Select Page

তুফান: গল্পের সঙ্গে কানেক্ট করা গেলই না

তুফান: গল্পের সঙ্গে কানেক্ট করা গেলই না

নব্বই দশকের তুফান নামের একজন গ্যাংস্টার, যিনি চান তার বায়োপিকে হুবহু তার মত দেখতে শান্ত নামের একজন ছেলে অভিনয় করবে; যে কিনা এফডিসির জুনিয়র আর্টিস্ট।
শান্ত কি পারবে এই কাজ করতে বা সে কি করতে আগ্রহী হবে? তুফানের প্ল্যান কি আসলেই বায়োপিক বানানো না অন্য কিছু?
এই হচ্ছে মোটা দাগে তুফান সিনেমার গল্প।

রিলিজের আগে টিজার হোক বা অন্যান্য প্রোমোশনাল ম্যাটেরিয়াল হোক, তুফানের হাইপ ছিল আকাশচুম্বী। সম্ভবত এজন্যই সিনেমাটা আমার এক্সপেকটেশান ফিলাপ করতে পারেনি। তুফান ভালো লাগেনি আমার।

রায়হান রাফির যে জিনিসটা আমার ভাল্লাগে, তার গল্পগুলোকে আমার বাংলাদেশী গল্প মনে হয়। কারণ অবশ্য তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সত্য ঘটনা থেকেই গল্পগুলো নেন। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের কোথাও মাসুদ নামের একটা ছেলে আছে যে কিনা তার স্ত্রীর জন্য পাগল(সুড়ঙ্গ)। কীংবা বাংলাদেশের কোথাও রোমান নামের একজন ছেলে আছে যে কীনা অনন্যার জন্য পাগল(পরাণ)। আর এজন্যই সম্ভবত এই ক্যারেক্টরগুলোর ইমোশন টাচ করে যায়। একটা কোর ইমোশন ধরে এরপরে রাফি বাকি জিনিসপত্র সাজান।
তুফানের গল্প এ ধরনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে না বলেই সম্ভবত মার খেয়ে গেছে। গল্পটার সাথে একেবারেই কানেক্ট করতে পারিনি। কোন ক্যারেক্টারের জন্য কোন ধরনের ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট কাজ করেনি।

সবচেয়ে যেটা চোখে আর কানে পীড়া দিয়েছে, সিনেমাটাকে আমার বাংলাদেশী সিনেমা মনে হয় নি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কলকাতার সিনেমাই মনে হয়েছে। নব্বই এর ঢাকা বলা হলেও সেট ডিজাইন থেকে শুরু করা অন্যান্য আর্টিস্টদের মুখের একসেন্ট- সব জায়গায় কলকাতা। ২ ঘন্টা ২৫ মিনিটের সিনেমায় চঞ্চল চৌধুরীর আগমন ঘটে ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিটেরও পরে। একমাত্র তিনি আসার পরেই সিনেমাটাকে একটু বাংলাদেশী সিনেমা মনে হচ্ছিল আর দর্শক স্বস্তি পাচ্ছিলেন। চঞ্চল চৌধুরী আসলেই একজন রত্ন।

শহীদুজ্জামান সেলিম, সালাউদ্দিন লাভলুর মত অভিনেতাদের ট্রেলার, টিজারে যতটুকু দেখিয়েছেন; ততটুকুই দেখানো হয়েছে। এর চেয়ে বড় আফসোস আর কী হতে পারে যে এমন অভিনেতাদের ব্যবহারই করা হল না!? শাকিব আর চঞ্চলকে এক সিনেমাতে পেয়ে কোন একটা দারুণ ফেস অফ বা ডায়লগবাজি নেই? সমানে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে একজন গ্যাংস্টার কোন উদ্দেশ্য ছাড়া, এটা কতক্ষণ দেখা যায় জানিনা। তাহলে কি সবই গিমিক?

বিশাল খরচ করা হয়েছে, তবে বাজেট যতটা শুনেছি সেই পরিমাণ বাজেটের সিনেমা মনে হয়নি তুফানকে। আরেকটু কম মনে হয়েছে যেহেতু শুরুরদিকের বেশিরভাগ সিন একটা সেটেই। মিমি চক্রবর্তীকে ভালো লেগেছে। শান্ত চরিত্রের শাকিবের চেয়ে তুফান চরিত্রের শাকিব বেটার ছিলেন বাট ক্যারেক্টর একেবারেই ওয়ান ডাইমেনশনাল। কেজিএফ বা এনিমেল থেকে ইন্সপায়ার্ড লুক এন্ড ফিল তো বাদই দিলাম। শাকিবের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয়কারী ছেলেটা দুর্দান্ত। কলকাতার ছেলে, নাম জানা নেই। বরাবরের মত এই সিনেমাতেও রাফির সেই সিগনেচার ওয়ান টেক শট আছে একটি হাসপাতালে, দারুণ হয়েছে সেটা।

নাইন্টিজেই ম্যাস অডিয়েন্সের সিনেমা বা কমার্শিয়াল সিনেমা আরও অনেক ভালো গল্পে তৈরি হত। ম্যাস সিনেমা বলে এসব সিনেমাকে ছোট করার কোন কারণ আমি দেখিনা বরং মেইনস্ট্রিম সিনেমার দায়িত্ব আরও বেশি বলে আমার কাছে মনে হয়। কারণ এটা অনেক বেশি মানুষকে কেইটার করে। সেই জায়গায় ২০২৪ সালে এসে আমি কেন একটা ভালো গল্প দেখতে পারবো না এত সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, সেটা আফসোসের ব্যাপার। তার চেয়েও বড় আফসোস হচ্ছে দর্শককে ওভারপ্রমিজ করা, যা আমি মনে করি কখনই করা উচিত না কোন প্রোডাকশন রিলিজের আগে।

বিশাল ক্যানভাস, চকচকে ভিজ্যুয়াল, দারুণ গান, শেষে গিয়ে ক্রাউড প্লেজারিং ফোর্সড টুইস্ট- সবই ঠিকাছে। কিন্তু স্টোরিটেলিংটাই না থাকলে, ক্যারেক্টরের ইমোশন যদি আমাকে ছুঁয়েই যেতে না পারে, তাহলে বাকিসব আলাপ তো বাতুলতা।


About The Author

অভিনেতা, শিক্ষক, লেখক ও উদ্যোক্তা

Leave a reply