জীবন-মৃত্যুর দাঁড়ি টানা চলচ্চিত্র – চাকা
জীবন- মৃত্যুর খেলা খুব কাছ থেকে অনেক মানুষ দেখে। কিন্তু নশ্বর জীবনটা যখন ফুরিয়ে যায় সময়ের স্রোতে, তখন এরপরের জীবনটার গল্প কেমন হয়? সবার গন্তব্য কি একই রকম হয় নাকি সবার মৃত্যু একভাবে হয়? কেউ কি কাঁদে সেই মৃত মানুষটির জন্যে, যে কিছুক্ষণ আগেও এই পৃথিবীর আলো-বাতাসে বেঁচে ছিল। মানুষের মৃতুর পরে মানুষ কি রকম অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে পারে তার এক মর্মান্তিক গল্প এঁকেছেন লেখক সেলিম আল-দীন আর তার সেই লেখা নিয়েই খ্যাতিমান পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র “চাকা” ।
প্রতিটি মানুষই একদিন মৃত্যুর স্বাদ নেয়, সেই স্বাদ নেওয়া থেকে কেউবিরত থাকতে পারেনা। মানুষের জীবন কত বিচিত্র, বেঁচে থাকতে কষ্ট আবার মরে গিয়েও কষ্ট। বেঁচে থাকতে মানুষ অনেক কিছুই ভাবে কিন্তু মৃত্যুর পর তার জীবনটা কি রকম হয়? সে কি আনন্দে থাকে নাকি কষ্টে থাকে নাকি দুইটার মাঝখানেই তার অবস্থান। এই কথার উত্তর হয়তআমরা কেউই জানিনা। এক একেকজন আমরা এর উত্তর এক একেকভাবে দিতে প্রস্তুত হব, হয়ত এটাই স্বাভাবিক। আসলে আমরা সবশেষে মানুষতো, আমাদের প্রত্যেকের মাঝেই এক মৃত্যু চিন্তা খেলা করে।কিন্তু এই আমি যখন মারা যাবো এই আমার জীবনটা কেমন হবে? সাদা নাকি কালো? আমার কবর হবে নাকি হবেনা? এইরকম অনেক প্রশ্নইতো আমাদের মানুষের মনে ঘুরপাক খায়। কিন্তু এর শেষ কোথায়?
একজন মানুষের লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার পরিচয় বের করার আপ্রাণ চেষ্টায় রয়েছে গাড়োয়ান। অনেক গ্রাম ঘুরা হয় এই লাশটি নিয়ে। কিন্তু কোথাও লাশটির আত্বীয়-স্বজন বা পরিচিত কারো সন্ধান পাওয়া যায় না। তাহলে লাশটির কি হবে। তাহলে কি এই লাশটি বেওয়ারিশ লাশ হবে, লাশটির কি কবর হবেনা? সবশেষে, গাড়োয়ান ও তার সহযোগী লাশটি নিজ দায়িত্বে দাফন করার দায়িত্ব নেয়। আসলে মৃত্যুর পর আমাদের মৃত্যুর পরের জীবন কি রকম হবে কার, তা আমরা কেউ বলতে পারিনা। ছবির মূল গল্প এখানেই, আর এভাবেই ছবি এগিয়ে যেতে থাকে।
সবকিছুর শেষ আছে, কিন্তু মৃত্যু ? যেখানে একটা জীবনের সমাপ্তি মানেই ধরে নেয়া হয় সব শেষ, সেখানেও কিন্তু একটা নতুন শুরু হয়ে যেতে পারে। প্রতিটা মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিক না। আবার হলেও সুন্দরভাবে তার গন্তব্য হয়না কবরে। আসলে পৃথিবীর মানুষের ঘূর্ণায়মান জীবনের শেষেও যে ঘূর্ণায়মান মৃত্যুময় সময় অতিবাহিত হতে পারে। প্রতিটা লাশেরইতো গন্তব্য কবর হয়না। আবার কত মানুষইতো প্রতিদিন মারা যায়, যার জন্যে হয়ত কেউ কাঁদেনা। বেয়ারিশ হয়ে হয়ত গন্তব্য হয় সেই মৃত মানুষ অথবা লাশটার স্থান কবরে। হয়ত আরেকটা নতুন কিছুর শুরু। জীবন শেষ ,কিন্তু মৃত্যুর পরের সময় শুরু। সবকিছুরই শুরু হয়, হয়ত সবকিছুরই শেষ আছে ।
গন্তব্যহীন পথ তবু গন্তব্যের শুরু।
চাকা ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। খ্যাতিমান পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম এর পরিচালনায় এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন – আমিরুল ইসলাম এবং আরও অনেকে। গ্রামীণ জীবনের প্রেক্ষাপটের ওপর আবর্তিত এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয় খ্যাতিমান লেখক ও নাট্যকার সেলিম আল দীনের লেখা “চাকা” গল্প অবলম্বনে।
মোরশেদুল ইসলামের দুখাই দেখেছিলাম টেলিভিশনে, বাচ্চাবেলায়। চাকা-ও টেলিভিশনে দেখা। বাচ্চাবেলায় দেখা বলে দুখাই আর চাকা- এ দুয়ের মাঝে কোনটা সেরা আমি বিচার করতে পারি না, তবে দুখাই বাদে মোরশেদুল ইসলামের বাকী সব চলচ্চিত্রের মাঝে যে চাকা সেরা – সেটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
নাইস রিভিউ নাজমুল হাসান মজুমদার – কিপিটাপ 🙂