব পড়ে সেটা ঠিক সেজন্য বাজেটের কথাও ভাবতে হবে। প্রযোজকদের এগিয়ে আসতে হবে।
* আইটেম সং-এর নামে নোংরামি যাতে না হয় খেয়াল রাখা উচিত। নায়িকাদের পোশাক মার্জিত হওয়া উচিত। অশ্লীলতাকে বর্জন করতে হবে।
* অভিনয় শিল্পীদের বেশিরভাগই অভিনয়ে দুর্বল। তাদের জন্য কোর্স দরকার। সিনিয়র শিল্পীদের কাজে লাগানো যেতে পারে।তাদের মাধ্যমে কর্মশালা করা যেতে পারে।
* নাটক, মডেল বা মিউজিক ভিডিও থেকে সিলেক্টিভ তারকাদের নেয়া যেতে পারে তবে তারা পারফেক্ট কিনা সেটা অবশ্যই ভাবতে হবে।
* একসময়ের ‘নতুন মুখ’-এর মতো এফডিসিভিত্তিক সিনেমা প্রতিভার অন্বেষণ নতুনভাবে শুরু করা উচিত। সিজন অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে করা উচিত। মান্না, আমিন খান-দের মতো পারফেক্ট অভিনেতারা একসময় এসেছিল এর মাধ্যমেই। আবারও সে চেষ্টাটা করলে ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাবে আশা করি।
* সিনেমা চ্যানেল, মিউজিক চ্যানেল দরকার। পুরনো সিনেমা দেখানো, আপকামিং সিনেমার ট্রেলার, গান প্রচার করা হবে চ্যানেলে।
* অফট্র্যাক সিনেমা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি টেকানো যাবে না তাই বাণিজ্যিক সিনেমার দিকেই মূল দৃষ্টি বা গুরুত্ব রাখতে হবে। বাণিজ্যিক সিনেমার ধাঁচ বুঝতে গত শতকের নব্বই দশকের ব্যবসাসফল সিনেমাগুলো স্টাডি করলে গ্রহণ-বর্জন করে নতুন দিনের বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মাণ করতে হবে।
* যৌথ প্রযোজনার ক্ষেত্রে একটাই কথা ফিফটি ফিফটি হতে হবে সবকিছু।
এরকম আরো অনেক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে ডিজিটাল সিনেমা। যে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত-কে শ্লোগান হিশেবে নেয়া হয়েছে সেটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এর জন্য উপরের পয়েন্টগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে।
এগিয়ে যাক ডিজিটাল সিনেমা