তিন নির্মাতা যা ভেবেছিলেন
এটা বাংলা মুভি ডেটাবেজের বিশেষ কোনো প্রতিবেদন নয়। বৃহস্পতিবার তিনজন নির্মাতার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ওঠে এসেছে বাংলাদেশি সিনেমার সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা। এক-দুই লাইন বা বড় করে লেখা ওই স্ট্যাটাসগুলো পাঠককে কিছু বিষয়ে ইশারা দেবে। কী?
ঢালিউডে যারা নিয়মিত সিনেমা বানান তাদের মুখে সাধারণত গল্পে সংকট নিয়ে কথা শোনা যায় না। ঈদের সিনেমা দেখার পর এ বিষয়ে অনন্য মামুন বলেন, ‘ঈদের তিনটা সিনেমায় দেখলাম। যা শিক্ষা নিলাম তা হলো— দর্শককে বোকা বানানোর দিন শেষ। আমাদের ভালো গল্প লেখক দরকার।’
ট্রেলার ও টিজার দেখে অনেকে ‘আয়নাবাজি’র প্রশংসা করছেন। সুনির্মাণের পাশাপাশি তারা ধারণা করছেন গল্পেও বৈচিত্র থাকবে। আর সে সিনেমার নির্মাতা অমিতাভ রেজার চোখে সিনেমা বানানোর চেয়ে কঠিন কাজও আছে! তিনি লেখেন, ‘সিনেমা বানানো মনে হয় সিনেমা রিলিজ করা থেকে এক’শ গুন সোজা কাজ।’
এবার বুঝুন অবস্থা!
অন্যদিকে প্রযুক্তি-লোকেশন সচেতন ও স্টাইলিশ নির্মাতা আশিকুর রহমান লিখেছেন, ‘বছর তিনেক আগের কথা। মাত্র তখন গ্যাংস্টার মুভির কাজ চলছে। ধানমণ্ডি লেকে মোটামুটি পপুলার, অত্যন্ত অহংকারী একজন সিঙ্গারের সাথে কথা হচ্ছিলো। আমি বাংলা মুভিতে কাজ করি বলে বেশ খানিকক্ষণ হাসাহাসি করলো। তার জোরাল দাবি ছিল, বাংলা মুভি কেবল বস্তির মানুষ দেখেন, এবং মোটামুটি মূর্খ লোকজনই এখানে কাজ করেন। শাকিব খানকে তো গরিব, রিকশাওয়ালাদের হিরো বলে অনেক পচানো হল। আমি তখনও ওত বেশি মিডিয়াতে কাজ করিনি। নতুন বলে একটু চুপচাপই ছিলাম। শুধু শান্ত কণ্ঠে বলেছিলাম, বাংলা মুভি একদিন ঠিকই ভালো করবে, সম্মানের জায়গায় পৌঁছাবে। আজ ২০১৬ তে বাংলা মুভি আগের থেকে অনেক ভালো একটা অবস্থানে যাচ্ছে বলে আশা রাখি। আমরা আমাদের চেষ্টাকে কখনও থামিয়ে রাখিনি। তাই তো বছর কয়েক আগে বাংলা মুভি নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, যে স্বপ্ন দেখার অপরাধে রাস্তা ঘাঁটে হাসাহাসি হত, তা আজ কিছুটা হলেও সত্যি হচ্ছে। আজ বাংলা মুভি হলিউডের ক্রু দিয়ে, হলিউডের লোকেশনে শুট হচ্ছে। নিচে যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন, তাতে যারা আছেন, তারা মোটামুটি নিয়মিত হলিউডের বিভিন্ন প্রোডাকশনে কাজ করেন। যে লোকেশনটা দেখছেন, সেখানে আমাদের আগে শুটিং হয়েছিলো অ্যাঞ্জেলিনা জোলির আনব্রোকেন, উলভারিন-সহ অনেক বিখ্যাত হলিউড মুভির। বলিউডও এখনো এই সব লোকেশনে যায়নি। সাথে আছেন আমাদের সুপারস্টার শাকিব খান। নিজের মনের ভিতরের অকল্পনীয় জিদ থেকেই আজ আমরা একটু একটু করে স্বপ্নের পথে হেটে যাচ্ছি। বেশী কথা বলা সেই গায়ক লোকটা এখনো ধানমন্ডি লেক বসে রং চা-ই খায়। আর আমরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি বিশ্বায়নের পথে। উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আমাদের দর্শকদের মনে এই বিশ্বাসটা আনা, আমরাও চেষ্টা করলে পারি। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন, যেন সুন্দর একটা গল্পের চলচ্চিত্র আপনাদের উপহার দিতে পারি। অনেক ধন্যবাদ আমার প্রডিউসারদের যারা, আমার উপর বিশ্বাস করে, ভালো একটা কাজে ঝাঁপিয়ে পরেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আমার টিমকে যারা পৃথিবীর বিভিন্ন কোনা থেকে রাত-দিন পরিশ্রম করে প্রায় অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছেন। যারা আমাদের প্রতি পদে পদে বাধা দিয়েছিলেন, তাদেরও ধন্যবাদ, কারণ আপনাদের জন্যই আমরা আরও বেশই মনোযোগ দিয়ে কাজ টা করেছি, “আপনাদের এই অবদান আমি মনে রাখবো”। সবশেষে ধন্যবাদ মহান আল্লাহ তায়ালাকে, যার ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব না। স্বপ্ন শুধু, বাংলা মুভির সাথে বাংলাদেশও ধীরে ধীরে পৃথিবীর বুকে এগিয়ে যাবে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।’