জয়-বিজয় দুই ভাইয়ের প্রথম ও শেষ ছবি
জীবনে একদিনই তিন-তিনটি ছবি দেখে রাতে ঘরে না ফেরার ঘটনা একবারই ঘটেছে। সেই একটি ঘটনার স্মৃতি এই ছবিটি। ১৯৯৬ সালে তিন বন্ধু মিলে সিলেটের দিলশাদ সিনেমা হলে দিনের সর্বশেষ ছবি ‘’অপরাধ জগতের রাজা’’ রাত ৯টার শোতে দেখেছিলাম। ছবি শেষ করে সেই রাতে আমরা হলের পাশে বিলাস হোটেলে ছিলাম। সেদিন দুপুরে বের হয়েছিলাম ৪ বন্ধু। বাসায় বলে গিয়েছিলাম এক বন্ধুর বাড়ীতে যাচ্ছি কাল ফিরবো। অথচ আমরা সিলেট শহরেই ছিলাম।
কাকলী সিনেমা হলে দেখলাম ফিরোজ আল মামুন পরিচালিত ও কাঞ্চন চম্পা অভিনীত ‘’বডিগার্ড’’ ছবিটি ,এরপর সন্ধ্যায় দেখলাম ইফতেখার জাহান পরিচালিত নাম ভুলে যাওয়া একটি ছবি যে ছবিতে ড্যানি সিডাক বোবা থাকে আর নায়িকা শাবনুর ছিল সম্ভবত। ছবিটি অর্ধেক দেখে বের হয়ে যাই। সাথের এক বন্ধু বাহিরে থাকতে পারবে না তাই সে বাসায় ফিরে যায় ২য় ছবিটি দেখার পর আর আমরা বাকী তিনজন ফিরে আসি তালতলা এলাকায়। সেখানে বিলাস হোটেলে একটি রুম ভাড়া নিয়ে আমরা পাশের রেস্টুরেন্টে ভাত খেয়ে দিলশাদ সিনেমার বাহিরে অপেক্ষায় থাকি ‘’অপরাধ জগতের রাজা’’ ছবিটি দেখার জন্য। উল্লেখ্য যে সেদিনের সবগুলো ছিল ঈদের ছবি।
এর আগের সপ্তাহে আমরা দিলশাদ সিনেমায় দেখেছিলাম সানী মৌসুমীর ‘’হারানো প্রেম’’ ছবিটি। ‘অপরাধ জগতের রাজা’ ছবিটি ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের বহু ব্যবসা সফল ছবির গুণী নির্মাতা আজমল হুদা মিঠু পরিচালিত যেখানে তাঁর দুইপুত্র জয় ও বিজয় মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন । সেই প্রথম ও শেষ দুইভাইকে এক ছবিতে দেখেছিলাম। পুরো ছবিটা ছিল উত্তেজনায় ঠাঁসা মারমার কাটকাট একটি ছবি। আজকের তামিল ছবিতে আপনারা আজ যা দেখেন এরচেয়েও চমৎকার কিছু। পুরো ছবিটা বিনোদনে ভরপুর অর্থাৎ তিনটি ছবির মাঝে সেদিনের সেরা ছবি ছিল ‘’অপরাধ জগতের রাজা’’ ছবিটি।
ছবিতে জয় বিজয় দুই ভাই মা বাবাকে হারিয়ে রাস্তাঘাটে ঠকর ঠকর খেতে খেতে বড় হয়। দুই ভাইয়ের দারুন বন্ধুত্ব। বড় ভাই বিজয় ছোট ভাই জয়কে পড়ালিখা শিখায়। মাঝে মাঝে দুইভাই মিলে বিভিন্ন অপারেশন করে অর্থাৎ বড়লোকদের টাকা পয়সা কেড়ে নেয়। ছোট ভাই জয় পুলিশের চাকরী পেয়ে যায় আর বড় ভাই অপরাধ জগতেই থেকে যায় । শুরু হয় দুইভাইয়ের দন্ধ। বড় ভাই বিজয় বাবা মায়ের হত্যাকারীদের খুঁজতে থাকে। ছবিতে দুই ভাইয়ের দুটো গান আছে প্রথমটি ছবির প্রথম দিকে বেশ উল্লসিত মুডে আর ২য়টি ছিল স্যাড মুডে। আমার কাছে ২য় গানটি বেশি ভালো লেগেছি যার কথা ছিল সম্ভবত এররকম ‘’ এমনতো সময় হয় ভাই ভাইয়ের শত্রু হয়’’ এই টাইপের ।বড় ভাই বিজয় হয়ে যায় ‘’অপরাধ জগতের রাজা’’ আর ছোট ভাই জয় হয়ে যায় নীতিবান সাহসী পুলিশ অফিসার যে অপরাধ জগতের ডন আপন বড় ভাইকে প্রমানসহ গ্রেফতার করতে মরিয়া। ছবির বড় চমক ছিল খলনায়ক তালিকা যেখানে সেই সময়ের হুমায়ূন ফরিদি ছাড়া বাকী সব সুপারহিট খলনায়ক ছিলেন। রাজীব, আহমেদ শরীফ, এটিএম শামসুজ্জামান, মিজু আহমেদ ও অমল বোস।
ছবিতে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রযোজক পরিচালক আজমল হুদা মিঠু নিজে। পুরো ছবিটা দেখতে গিয়ে কোনদিক দিয়ে আড়াই ঘণ্টা কেটে গেলো আমরা টেরই পেলাম না। হলভর্তি দর্শকদের সাথে আমরাও পর্দার মাঝে বুদ হয়ে ছিলাম। পুরো ছবিতে দুই ভাই জয় বিজয় ও খলনায়কদের রসায়ন ছিল চরম। দর্শকরা বারবার করতালি দিয়ে তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করেছিল। নবাগত ও একেবারে অপরিচিত দুই নতুন মুখ নিয়েও পরিচালক আজমল হুদা মিঠু পুরোপুরি সফল হয়েছিলেন ছবিটির গল্প ও কৌশলী নির্মাণের জন্য। এরকম গল্পের ছবি দর্শক এর আগে দেখে থাকলেও পরিচালক আজমল হুদা মিঠু এমনভাবে তৈরি করেছিলেন যে মনে হবে এই ধরনের গল্প এই প্রথম। পুরো ছবিটা সেদিন দারুন তৃপ্তি দিয়েছিল। সেইরাতে হোটেলে ফিরে আমরা তিনবন্ধু সারারাত শুধু ‘’অপরাধ জগতের রাজা’’ ছবিটি নিয়েই আলোচনা করেছিলাম।