হৃদয়ে আছেন সুজা খন্দকার
দিলদার ভালোবাসে নাসরিনকে। নাসরিনের বাবা সুজা খন্দকার দিলদারকে পছন্দ করে না। দিলদার যে তাঁর বাড়িতে নাসরিনের সাথে দেখা করতে যায় সেটা তার জানা। অনেক চেষ্টা করে হাতেনাতে ধরার কিন্তু সুযোগ হয় না। একদিন ঠিক ধরে ফেলে নাসরিন জলদি করে দিলদারকে ট্রাঙ্কের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। সুজা খন্দকার ঘরে কেরোসিন দিয়ে ঘর জ্বালাবার ব্যবস্থা করে। আগুন লাগিয়ে বাইরে অপেক্ষা করে। নাসরিন কাঁদতে থাকে আর বলে ট্রাঙ্কের ভেতর টাকা পয়সা সব আছে ওটা পুড়ে গেলে সব শেষ। সুজা খন্দকার ট্রাঙ্কটা কোনোমতে নিয়ে আসে আর দিলদারকে লক্ষ্য করে বলে, এবার তোর নির্ঘাত মৃত্যু। তারপর নাচতে থাকে। ওদিকে নাসরিনও খুলে দেয় ট্রাঙ্ক। ট্রাঙ্কের ভেতর থেকে দিলদার বের হয়ে সুজার সাথে নাচতে থাকে এবং তাঁকে দেখিয়ে চলে যায়। সুজা খন্দকারের তখন মাথায় হাত। দিলদার থাকার পরেও তাঁর নির্মল কমেডি দারুণ লাগে দেখতে।
আমাদের বিনোদন জগতের উল্লেখযোগ্য অভিনেতা সুজা খন্দকার। মঞ্চ, বেতার, টিভি ও চলচ্চিত্র সব মাধ্যমে কাজ করা ভার্সেটাইল একজন অভিনেতা।
সুজা খন্দকারের জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৪১, পাবনা জেলায়।
পড়াশোনা বাংলা সাহিত্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
চাকরি করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে।
উল্লেখযোগ্য ছবি : সারেং বউ, তাসের ঘর, সখি তুমি কার, ওরা ১১ জন, পায়ে চলার পথ, এখনই সময়, অচেনা মানুষ, সাধু শয়তান, সুজন সখি, পেনশন, তিনকন্যা, সুখের সংসার, স্নেহের প্রতিদান, সাহেব, দেন মোহর, বিক্ষোভ, মায়ের অধিকার, তোমাকে চাই, প্রিয় তুমি, শেষ সংগ্রাম, গরিবের রাণী, আদরের সন্তান, লালু সর্দার।
প্রথম ছবি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘ওরা ১১ জন’। পাক সেনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রথম ছবিতেই এমন চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করেন। সেসময় তিনি দেখতেও সুদর্শন ছিলেন। ‘পায়ে চলার পথ, এখনই সময়, সারেং বউ, সুজন সখি’ এ ছবিগুলোতেও সুদর্শন তাঁর লুক।
পজেটিভ, নেগেটিভ, কমেডি সব ধরনের চরিত্রেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন। তাঁর অভিনয়ে মজা করে কথা বলার একটি ব্যাপার ছিল তাই তাঁকে দর্শক ‘মজার মানুষ সুজা খন্দকার’ নামে চিনত।
সালমান শাহ প্রেমের জন্য বাড়ি ছেড়েছে। বাবা খলিল ও মা শর্মিলী আহমেদকে তার জীবনের প্রথম রোজগারের টাকায় মিষ্টি পাঠায় সুজা খন্দকারের মাধ্যমে। সুজা খন্দকার তাঁর আত্মীয়ের কথা বলে মিষ্টি খেয়ে যেন দোয়া করে তাঁরা। খলিল, শর্মিলী মিষ্টি খেয়ে দোয়া করেন। সুজা খন্দকারের চোখে তখন অশ্রু, বাড়ির নিচে সালমান শাহরও তাই। সুজা খন্দকার চরিত্রে মিশে অভিনয়টা এভাবেই করতেন।
‘মায়ের অধিকার’ ছবিতে লেকচারার তিনি। ক্লাসে লেকচার দেন বিবর্তনবাদ নিয়ে। ছাত্ররা হোমওয়ার্ক করেছে কিনা যাচাই করার সময় সালমান শাহ-র খাতায় ক্লাসের মোটা একটি মেয়ের ছবি আর শাবনাজের খাতা থেকে মোটা একটি ছেলের ছবি পাওয়া যায়। তখন সুজা খন্দকার বলেন-‘আজকালকার ছেলেমেয়েদের হলোটা কী! জীবনসাথী বাছার ব্যাপারে এরা আজকাল অ্যাবনর্মাল রুচির পরিচয় দিচ্ছে।’ মজার একটি চরিত্র ছিল। ‘দেন মোহর’ ছবিতে তাঁর লুক ও অভিনয় ছিল আকর্ষণীয়। ‘বিক্ষোভ’ ছবিতেও তিনি কলেজের লেকচারার ছিলেন। কলেজে মারামারি দেখলে বারবার বলতেন-‘আমি রিজাইন দেবো।’ ‘সাহেব, স্নেহের প্রতিদান’ ছবিগুলোতেও তার অভিনয় ছিল দেখার মতো। নেগেটিভ চরিত্রে অসৎ পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় ছিলেন ‘শেষ সংগ্রাম’ ছবিতে। চম্পার পরিবারের সবাইকে হত্যা করতে ভূমিকা রাখেন এবং চম্পার হাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
অত্যন্ত জনপ্রিয় টিভি নাটক ‘সংশপ্তক, এইসব দিনরাত্রি, আজ রবিবার’ সহ ‘দূরে কোথাও, মোহর আলী’ এবং আরো কিছু নাটকে কাজ করেন।
তাঁর অভিনীত জাটকা নিধন বিষয়ে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনে সাদেক আলীর চরিত্রটি ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল যার সংলাপ ছিল এমন-‘ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা/কারেন্ট জালে আটকা।’
এই ভার্সেটাইল অভিনেতার মৃত্যু হয় ১৯৯৭ সালের ২ মার্চ, ঢাকায়। আমরা তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে তাঁকে চিরদিন স্মরণ করব।
ছবি সংগ্রহ : আজাদ আবুল কালাম