
তাণ্ডব: মিশন ৫৩ কোটির ফিজিবিলিটি অ্যানালিসিস!
তাণ্ডবে এখনো পর্যন্ত ক্যারি ফরোয়ার্ড হয়েছে সিয়ামের লুক ও প্রেজেন্স, মুখোশ আর শাকিব খানের হাতের মুদ্রা। এ দুটো কি যথেষ্ট শক্তিশালী? জয়া আহসান ফোনে মাকে বলছে ফুঁ দিয়ে দিতে, এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ডায়লগ ‘মুরুব্বি মুরুব্বি’, শাকিব খানের মুখ দিয়ে বলা না বলাতে কিছু যায় আসে না, কারণ এ ডায়লগের লাইফটাইম অলরেডি সমাপ্ত …
[সতর্কতা: স্পয়লার সংক্রান্ত রিজার্ভেশন থাকলে ফিল্ম বিষয়ক আমার লেখালিখি পড়তে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করছি]
শাকিব খান বর্তমানে যে হাইটে উড্ডয়ন করছেন তাতে আগামী ৬-৭টা ঈদে তার নতুন ফিল্ম রিলিজ হলে ব্যবসায়িক সাফল্য পাবে কিনা চিন্তাটা অনেকাংশেই অবান্তর, কত কোটি আয় করবে সে সংক্রান্ত অনুমানই হতে পারে মূখ্য আলোচনা।

গুগলসূত্রে পাওয়া ডেটা থেকে সর্বশেষ কয়েক ঈদের ফিল্মগুলোর টিকিট বিক্রি বাবদ আয় দেখা যাক— প্রিয়তমা ৪৪ কোটি, রাজকুমার ২৬ কোটি, দরদ ৫-৬ কোটি (আনুমানিক), তুফান ৫৬ কোটি ও বরবাদ ৭৫ কোটি।
তাণ্ডব কি বরবাদের আয় ছাড়িয়ে যাবে, নাকি প্রিয়তমার আশপাশে থাকবে, নাকি হবে রাজকুমার গোত্রীয়, নাকি তুফানের সাথে ফাইট দিবে— আমাদের জিজ্ঞাসা হতে পারে এই ফোকালিটিকে তাক করে।
প্রিয়তমা ও রাজকুমারকে সরিয়ে রাখলে তাণ্ডবসহ চারটি ফিল্মই তেলুগু ফর্মুলায় নির্মিত। আমরা যদি তাণ্ডবের ইনকাম প্রজেকশন করি, ধরে নিলাম ৫৩ কোটি, সেটি অর্জনের ফিজিবিলিটি ভাবতে হলে, ইতোপূর্বে ৫৬ এবং ৭৫ কোটি মাইলস্টোন অ্যাচিভ করা ফিল্মগুলোর সাথে প্যাটার্ন ম্যাচিং ট্রাই করা যেতে পারে—
১. মিউজিক ট্র্যাক: ফিল্ম রিলিজের আগে প্রমোশনের অংশ হিসেবেই ইউটিউবে গান ছাড়া হয়। তুফানের ‘লাগে উড়াধুরা’ গানের ভিউ ২৮৮ মিলিয়ন, ‘দুষ্টু কোকিল’ ১৩১ মিলিয়ন, এমনকি টাইটেল ট্র্যাকও ৫.৫ মিলিয়ন হয়ে গেছে। বরবাদের ‘চাঁদ মামা’ ভিউ ৩৩ মিলিয়ন, ‘প্রতি নিশ্বাসে’ ৩১ মিলিয়ন ও ‘দ্বিধা’ ১০ মিলিয়ন! লাগে উড়াধুরা গ্লোবাল ট্রেন্ডিং লিস্টে স্থান পেয়েছিল। তাণ্ডবে গান মাত্র দুটো, কয়েকটা র্যাপ ধরনের ট্র্যাক। ৭ দিন শেষে ‘লিচু বাগানে’র ভিউ ১০ মিলিয়ন। সংখ্যাটা ইমপ্রেসিভ, তবে ফিল্ম রিলিজ হওয়ার ৩ দিন পরেও যেহেতু ভিউ ১০ মিলিয়ন পাড় করেনি, এই গান ক্রেজিনেস তৈরি করতে পারবে না। টাইটেল ট্র্যাকের ভিউ ১.৬ মিলিয়ন মাত্র! ফলে গানের মাধ্যমে অ্যাপিল তৈরির যে ফর্মুলা, তাণ্ডব সেখানে অমোচনীয় ব্যবধানে পিছিয়ে।
২. শাকিবিজম: তুফানের স্টোরিলাইনে শাকিবকে পাওয়া গেছে দ্বৈত চরিত্রে। ফলে স্ক্রিন প্রেজেন্সে শাকিবকে অনেকভাবে ব্যবহার করা গেছে। বরবাদে শাকিবের লুক দিয়ে মাত করার প্রয়াস ছিল। একশন ছিল জমজমাট। তাণ্ডবে শাকিবিজমের সিগনেচার আইটেম মেটালিক ভোকাল টোন, হাত দিয়ে ওয়েভ তৈরি, মুখোশ পরা, একটা মাঝারি মানের অ্যাকশন, আর অন্তিম দৃশ্যে মধ্যাঙ্গুলি দেখানো। বছর কয়েক আগে আফরান নিশো সুড়ঙ্গের প্রচারণায় একটা মন্তব্য করেছিলেন, যেটিকে শাকিব খানকে খোঁচা মারা হিসেবে ইন্টারপ্রেট করেছিল অনলাইন শাকিবিয়ানরা। এরপর থেকেই শাকিব বনাম নিশো রিয়েল লাইফ ক্ল্যাশ তৈরি করেছে দুইয়ের ভক্তগোষ্ঠী। ক্যামিও প্রেজেন্সে মাসুদরূপী নিশো যখন মিখাইলরূপী শাকিবকে চ্যালেঞ্জ জানায়, এবং পরের ফ্রেমেই শাকিবকে মধ্যাঙ্গুলি প্রদর্শন করতে দেখি— দৃশ্যটার ভিন্ন ইন্টারপ্রেটেশন তৈরি হয়। সামগ্রিকভাবে শাকিবিজম উল্লেখযোগ্যভাবে অনুপস্থিত।

৩. ইনটেনসিভ মুহূর্ত: দর্শকের তালি দেয়া, শিটি বাজানোর মতো সিকুয়েন্স-সংলাপ বা এক্সপ্রেসন লাগে যা ক্যারি ফরোয়ার্ডেড হয়। তুফান ও বরবাদে ক্যারি ফরোয়ার্ডেড হয়েছিল যেসব এলিমেন্ট
– এই তুই কিডারে (সালাহউদ্দিন লাভলু, তুফান)
– বিশাল আকৃতির অস্ত্র দিয়ে রুমের সবাইকে হত্যা করা (তুফান)
– পুরা দেশ (তুফান)
– এই জিল্লু মাল দে (বরবাদ)
– চুপ করিয়ে দেয়া (বরবাদ)
– নিতুরে না পাইলে দুনিয়া বরবাদ করতে পারি, নিতুরেও বরবাদ করতে পারি (বরবাদ)
তাণ্ডবে এখনো পর্যন্ত ক্যারি ফরোয়ার্ড হয়েছে সিয়ামের লুক ও প্রেজেন্স, মুখোশ আর শাকিব খানের হাতের মুদ্রা। এ দুটো কি যথেষ্ট শক্তিশালী? জয়া আহসান ফোনে মাকে বলছে ফুঁ দিয়ে দিতে, এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ডায়লগ ‘মুরুব্বি মুরুব্বি’, শাকিব খানের মুখ দিয়ে বলা না বলাতে কিছু যায় আসে না, কারণ এ ডায়লগের লাইফটাইম অলরেডি সমাপ্ত।
৪. প্রমোশন: কালের কণ্ঠ পত্রিকায় গত ২৩ মার্চের রিপোর্ট ‘আগামীকাল থেকে শুটিং শুরু হচ্ছে তাণ্ডবের’। তখনো পর্যন্ত শাকিব খান ব্যতীত অন্যান্য আর্টিস্টদের ব্যাপারে কোনো তথ্যই জানানো হয়নি। প্রথমদিনের শুটিং থেকে ঈদে রিলিজ পর্যন্ত টাইমলাইন ধরলে, এত বড় প্রোডাকশন নেমেছে ৩ মাসেরও কম সময়ে। এর মধ্যে এক নায়িকা কয়েকদিন শুটিং করে বাদ পড়েছে, একজন স্ট্যান্টম্যানের মৃত্যু হয়েছে। ঈদের বাইরে রিলিজ হলে ফিল্ম চলে না, এমন সিজনাল বিজনেস রিয়েলিটি হয়ে না উঠলে আমি নিশ্চিত রায়হান রাফী তাণ্ডব মুক্তি দিতেন আরো ৪-৫ মাস পরে। অকালপক্বতার প্রভাব পড়েছে প্রমোশনে।
আমরা যদি এ চারটি ডিসাইসিভ ফ্যাক্টরকে আমলে নিই, প্রতিটিতেই তাণ্ডব বড় স্কেলে পিছিয়ে আছে। তাই ৫৩ কোটিকে ফিজিবল টার্গেট বলাটা দুষ্কর ঠেকছে। তবে বৃহৎ ইভেন্টগুলোকে ডেটা দিয়ে প্রেডিক্ট করা যায় না। তাই যদি ৫৩ কোটি অ্যাচিভ করে বা ছাড়িয়ে যায়, সম্ভাব্য অনুঘটকগুলোকেও চিহ্নিত করা উচিত—
১. তেলুগু ঘরানার টুইস্ট: Goldmines, RDC প্রভৃতি ইউটিউব চ্যানেলের আবির্ভাবের পরে তেলুগু-তামিল ফিল্মকে হিন্দিতে ডাবিংয়ের কালচার বিস্তৃতি লাভ করে। বাংলাদেশে এই ফিল্মগুলোর দর্শকও বৃদ্ধি পায়। সাউথ ইন্ডিয়ান এসব ফিল্মে ইন্টারভ্যালের আগে-পরে স্টোরিলাইনে ব্যাপক তফাত, এবং সাসপেন্স আর টুইস্টের ওপরই নির্ভর করে দর্শক এনগেজমেন্ট। আইডেন্টিটি ফ্রড করা এসব স্টোরিলাইনে খুবই পরিচিত প্যাটার্ন। ফিল্মের অর্ধেকের বেশি সময় যাকে জানলাম ড্যানিয়েল হিসেবে, পরে দেখা গেল ড্যানিয়েল আসলে অন্য কেউ, কিংবা সারা ফিল্মে যে পুলিশটি সিরিয়াল কিলারের পিছনে ছুটছে, ক্লাইমেক্সে সে-ই আবিষ্কৃত হলো কিলাররূপে। আমরা এসব টুইস্ট দেখে দেখে যতই ধাতস্থ হই, ফিল্ম চলাকালে রিয়েলিটি আর ভারচুয়ালিটির পার্থক্য ধরতে পারি না। এই ফাঁদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হতে পারে কয়েক লাখ দর্শক, হলে সেটি হবে ম্যাস বিহেভিয়ার এবং পালস বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিকোণ।
২. রাফির ‘ঝোঁপ বুঝে কোপ মারা’ নীতি: এখানে তিনটে এঙ্গেল যুক্ত করা যেতে পারে।
প্রথমত, বাংলাদেশে বর্তমানে বেকারসংখ্যা ৩০ লাখ বা এর কাছাকাছি। সোশ্যাল মিডিয়া আসক্ত জনগোষ্ঠীর বৃহদাংশই বেকার, ৮০ ও ৯০-এর দশকে কাজী হায়াতের ফিল্মগুলোতে খুব চলতি একটি ন্যারেটিভ প্রোপাগাণ্ডা চালানো হত- মামা-চাচা ছাড়া চাকরি হয় না। বাংলাদেশের জব মার্কেটে কিছু নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন হয় এটা সত্য, তবে ন্যারেটিভ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া অতিসরলীকরণ ও উদ্দেশ্যমূলক। হার্ডস্কিল ও সফটস্কিল দুটোই আছে, তবু দীর্ঘদিন ধরে বেকার বাংলাদেশে এমন দৃষ্টান্ত ১০ শতাংশও পাওয়া যাবে না। তবু হায়াতরা তাদের একপাক্ষিক ভাবনায় ব্যবসায়ীদের দানব বানিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের আনস্কিল্ডনেসকে দায়মুক্তি দেয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে গেছেন। ফেসবুকের মব আদালতের সুযোগ নিয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিও তার প্রতিষ্ঠানকে ভিলেন বানাতে পারে, প্রয়োজন একটামাত্র স্ট্যাটাস। রাফী ২০২৫ সালে এসেও ৯০ দশকের কাজী হায়াত ফর্মুলাকে ফিরিয়ে এনেছেন। এতে যদি একটা জনগোষ্ঠী ট্রিগারড ফিল করে, ফিল্মের ভবিষ্যৎ অর্থের ঝনঝনানিময়।
দ্বিতীয়ত. শেখ হাসিনার পতনের পরে ‘আয়না ঘর’ রূপান্তরিত হয় হটকেকে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন বর্গের ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছে গত ১৬ বছরে। আয়নাঘরকেন্দ্রিক কালেক্টিভ ফ্যান্টাসিকে বড় স্ক্রিনে আনলে দর্শক কীভাবে গ্রহণ করে, কতটা এনগেজড হয়- সে সংক্রান্ত ফোরকাস্টিং থাকতে পারে, এবং সেটা রাফীর অনুকূলেও আসতে পারে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কয়েক বছর আগে তোলপাড় ঘটে গিয়েছিল।
চতুর্থ একটি অ্যাঙ্গেলও যুক্ত করা যায়। মিডিয়া হাউজগুলো সরকারের হয়ে ডিজইনফরমেশন ছড়িয়েছে, এবং বড় অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়ীদের অপকর্মকে হালাল করেছে— এটা ফিসফাসানি থেকে ফ্যাক্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। দর্শক এর সঙ্গে একীভূত হতেই পারে।

৩. কন্ট্রোভার্সি: যেহেতু ফিল্ম তৈরি হয়েছে অতি তাড়াহুড়োতে এবং প্রমোশনে অর্গানাইজড পদ্ধতিতে কাজ করা সম্ভব হয়নি, পাবলিসিটি স্ট্যান্ট হিসেবে নিকট ভবিষ্যতে কোনো কন্ট্রোভার্সি মার্কেটে ছাড়া হলেও হতে পারে। কন্ট্রোভার্সিতে বিজনেস বাড়ে।
তাহলে প্রথম দিনেই মাল্টিপ্লেক্স থেকে ৩৬ লাখ টাকা কালেকশনের রেকর্ড কি ভুল সিগনাল? এর উত্তরে ‘হ্যাঁ’-ই বলবো, তার আগে বোঝা দরকার কালেকশনের রেকর্ড গড়তে ফ্যাক্টর কী কী হতে পারে।
– তুফান ব্লকবাস্টার সিনেমা হিসেবে এলিট শ্রেণিতে প্রবেশ্যতা পেয়েছিল। রায়হান রাফী-শাকিব খান জুটির দ্বিতীয় প্রজেক্টের প্রতি আকাশচুম্বী প্রত্যাশা।
– অনলাইন স্ফিয়ারে একটা আলাপ শোনা যায় আফরান নিশো আর্টিস্ট, যে চরিত্রই দেয়া হোক ফুটিয়ে তুলবে; শাকিব খান হিরো তথা সুপারস্টার, একটা মুখস্থ রুটের বাইরে পারবে না। টিভি নাটক এবং ওটিটি প্লাটফর্মের সাবস্ক্রাইবারদের আগ্রহ থাকতে পারে নিশো কী করলো শাকিবের ফিল্মে!
– জয়া আহসান অনেক বছর আগে শাকিব খানের সাথে কাজ করেছিলেন ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ সিনেমায়। তখনো পশ্চিমবঙ্গে এত বেশি ব্যস্ততা তৈরি হয়নি। তার স্ক্রিন প্রেজেন্স বৃহত্তম ফ্যাক্টর হতে পারে। উইকিতে একাধিক সূত্রের বরাতে লেখা তার জন্ম ১ জুলাই, ১৯৭২ অর্থাৎ জুলাইতে তিনি ৫৩ বছর স্পর্শ করবেন! অথচ ফিল্মে তাকে যেভাবে পোরট্রে করা হয়েছে, এতটা লাবণ্যময় তাকে বাংলা সিনেমায় লাগে না সচরাচর। তার চোখ মারার সিকুয়েন্সটা যদি টুইস্টের অংশ না হত, এটা নির্ঘাত তাণ্ডবের পোস্টার ইমেজ তথা আইকনিক মোমেন্ট হতে পারত।
৫৩ কোটির বাইরে যদি নিছক কমার্শিয়াল ফিল্ম হিসেবে মূল্যায়ন করি, তাণ্ডব প্রায় সবগুলো সূচকে নিচের দিকে অবস্থান করবে।
প্রথমত, শাহরুখ খানের জাওয়ান এবং কমল হাসানের বিক্রম দেখা থাকলে পরিচালক হিসেবে রাফীকে ফাঁকিবাজ মনে হতে পারে অনেকেরই। সিয়াম আহমেদের চরিত্রটার সাথে বিক্রমের ‘রোলেক্স’ ক্যারেক্টারের এত মিল কেন জানতে ইচ্ছা হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, হোস্টেজ বা জিম্মি করে দাবি আদায় টপিকে কমার্শিয়াল ফিল্ম বহুত হয়েছে, আরো হবে সেটা সমস্যা নয়। সমস্যাজনক হলো স্টোরি ও ক্যারেক্টারের বিল্ডআপ। স্বাধীন নামের ক্যারেক্টারটার উপরে দাঁড়িয়ে আছে প্লট। এক বেকার যুবক, প্রেমিকার বাবার কাছ থেকে ২ মাসের সময় নিয়েছে, এর মধ্যে চাকরি পেতেই হবে— গল্প হিসেবে অতি গতানুগতিক। স্বাধীনের ব্যাকস্টোরিতে আরো ডিটেইলিং লাগত। ফলে দর্শক হিসেবে আমরা স্বাধীনের সাথে অ্যাটাচড হতে পারি না। আবার স্বাধীন সেজে সারা দেশকে ধোকা দেয়া মিখাইলের স্টোরি বলতে একটা পেপার কাটিং; পত্রিকায় যার গ্রেফতারের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সে গুম হয় কেন ও কীভাবে! মিখাইলের গল্পটা না জানলে স্বাধীন ও মিখাইলের মধ্যে কোনোপ্রকার কনট্রাস্টই তৈরি হয় না। ক্যারেক্টারটার সরাসরি অপমৃত্যু ঘটে। সাবিলা নুর ক্যারেক্টারটা একদম অপচয়। স্বাধীন ক্যারেক্টারটা বুঝতে হলে সাবিলার স্ক্রিন প্রেজেন্সে আরো ক্যালকুলেশন আর পরিমিতির প্রয়োজন ছিল। রাফি তাকে স্রেফ মার্কেটিং গিমিক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। নাটক আর ওটিটির জনপ্রিয় নায়িকা ফিল্মে অভিষিক্ত হচ্ছে, রাফির কাছে এটুকুই বোধহয় ফিল্মের কম্পোজিশনাল কম্প্যাক্টনেসের চাইতে অধিকতর জরুরি ছিল।
সুড়ঙ্গের মাসুদকে ক্যামিও হিসেবে এনে তিনি সিনেমাটিক ইউনিভার্স তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমরা মাসুদের স্টোরি জেনেছি অখণ্ড এক ফিল্মের মাধ্যমে, মিখাইলের স্টোরি জানা হলো না কিছুই। সিনেমাটিক ইউনিভার্সে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কি বজায় থাকলো? তুফানের শেষেও সিক্যুয়েল তৈরির ঘোষণা ছিল, কোথায় গেল সেটা? আমরা বরং এভাবে ইন্টারপ্রেট করতে পারি, তিনি মাসুদ নন আফরান নিশোকে স্ক্রিনে দেখিয়েছেন গিমিক হিসেবে!
জয়া আহসানের করা জার্নালিস্টের ক্যারেক্টারটা হয়তবা ঠিকঠাক, এছাড়া সব ক্যারেক্টারই ওয়ান ডিরেকশনাল। ফলে স্টোরিটেলিংয়ে রাফিকে বহু চেষ্টা করেও তিনটার কম শূন্য দেয়া সম্ভব নয়। তিনি স্রেফ ঈদে প্রাসঙ্গিক থাকতে চেয়েছেন।
তৃতীয়ত, ক্যাচি ও স্পাইসি ডায়লগ ব্লকবাস্টার ফিল্মের অন্যতম ডিমাণ্ড। ডায়লগ অতি অ্যামেচার।
সাবিলার বাবা সুব্রতের সাথে শাকিব দেখা করতে যাওয়ার সিকুয়েন্সটাতে সুব্রতের সংলাপ পাই- ‘ক্যারাম একটি জীবনমুখী খেলা। তুমি চাইলেই রেড ফেলতে পারো, কিন্তু কভার দিতে না পারলে লাভ নেই। তুমি কোনো মেয়েকে ভালোবাসতেই পার, তার মানে কিন্তু বিয়ে করা নয়।’
২ ঘন্টা ৯ মিনিটের ফিল্মে ইফেক্টিভ ডায়লগের এমন মহামারি থাকলে সেটা ৫৩ কোটি ব্যবসা করবে কিসের ওপর দাঁড়িয়ে!
প্রথম দিনের ৩৬ লাখ কালেকশন তাই সাসটেইনেব্ল গ্রোথ না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রকট, এবং এর মূল কারণ একমাত্র এবং কেবলমাত্র রাফীর ওভার-কনফিডেন্স!