তুমি তো এখনও প্রিয়
‘হয় যদি বদনাম হোক আরো/আমি তো এখন আর নই কারো/…’ কিংবা ‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারো ঘরনী/জেনে রাখো প্রাসাদেরও বন্দিনী প্রেম কভু মরেনি/…’ অথবা ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন,/ দুজন দুজনার কত যে আপন।/কেউ জানে না…’— এই গানগুলো কোথাও শুনলে চোখের সামনে ভেসে উঠে একজন সৌম্য-মধ্যম মাপের হৃষ্টপুষ্ট মানুষের চেহারা। তার চেহারার সঙ্গে নয়; বরং আরও আগে মনে পড়ে যায় চিরসবুজ নামটি! জাফর ইকবাল। আমাদের কালের নায়ক। আশির দশকে যে বয়সে আমাদের মাথায় সিনেমার পোকা ঢুকছে; তখন তিনি দাপুটে নায়ক।
‘সিনেমায় নায়ক নায়িকাকে যেভাবে জড়িয়ে ধরে, চুমু খায়— সেটা আসলে ক্যামেরার কারসাজি! নায়ক-নায়িকারা অতো ঘনিষ্ঠ হয় না, ক্যামেরা তাদের ঘনিষ্ঠ করে। অতো দামি নায়ক, জোশ নায়িকার গায়ে হাত দেবে, আদর করবে; তা সে মানবে কেন? টাকা দিলেই সব পাওয়া যায় না। অমন করে বৃষ্টিতে ভিজলে তো ঠাণ্ডা লেগে যাবে! আর গান তো নায়ক-নায়িকা গায়ই না, ঠোঁট মেলায়!’— তখন আমাদের বন্ধুমহলে আলোচনার বিষয় ছিল এটা! কেউ কেউ তখনই অবশ্য বেশি পেকেছি! তর্ক জুড়েছি— ‘আরে যা ঘটে [যা দেখি] তার কিছু না কিছু তো হয়, সব কিছু কী ভুয়া হয় নাকি।’ ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলত এসব আলোচনা-তর্ক। তবে আমরা একবাক্যে এটা মানতাম— ‘গানটা নায়ক-নায়িকারা করেন না, ঠোঁট মেলান।’ সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, এন্ড্রুকিশোর… রেডিওর কল্যাণে আমাদের বড় চেনা! এঁদের গাওয়া গানে ওরা (নায়ক-নায়িকারা) ঠোঁট মেলায়— এ সত্য তখন আমরা সবাই জানি।
‘একমাত্র নায়ক জাফর ইকবালই সিনেমায় নিজের কণ্ঠে গান করে। তার দুই গুণের ভক্ত আমরা। কেমন করে কথা বলে, কীভাবে হাঁটে, গিটার বাজানোর ভঙ্গিটা দারুণ!’— এই সত্যি ততদিনে আমাদের জানা হয়ে গেছে। জনপ্রিয়তার পাল্লাটা তাই তারই ভারী। একটা সিনেমা দেখার পর তার রেশ থাকতো মাসের পর মাস। গল্প চলতো দিনের পর দিন। শাবানার মুখের হাসি, ববিতার চোখের মায়া, দিতির কোমল শরীর শিহরণ জাগাতো মনে ও দেহে!
গায়ে সাদা টিশার্ট আর সাদা প্যান্ট; পায়ে সাদা জুতো। এই সাদাকালো সাদামাটা পোশাকে কী অপরূপ ফুটে উঠত তার। তারুণ্যের প্রতীক, সিনেমায় চলচ্চিত্রে চিরসবুজের প্রতিভু যেন নায়ক-গায়ক জাফর ইকবাল। ওই সময়ের নায়কদের মধ্যে সবচেয়ে ফ্যাশনেবল ও স্টাইলিশ ছিলেন এই হার্টথ্রুব।
কবরী, শাবানা, ববিতা, চম্পা, সুচরিতা, দিতি— সবার নায়ক জাফর ইকবাল। যখন যার সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়েছেন সেখানেই যেন সোনা ফলেছে। বেকার যুবক, শিক্ষিত যুবক, মাস্তান, ভিখেরি, কণ্ঠশিল্পী, পুলিশ অফিসার, ডাক্তার, প্রেমিক— যেকোনো চরিত্রে অবলীলায় মিশে যাওয়ার যোগ্যতা তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়েছিল।
সুরের ভুবনে জন্ম
সুরকার আনোয়ার পারভেজের ছোট ও কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহর বড় ভাই জাফর ইকবাল। ১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন জাফর ইকবাল। সুরের ভুবনে জন্ম নেওয়ায় তার সাংস্কৃতিক যাত্রা শুরু হয় গানে। ভাই-বোনের মতো নিজেও সঙ্গীতভক্ত হয়ে উঠেন। গানকে ভালোবাসতে শিখেন, গাইতে শুরু করেন। গিটার বাজানোতে আলাদা দক্ষতা ছিল জাফর ইকবালের। সেই সময়কার বিখ্যাত গায়ক এলভিস প্রিসলির দারুণ ভক্ত ছিলেন তিনি। গানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ১৯৬৭ সালে বন্ধু তোতা, মাহমুদ ও ফারুক’কে নিয়ে গঠন করেছিলেন ব্যান্ড দল— র্যাম্বলিং স্টোনস। ১৯৬৮ সালে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে (মাঝে হোটেল শেরাটন, রূপসি বাংলা, এখন আবার ইন্টার কন্টিনেন্টাল) আইওলাইটস, উইন্ডিসাইট অব কেয়ার, লাইটনিংস এর সাথে জাফর ইকবালের ব্যান্ড র্যাম্বলিং স্টোনস একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ১৯৬৯ সালে একটি গানের অনুষ্ঠানে মঞ্চে জাফর ইকবালকে দেখে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষ খান আতাউর রহমান মুগ্ধ হন।তিনি জাফর ইকবালকে ‘আপন পর’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। ওই বছরই খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় এই চলচ্চিত্রে কবরীর বিপরীতে নায়ক হিসেবে পর্দা অভিষেক হয় জাফর ইকবালের। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জাফর ইকবাল এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন দেশে অভিনয়ে পুরো মনোনিবেশ করেন জাফর ইকবাল।
কিছু গান, কিছু চলচ্চিত্র
অভিষেক চলচ্চিত্রেই সুপার-ডুপার হিট একটি গান চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে জাফর ইকবালকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। ‘আপন পর’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীতশিল্পী বশির আহমেদের ‘পিঞ্জর খুলে দিয়েছি/ যা কিছু বলার ছিল বলে দিয়েছি’ গানটি এখনও সমধিক শ্রোতা প্রিয়। যদিও এই গানটিতে জাফর ইকবাল শুধু ঠোঁট মিলিয়েছিলেন। গানটি লেখেন ও সুর করেন এ চলচ্চিত্রের পরিচালক খান আতাউর রহমান।
স্বাধীন দেশে জাফর ইকবাল সবার নজর কাড়েন একটি রিমেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। ইবনে মিজান পরিচালিত ‘এক মুঠো ভাত’ নামের এই চলচ্চিত্রটি বলিউডের পরিচালক মনমোহন দেশাই পরিচালিত ও রাজেশ খান্না অভিনীত ‘রোটি’র রিমেক। রাজেশ খান্নার চরিত্রটিতে অভিনয় করেন জাফর ইকবাল। এই চলচ্চিত্রে ‘শোনো ভাইয়েরা কথা শোনো এমন একজন মানুষ আনো যে জন পাপ না করেছে, যে পাপী নহে’ গানের সঙ্গে তিনি অনবদ্য অভিনয় করেন। বেলাল আহমেদের ‘নয়নের আলো’তে ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি/এই চোখ দুটো তুমি খেয়ো না’— গানটিতে আমরা জাফর ইকবালকে পাই। এখনও বাংলার মানুষের কাছে অনেক প্রিয় এ গান। একই চলচ্চিত্রে এণ্ড্রুকিশোর-সামিনা চৌধুরীর কণ্ঠে ‘আমার বুকের মধ্যিখানে/মন যেখানে হৃদয় সেখানে’ গানে ঠোঁট মেলান জাফর ইকবাল ও কাজরী। এ গানটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। নয়নের আলো চলচ্চিত্রের আরও দুটি গানে কণ্ঠ দেন এন্ড্রুকিশোর ও কাজরী। ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান/সেদিন থেকে গানই জীবন, গানই আমার প্রাণ’ ও ‘এই আছি এই নাই/বলো এই আছি এই নাই/দুদিন পরে কেউবা ধূলো/কেউবা হবো ছাই।’ এ দুটি গানও বেশ শ্রোতাপ্রিয় হয়।
দারাশিকো পরিচালিত ‘ফকির মজনু শাহ’ ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি জাফর ইকবাল গানও গেয়েছিলেন। তার গাওয়া গানগুলো সে সময় বেশ জনপ্রিয় হয়।সে সময় তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে ফিরত জাফর ইকবালের গাওয়া গানগুলো।
বিশিষ্ট সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী জাফর ইকবালের নায়ক ও কণ্ঠশিল্পী হয়ে উঠার প্রসঙ্গটি খুবই চমৎকারভাবে স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘জাফর ইকবাল ‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী’ এই গানটি গেয়েছিলেন। সেটার কিন্তু দারুণ একটা ইতিহাস আছে। ও সিনেমায় নামার আগে মূলত একজন গিটারবাদক ছিল। আমাদের সাথে গিটার বাজাত। তাদের একটা ব্যান্ড ছিল। ওরা প্রতি শনি ও রবিবার শেরাটন হোটেলে বাজাত। তারপর আমাদের ইন্দিরা রোডের স্টুডিওতে একদিন রবিন ঘোষের সুরে ‘পিচঢালা এই পথটাকে ভালোবেসেছি’ গানটিতে গিটার বাজাতে আসে। ওই বিখ্যাত গানের গিটারের পিসটা কিন্তু নায়ক জাফর ইকবালের বাজানো। তখন পরিচালক এহতেশাম জাফর ইকবালকে দেখে বলেন, ‘তোকে আমি ছবিতে নায়ক হিসেবে নেব।’ পরে উনি নায়িকা শাবানার সঙ্গে একটি ছবিতে জাফর ইকবালকে সত্যি সত্যি কাস্ট করেন। ওর বড় ভাই সংগীত পরিচালক আনোয়ার পারভেজের সাথে যেহেতু আমি কাজ করতাম, সেই সূত্রে আমাকে খুব মানত সে। তো আমি একদিন তাকে বললাম, ‘চলো তোমার জন্য টেলিভিশনে একটা গান করি।’ কিন্তু ও খুব ভয়ে ভয়ে ছিল। তাকে দিয়ে প্রথম গান করি, ‘শেষ করো না, শুরুতেই খেলা, না ভেঙ না …।’ এরপর করলাম ‘সুখে থাক, ও আমার নন্দিনী হয়ে কারো ঘরনি’ এই গান। তারপর ‘যেভাবেই আছি, বেঁচে তো আছি, জীবন আর মরণের কাছাকাছি’সহ ওকে দিয়ে আরও পাঁচ-ছয়টা গান করি। পরে নায়ক রাজ্জাক ভাইয়ের পরিচালনায় ‘বদনাম’ ছবিতে আমারই লেখা আমারই সুরে ‘হয় যদি বদনাম হোক আরো, আমি তো এখন আর নই কারো/ অন্ধগলির এই যে আঁধার, বন্ধু হলো আজ আমার’ গানটি গায় জাফর ইকবাল। মূলত এই সিনেমার সংগীত পরিচালক ছিলেন আনোয়ার পারভেজ। কিন্তু সেদিন তিনি ঢাকায় ছিলেন না। তাই আমিই সেদিন এই স্মরণীয় কাজটি করি।’’
জাফর ইকবালের লিপে (ঠোঁটে) ‘আশীর্বাদ’ চলচ্চিত্রের ‘চাঁদের সাথে আমি দিবো না তোমার তুলনা’, ‘ওগো বিদেশিনী’ তে ‘ওগো বিদেশিনী তোমার চেরি ফুল নাও’ , ‘প্রেমিক’ চলচ্চিত্রে ‘‘ফুল ফোটা ফাগুনে, মন পোড়া আগুনে’’, ‘ভাইবন্ধু’র ‘অন্ধ হয়ে থেকো না কেউ’ ও ‘ভেঙ্গেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘যোগাযোগ’ চলচ্চিত্রের
‘সকালটা যে তোমার বিকেলটা যে আমার’, ‘প্রতিরোধ’ চলচ্চিত্রের ‘শোন সোমা একটু দাঁড়াও, কথা শুনে যাও’ , ‘উছিলা’ চলচ্চিত্রে ‘‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো, সে কথা তুমি যদি জানতে’’ ,’বন্ধু আমার’ চলচ্চিত্রে ‘একটাই কথা আছে বাংলাতে’ দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।
জাফর ইকবাল আশির দশকে নিজের কণ্ঠে গাওয়া গানগুলো নিয়ে ‘কেন তুমি কাঁদালে’ শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেন।
ববিতা-জাফর ইকবালের প্রেম?
নায়িকা কে সেটা বড় কথা নয়, জাফর ইকবাল অভিনয়টা করতে জানতেন প্রাণখুলে। তাই যখন যে নায়িকার সঙ্গে জুটি বেধেছেন, তার সঙ্গে মানিয়ে গেছে জাফর ইকবালকে। কিন্তু দর্শকরা কারো না কারো সঙ্গে নায়ককে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। সেদিক দিয়ে ববিতার সঙ্গে জাফর ইকবালের জুটিটি সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায়। শুধু এখানেই থেমে থাকেনি তাদের পর্দার প্রেম। বাস্তবের মাটিকেও স্পর্শ করিয়ে ছাড়িয়েছে ভক্তরা [সেটা শুধু ভক্তদের কল্পনায়, নাকি আদতে দুজনের মধ্যে কিছু ছিল তা অবশ্য ববিতা-জাফর ইকবাল কেউ-ই কখনো স্পষ্ট করেননি]। একসময় জাফর ইকবাল ও ববিতার সম্পর্ক নিয়ে দর্শক ও ভক্তদের মাঝে বেশ গুঞ্জন উঠে। ১৯৮৯ সালে আজহারুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘অবুঝ হৃদয়’ ছবিতে জাফর ইকবাল ও ববিতার রোমান্টিক দৃশ্যগুলো সেই গুঞ্জনকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ‘অবুঝ হৃদয়’ চলচ্চিত্রে ববিতা ও চম্পা দুই বোনের বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন জাফর ইকবাল। দুজনের বিপরীতেই দারুণ মানিয়ে নেন নিজেকে। ত্রিভূজ প্রেমের চলচ্চিত্র ‘অবুঝ হৃদয়’ দারুণব্যবসা সফল হয়।
একই বছর বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর (রজত জয়ন্তী) উদযাপন বিশেষ অনুষ্ঠানে জাফর ইকবাল গেয়েছিলেন ‘এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছে’। জাফর ইকবালের এই গানটি প্রচারের পর ভক্তরা মনে করেন নায়িকা ববিতার সাথে বিচ্ছেদের কারণে তিনি ওই গানটি গেয়েছেন। জাফর ইকবালকে নিয়ে ভক্ত-দর্শকদের আলোচনা, সমালোচনা ও আগ্রহের কোনো কমতি ছিল না।
সিনেমার গল্পের মতোই মৃত্যু
জাফর ইকবাল ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যারবেশিরভাগইছিল ব্যবসা সফল।ববিতার সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল দর্শকনন্দিত। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ববিতার বিপরীতে ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ববিতার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায়হতাশ হয়েই জাফর ইকবালঅসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও জোর গুঞ্জন উঠে। জাফর ইকবাল অভিনীত ‘ভাই বন্ধু’, ‘চোরের বউ’, ‘অবদান’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘একই অঙ্গে এত রূপ’, ‘ফকির মজনুশাহ’, ‘দিনের পর দিন’, ‘বেদ্বীন’, ‘অংশীদার’, ‘মেঘবিজলী বাদল’, ‘সাত রাজার ধন’, ‘আশীর্বাদ’, ‘অপমান’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘নয়নের আলো’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘প্রেমিক’, ‘নবাব’, ‘প্রতিরোধ’, ‘ফুলের মালা’, ‘সিআইডি’, ‘মর্যাদা’ ,‘সন্ধি’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র সুপারহিট হয়।
নায়ক জাফর ইকবাল সনিয়া নামে একজনকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান ছিল। কথিত আছে জাফর ইকবাল ববিতার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি অতিরিক্ত মদ্য পান শুরু করেন। অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের কারণে তার শরীরে বাসা বাঁধে মরণব্যাধি ক্যান্সার। জাফর ইকবালের হার্ট ও কিডনিও নষ্ট হয়ে যায়।
জাফর ইকবালের জীবদ্দশায় সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘লক্ষ্মীর সংসার’। শাবানা ও জসীম অভিনীত এই চলচ্চিত্রে একটি দৃশ্যে— জাফর ইকবাল গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে প্রথম আসেন। এরপর ঢাকার আজিমপুর যাওয়ার রাস্তা খুঁজতে থাকেন। এটি মুক্তির এক মাসের মাথায় ১৯৯২ সালের ২৭ এপ্রিল জাফর ইকবাল মৃত্যুবরণ করেন এবং আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। ‘লক্ষ্মীর সংসার’ চলচ্চিত্রের ‘ভাই আজিমপুর যাবো কিভাবে’— এই সংলাপটি জাফর ইকবাল ভক্তদের উথাল-পাতাল কাঁদিয়েছে। জাফর ইকবালের ভক্তরা এখনও তাকে ভালোবাসে। তিনি তার গাওয়া গান ও চলচ্চিত্রে ভক্তদের ভালোবাসায় ভাস্বর।
লেখাটি দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমে পূর্ব প্রকাশিত।