Select Page

ঢালিউডে শরৎ সাহিত্য

ঢালিউডে শরৎ সাহিত্য

ঢালিউডে বিশেষ একটা স্থান জড়িয়ে আছে সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র, যার কারণে সাহিত্যিকরাও পেয়েছে বিশেষ মর্যাদা। তেমনি একজন সাহিত্যিক অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, উনার সাহিত্যকর্ম থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৩টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের পরে উনার সাহিত্যসৃষ্টি থেকেই সবচেয়ে বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে।

উনার সাহিত্যকর্ম নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র বেশিরভাগই পেয়েছে কালজয়ী চলচ্চিত্রর খেতাব,শুধুমাত্র আশির দশকেই উনার সাহিত্যকর্ম থেকেই মোট ৯টি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়, যা যেকোন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিরল ঘটনা, আজ এই অমর কথাশিল্পী শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১৪২তম জন্মবার্ষিকী, জন্মদিনে উনার আত্মার শান্তি কামনা করি। উনার সাহিত্যকর্ম থেকে নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে এই  বিশেষ আয়োজন নিয়ে রইলো শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৯৮২ সালে শরৎ সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দেবদাস’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন বুলবুল আহমেদ। এছাড়া অভিনয়ে ছিলেন কবরী, আনোয়ারা, রহমান, গোলাম মুস্তফাসহ আরো অনেকে। ছবিটি সেই সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, বুলবুল আহমেদ খ্যাত হন বাংলার দেবদাস নামে, কোন কোন সমালোচকদের মতে, দেবদাস নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে সুনির্মিত।তবে সেই সময় জুরিবোর্ড ভারতীয় রিমেকের অজুহাতে ছবিটিকে জাতীয় পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হয়।

পরবর্তীতে একই পরিচালক ২০১৩ সালে শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও মৌসুমী কেনিয়ে ছবিটি পুনঃনির্মাণ করেন, তবে ছবিটি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরন করতে ব্যর্থ হয়। জুরি বোর্ডের রায়ে ছবিটি দুটি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন, পুরস্কৃতরা হলেন মৌসুমী (সেরা অভিনেত্রী) ও রুনা লায়লা-সাবিনা ইয়াসমিন(সেরা গায়িকা)।

১৯৮৩ সালে শরতের প্রথম উপন্যাস ‘কাশীনাথ’ অবলম্বনে আমজাদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় সিনেমা ‘বড় বাড়ির মেয়ে’। অভিনয় করেছিলেন ববিতা, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, প্রবীর মিত্রসহ আরো অনেকে।

১৯৮৪ সালে চাষী নজরুল ইসলাম আলোচিত উপন্যাস ‘চন্দ্রনাথ’ অবলম্বনে একই শিরোনামে ছবি  নির্মাণ করেন। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক, এছাড়া অভিনয় করেন দোয়েল, সুচন্দা, গোলাম মুস্তফা, সিরাজুল ইসলামসহ অনেকে, গান গুলোও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ছবিটি মোট ৫টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়, রাজ্জাক পান সেরা অভিনেতার পুরস্কার, এছাড়া সিরাজুল ইসলাম (সেরা সহ-অভিনেতা), মো. রফিকুজ্জামান (সেরা গীতিকার), খন্দকার নুরুল আলম (সেরা সংগীত পরিচালক), সাবিনা ইয়াসমিন (সেরা গায়িকা) পুরস্কৃত হন।

১৯৮৫ সালে শহিদুল আমিন নির্মাণ করেন ‘রামের সুমতি’, অভিনয়ে ছিলেন ববিতা, প্রবীর মিত্র, সুচন্দা, জয়সহ আরো অনেকে। এই ছবির জন্য ববিতা (সেরা অভিনেত্রী) ও জয় (সেরা শিশুশিল্পী) জাতীয় পুরস্কার পান। একই বছর রাজ্জাক উনার প্রহসন ‘বৈকুন্ঠের উইল’ অবলম্বনে নির্মাণ করেন ছবি ‘সৎ ভাই’, অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, আলীরাজ, নূতন, মিনু রহমানসহ অনেকে, ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে নায়করাজই ১৯৯৯ সালে ‘সন্তান যখন শত্রু’ নামে পুনঃনির্মাণ করেন, অভিনয় করেন বাপ্পারাজ, ফেরদৌস, ডলি জহুর, কাজল, পূর্ণিমা ও রাজ্জাক।

১৯৮৬ সালে দর্শকদের সামনে চাষী নজরুল ইসলাম আবার হাজির হলেন শরৎ সাহিত্য নিয়ে, এইবার তিনি নির্মাণ করলেন আলোচিত উপন্যাস ‘শুভদা’ অবলম্বনে। একই শিরোনামে নির্মিত এই ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন আনোয়ারা, এছাড়া অভিনয় করেন রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ, জিনাত, গোলাম মুস্তফাসহ অনেকে। ব্যাপক প্রশংসিত এই ছবিটি রেকর্ডসংখ্যক সর্বোচ্চ ১২টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে— সেরা চলচ্চিত্র, চাষী নজরুল ইসলাম (সেরা পরিচালক ও সংলাপ রচয়িতা), গোলাম মুস্তফা (সেরা অভিনেতা), আনোয়ারা(সেরা অভিনেত্রী), জিনাত (সেরা সহ-অভিনেত্রী), খন্দকার নরুল আলম (সেরা সংগীত পরিচালক), মো. রফিকুজ্জামান (সেরা গীতিকার), সুবীর নন্দী (সেরা গায়ক), নীলুফার ইয়াসমিন (সেরা গায়িকা), সাধন রায় (সেরা চিত্রগ্রাহক), আব্দুস সবুর (সেরা শিল্প নির্দেশক)। একই বছর আলমগীর কবির নির্মাণ করেন ‘পরিনীতা’, ছবিটি ৪টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়— আলমগীর কবির (সেরা চিত্রনাট্যকার), ইলিয়াস কাঞ্চন (সেরা অভিনেতা), অঞ্জনা (সেরা অভিনেত্রী) ও আশীষ কুমার লৌহ (সেরা সহ-অভিনেতা)।

১৯৮৭ সালে দেবদাস খ্যাত বুলবুল আহমেদ হয়ে এলেন উপমহাদেশের উপন্যাসের সেরা নায়ক ‘শ্রীকান্ত’ হয়ে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বহুল আলোচিত উপন্যাস  ‘শ্রীকান্ত’ অবলম্বনে ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ নির্মাণ করেন বুলবুল আহমেদ, তিনি  অভিনয় ও  করেছিলেন, এছাড়া অভিনয় করেন শাবানা, রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেন। ব্যাপক জনপ্রিয় এই ছবিটি সেরা চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কার পায়, এছাড়া আবুল খায়ের (সেরা সহ-অভিনেতা) ও সাবিনা ইয়াসমিন (সেরা গায়িকা) পুরস্কৃত হন। একই বছর উনার লেখা ‘স্বামী’ গল্প নিয়ে নূর উল আলম শাবানা, বুলবুল আহমেদকে নির্মাণ করেন ‘স্বামী’।

১৯৮৮ সালে মহিউদ্দিন ফারুক নির্মাণ করেন ‘বিরাজ বউ’, দারুণ জনপ্রিয় এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ববিতা, ফারুক, রেহানা জলি, রাজিবসহ অনেকে।এই ছবিতে অভিনয় করে সেরা সহ-অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার পান সুবর্ণা শিরিন।

অনেক বছর পর ২০০৬ সালে মুশফিকুর রহমান গুলজার নির্মাণ করেন ‘বিন্দুর ছেলে’ অভিনয় করেছিলেন মৌসুমী, ফেরদৌস, দিতি, হুমায়ুন ফরিদী।

বর্তমানে শরতের আলোচিত চরিত্রগুলো নিয়ে ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন আরিফুর জামান। ছবিতে শরৎচন্দ্র চরিত্রে অভিনয় করছেন গুণী অভিনেতা গাজী রাকায়েত। পাবর্তী চরিত্রে অভিনয় করছেন পপি, দেবদাসের চরিত্রে ফেরদৌস। এছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে আছেন মৌসুমী হামিদ, তমা মির্জা, তামান্না সম্পা প্রমুখ।

শরৎ সাহিত্য নিয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ হলেও এখনো উনার কিছু আলোচিত সাহিত্যকর্ম নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি, বিশেষ করে ব্যক্তিগতভাবে চাইবো ‘গৃহদাহ’ উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হউক, প্রত্যাশা রইলো আমাদের পরিচালকরা এই ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেবেন।


Leave a reply