দায়িত্বশীল আচরণের ওপর নির্ভর করছে ‘পরীক্ষামূলক আমদানি’র ভবিষ্যত
দুই বছরের জন্য ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ রফতানির বিপরীতে উপমহাদেশের চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রদর্শকরা দীর্ঘদিন যাবত এটি চাইছিলেন এবং শেষাবধি পেয়েছেন।
‘পাঠান’ এখন তৃতীয় সপ্তাহে। শোনা যাচ্ছে, ভালোই চলছে। যেহেতু ভালোই চলছে, সেহেতু প্রাসঙ্গিক কারণেই আশা করতে চাই, পরিস্থিতি নিশ্চয়ই বদলাবে। পুরনো প্রেক্ষাগৃহগুলোর আধুনিকায়ন হবে। নতুন সিনেপ্লেক্স হবে। ডিজিটাল টিকিটিং সিস্টেম চালু হবে, বক্সঅফিস হবে। প্রযোজকরা লগ্নি ফেরত পাবেন। নতুন উদ্যমে ফিরে আসবেন নতুন যুগের চলচ্চিত্র নির্মাণে।
(সবই আশার কথা। আর এই আশাবাদ প্রদর্শকরাই তৈরি করেছেন!)
একই কারণে আশা করতে চাই, প্রদর্শকরা যেহেতু লাভের মুখ দেখছেন তাই প্রেক্ষাগৃহের সংস্কার কাজও দ্রুতই শুরু করবেন। এইজন্য নিশ্চয়ই পুরো দুই বছর লাগাবেন না।
*
উল্লেখ রাখা প্রয়োজন, সংস্কার বা আধুনিকায়ন বলতে মাল্টিপ্লেক্স বা সিনেপ্লেক্সে রূপান্তর বোঝানো হয়েছে। কোনো দিক থেকেই ৫০০ থেকে ১০০০ দর্শকের সিঙ্গেল স্ক্রিন বেঁচে থাকবার কোনো কারণ অবশিষ্ট নেই।
*
আর মনে রাখতে হবে, এই অনুমতি দেয়া হয়েছে- ‘পরীক্ষামূলকভাবে’, ‘দুই বছরের জন্যে’ এবং সেটা ‘শর্তসাপেক্ষে’, ‘রফতানির বিপরীতে আমদানি’। এই দুই বছরে আমদানিকারক ও প্রদর্শকদের দায়িত্ব অনেক। তাদের যথাযথ দায়িত্বশীল আচরণ ও উদ্যোগের উপরই নির্ভর করবে এই ‘পরীক্ষামূলক’ সিদ্ধান্তের ভবিষ্যত।
আমদানিকারকরা মনে রাখতে পারেন, দর্শক শুধু হলিউডের ছবি আর হিন্দি ছবি দেখার জন্যই সারাবছর হা করে থাকে এমন কিন্তু নয়। দর্শক তামিল, তেলেগু, মালয়ালম সিনেমাও দেখে আবার ইরান, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকাসহ ইউরোপীয়ান সিনেমাও দেখে।
দেখার বেলায় শুধু উপমহাদেশের ভাষার চলচ্চিত্রই নয়, পৃথিবীর অন্য সকল দেশের মতো, সকল দেশের সকল ভাষার চলচ্চিত্রই প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখতে চাই।
নির্মাণের বেলায় আমরা যেমন উপমহাদেশের বাইরে যৌথ প্রযোজনায় খুব একটা যেতে পারিনি, তেমনি আমদানির বেলায়ও যেন একই বৃত্তে ঘুরপাক না খাই।
*
তবে এই অনুমতি পত্রের অনির্ধারিত ও দুর্বল দিকটি হচ্ছে— তিনটি উৎসবের সপ্তাহে যে আমদানি করা চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা যাবে না বলা হয়েছে, সেই ‘সপ্তাহ’ কয়টি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। কেউ চাইলে দ্বিতীয় সপ্তাহেই দেশীয় ছবি নামিয়ে আমদানি করা চলচ্চিত্র চালিয়ে দিতে পারেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, মাল্টিপ্লেক্সে না হয় মাল্টিস্ক্রিন আছে। কিন্তু সিঙ্গেল স্ক্রিনের বেলায় কী হবে? সব তো আর রাতারাতি মাল্টিপ্লেক্সে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে না। সেখানে নিজেদের চলচ্চিত্রের জন্যে শো বন্টনের বিষয়টি রাখতে পারলে কোনো দেশীয় নির্মাতার ছবি মুক্তির জন্যে অন্য ভাষার ছবি হল থেকে নামার অপেক্ষা করতে হবে না।
দর্শক আনুকূল্য পেলে একটি ছবি কয়েক সপ্তাহ চলে। যদি উল্লেখিত তিনটি উৎসব ছাড়া বাকি পুরোটা সময় আমদানি করা ১০টি চলচ্চিত্রই সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে, তাহলে দেশীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্যে খুব বেশি সিঙ্গেল স্ক্রিন অবশিষ্ট থাকবে না।
*
ভালো হতো, সবসময়ের জন্যে ‘শো’-এর রেশিও বরাদ্দ বা ভাগ করে দিলে। অন্য ভাষার চলচ্চিত্র চলাকালীন সময়ে দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্যে প্রতিদিন কয়টি ‘শো’ বরাদ্দ থাকবে এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকলে। যেমনটা আঞ্চলিক ছবি বাঁচানোর জন্যে তামিলনাডু, বেঙ্গালুরু কিংবা কেরালায় করা হয়ে থাকে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালেও করা হয়ে থাকে। সিঙ্গেল স্ক্রিনে প্রতিদিন চারটি শো থাকলে, একটি শো হিন্দি ছবি চালিয়ে, বাকি তিনটি আঞ্চলিক ছবির জন্যে রাখা হয়। সঙ্গে রাখা হয় কর রেয়াত। আঞ্চলিক ছবির টিকিট মূল্য হয়, হিন্দি ছবির অর্ধেক।
(তবে ‘প্যান ইন্ডিয়ান’ ছবির নতুন ধারণা ও পরিবেশনার ধরনে এসব নিয়মের প্রয়োগ থাকছে না বলে জানা গেছে।)
*
আশা করতে চাই পরীক্ষামূলক সময়ের জন্যে দেয়া এই অনুমতির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেরাও পর্যবেক্ষণ করছেন।