জিৎ ও শাকিব খানের গানের হাস্যকর তুলনা
কয়েক দিন ধরে বাংলাদশের সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত একটি খবর হলো- দুই বাংলায় শীর্ষে শাকিবের ‘সুরমা সুরমা’। যার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের নায়কের চেয়ে এগিয়ে ঢাকার নায়ক। ইউটিউব ভিডিও তুলনা করে এই সিদ্ধান্ত টানা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শাকিবের চেয়ে জিতই এগিয়ে।
ঈদুল ফিতরে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে জিৎ প্রযোজিত ও অভিনীত ‘চেঙ্গিজ’। ছবিটি হিন্দি ভাষায়ও মুক্তি পেয়েছে।
দুই সিনেমার বক্স অফিস কালেকশন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। ঈদের বাজারে সেরা হলেও ‘লিডার’-এর বাজেট ও আয় নিয়ে লুকোচুরি রয়েছে। যদিও হিট বলে প্রচার করছে নির্মাতা ও পিআর গ্রুপগুলো। অন্যদিকে ‘চেঙ্গিজ’কে জিৎ সরাসরি সুপারহিট বললেও কোনো তথ্য দেননি। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম বলছে এই অঙ্ক সাড়ে চার কোটি রুপির মতো, এ সিনেমার বিচারে যা কোনোভাবেই সুপারহিট নয়।
এবার আসা যাক, শাকিব খানের এগিয়ে থাকা প্রসঙ্গে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ভাষাগত দিক দিয়ে বিবেচনা করলে বাংলা ভাষায় মুক্তি পাওয়া দুই সিনেমার গানের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে শাকিব খানের লিডার আমি বাংলাদেশ সিনেমার গান ‘সুরমা সুরমা’। যদি সামগ্রিক ভারতবর্ষের গান হিসেবে ধরা হয় তাহলে এভাবে বিশ্লেষণ করা যাবে- অরিজিত সিংয়ের গাওয়া ‘এভাবে কে ডাকে’ গানটি স্ট্রিমিং হয়েছে ৩০ লাখ বার। হিন্দি ভার্সনে গানটি স্ট্রিমিং হয়েছে ২০ লাখ বার।
এরপর বলা হচ্ছে, যেহেতু এখানে ভাষাগত বিষয়ে কথা হচ্ছে, কথা হচ্ছে দুই বাংলার। সেদিক থেকে উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী – অরিজিত সিংয়ের গাওয়া ‘এভাবে কে ডাকে’ গানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে জাহিদ আকবরের লেখা এবং নাভেদ পারভেজের সুর ও সংগীতে ইমরান-কোনালের গাওয়া ‘সুরমা সুরমা’। বাংলা ভাষায় ‘এভাবে কে ডাকে’ স্ট্রিমিং হয়েছে ৩০ লাখ বার আর ‘সুরমা সুরমা’ স্ট্রিমিং হয়েছে ৪০ লাখ বার।
সঙ্গে দাবি করা হয়, ‘সুরমা সুরমা’ মুক্তি পায় ১৯ এপ্রিল আর ‘এভাবে কে ডাকে’ মুক্তি পায় ৮ এপ্রিল। এদিক থেকেও এগিয়ে বাংলাদেশের শাকিবের সিনেমার গানটি।
এমন দাবির সঙ্গে গীতিকার ও গায়কের মন্তব্য জুড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটি অনাবশ্যক তুলনা বা প্রচারণার কৌশল ছাড়া কিছুই নয়।
ছোট একটা ডেটা শেয়ার করলে বিষয়টা বোঝা যায়। বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছয় কোটি ৬৭ লাখের বেশি। অন্যদিকে ভারতীয় বাংলাভাষী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ১০ কোটির মতো, আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি। এ অনুযায়ী জনসংখ্যার হিসাব-নিকাশে পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। একই সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের সক্ষমতা বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক। সেই হিসেবে ইউটিউবে ‘সুরমা সুরমা’ গানের চেয়ে এগিয়ে আছে ‘এভাবে কে ডাকে’ (হিন্দি সংস্করণ ছাড়া)। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কলকাতার সিনেমা নিয়ে বাংলাদেশের দর্শক ও সংবাদমাধ্যমের যে পরিমাণ আগ্রহ ঢাকার সিনেমা নিয়ে তার এক ভাগও নেই কলকাতায়। জিতের গানের ভোক্তাদের বড় একটি অংশ যে বাংলাদেশের নয়; সেটা কে বলবে।
শাকিব ঢাকার বড় তারকা ছিলেন, ভালো কনটেন্ট দিলে সামনেও তাই থাকবেন। কিন্তু যতই হাস্যকর তথ্য দেয়া হোক, তাকে মাপের চেয়ে বড় দেখানো যাবে না।
সঙ্গে এ কথা বলা যায়, ঈদের সিনেমা ঘিরে যে প্রচারণা তা পুরো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ক্ষতিকর। কোনো সিনেমার কয়েক শো হাউসফুল যাওয়াকে হিট-সুপারহিট বলে পিঠ চাপড়ানো ও তথ্য ছাড়া উপরে তুলে দেয়া অশনিসংকেত ছাড়া কিছুই নয়।