ডিজিটাল বির্তক
এই সময়ের প্রায় ছবির পোস্টারে লেখা খাকে ডিজিটাল চলচ্চিত্র। প্রযুক্তিগত বিষয়টি নিয়ে ইদানিং বেশ বিতর্ক জমেছে। কারণ ডিজিটাল নামে ইতিমধ্যে নির্মিত বেশিরভাগ ছবিই নিম্নমানের এবং খুব কমই ছবি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। একই সাথে যে হারে ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা শুনা সে তুলনায় সিনেমা হলের সংখ্যাও কম।
জাকির হোসেন রাজু’র মতো খ্যাতনামা পরিচালক ভাবছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।তিনি এর কালার ও সাউন্ডের অভিনবত্বে মুগ্ধ।
ডিজিটাল চলচ্চিত্রের এই স্রোতে প্রবীন অনেক নির্মাতা আবার কাজে ফিরছেন। যারা কয়েক বছর ধরে কেবল স্ক্রিপ্ট ঘষা-মাজা করছিলেন, তারা প্রযোজক পাচ্ছেন। যারা এফডিসিতে আড্ডা মেরে সময় কাটাতেন তারা মহরতের মিছিলে যোগ দিচ্ছেন। এর সাথে একদম আনকোড়া নতুনরা তো আছেই।
‘হৃদয়ের কথা’খ্যাত তরুন পরিচালক এস এ হক অলিক এই জোয়ারকে ভালো চোখে দেখছেন না। তার মতে গোড়ায় গণ্ডগোল রয়ে গেছে। ভালো ক্যামেরা ব্যবহার হচ্ছেনা। ভালো শিল্পী নেয়া হচ্ছেনা। গল্পের ঠিক নেই। মেকিংয়ের ঠিক নেই। কোনমতে বানিয়ে ট্যাগ লাগিয় দিচ্ছে ‘ডিজিটাল ছবি’। দর্শক এই জিনিস কতদিন দেখবে তার সন্দেহ আছে।
তিনি মনে করেন, ভালোমানের ক্যামেরায় ফিল্ম বানাতে হবে। ফিল্মের বড় বাজেটেই ছবি হতে হবে। ছবির মার্কেটিং থেকে শুরু করে সব জায়গায় আগের মতোই ব্যয় করতে হবে। ফিল্মের (নেগেটিভ) খরচ বাবত যা বাঁচবে তা ছবির পেছনেই ব্যয় করতে হবে।
‘মোস্ট ওয়েলকাম’র কাহিনীকারও চিত্রপরিচালক অনন্য মামুন মনে করেন, ডিজিটাল ছবি হচ্ছে মাথাব্যথায় মাথা কেটে ফেলার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ৩৫ মিলিমিটারে খরচ পোষাচ্ছে না বলে ‘ডিজিটাল ক্যামেরা হাতে সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ফিল্মকে বাঁচাতে।’ মামুনবলেন, ‘এই যুদ্ধের ফল হবে ভয়াবহ। ডিজিটাল পদ্ধতি হচ্ছে এগিয়ে যাওয়া। আর এখানে এগিয়ে যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ বলেই ডিজিটাল ছবি বানাতে সবাই মরিয়া। ডিজিটাল ছবি সম্পর্কে অজ্ঞ পরিচালকরা ইডিজিটাল ছবি নিয়ে লাফালফি করেন।’
ছবির নির্মাণে কোনো ধরনের আধুনিকতা না এনেই মাধ্যম নিয়ে কিছু পরিচালক খুব সিরিয়াস। ডিজিটাল ছবি নির্মাণ শুরু হলে যেখানে আশা করা হয়ে ছিল বাংলা ছবি রগল্পে, অভিনয়ে, নির্মাণে, প্রচারে পরিবর্তন আসবে -তার কিছুই বাস্তবে ঘটেনি। এখনও পুরনো ছকেই ছবি বানাচ্ছেন নির্মাতারা।
পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের মতে, এই ছবিগুলো বাংলা চলচ্চিত্রকে কয়েকযুগ পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতারিত দর্শক ভালো ছবিও আগামীতে দেখতে আসবেনা বলে তার আশঙ্কা।
এই বিতর্ক থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, ক্যামেরার পরিবর্তন কোন ফল দিবে না, যদি না গল্পে ও নির্মাণে কোন চমৎকারিত্ব না থাকে। পোস্টারে ‘ডিজিটাল ছবি’ শব্দটি একসময় দর্শকের কাছে বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে। কারণ ডিজিটাল ছবি বলে যা প্রদর্শিত হচ্ছে তা ডিজিটাল ছবিতো নয়ই, আদৌ ছবি তা নিয়ে বির্তক আছে। এই সাখে দরকার আরো অনেক ডিজিটালাইজ সিনেমা হলে। যেখানে সরকার এগিয়ে আসবে বলে সবাই আশা করছে।
একটা আশার কথা হলো, এফডিসি ডিজিটাল চলচ্চিত্র নিয়ে ইতিমধ্যে কর্মশালারও আয়োজন করেছে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন জানাচ্ছে তারা ডিজিটাল সিনেমা হল ও তরুনদের নিয়ে কাজ করবে। দেখা যাক এইসব উদ্যোগ চলচ্চিত্রকে কোথায় নিয়ে যায়।
সুত্র: আমার দেশ