Select Page

দেবীতে মুগ্ধ!

দেবীতে মুগ্ধ!

নাম : দেবী
ধরন : সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার
পরিচালক : অনম বিশ্বাস
প্রযোজনা : সি তে সিনেমা
পরিবেশনা : জাজ মাল্টিমিডিয়া
কাস্ট : জয়া আহসান (রানু), শবনম ফারিয়া (নীলু), চঞ্চল চৌধুরী (মিসির আলি), অনিমেষ আইচ (আনিস), ইরেশ যাকের (আহমেদ সাবের), লাবণ্য চৌধুরী (ছোট রানু) প্রমুখ
মুক্তি : ১৯ অক্টোবর, ২০১৮
দেশ : বাংলাদেশ
ভাষা : বাংলা

নামকরণ : এছবির মূল চরিত্র মিসির আলি নন; এ ছবির মূল চরিত্র রানু নন। কিংবা এছবির মূল চরিত্র নীলুফারও নন। এ গল্পটি হলো এক দেবীর; যিনি অদৃশ্য ক্ষমতার অধিকারী। যার ক্ষমতার কাছে অনেকসময় বাস্তবতা হার মেনে যায়; কোনো যুক্তি দিয়ে তা বিশ্লেষণ করা যায় না… তার গল্পই এখানে বলা হয়েছে। তাই এছবির নাম “দেবী” একদম যথার্থ মনে হয়েছে।

কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ : এছবিটি একবিংশ শতাব্দীতে বাংলা সাহিত্যের সবথেকে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, হুমায়ূন আহমেদের একটি বহুলপঠিত উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে। আর দেবী উপন্যাসটি সম্পর্কে ধারণা নেই এমন মানুষ এদেশে খুব কমই পাওয়া যাবে। যেহেতু উপন্যাস এবং ছবিটি রহস্যধর্মী, তাই এর প্লট সম্পর্কে আলোচনা করে কোনোরকম স্পয়লার দিতে চাই না…

ছবির গল্পটি মূলত মানুষের ESP (Extra Sensory Perseption) কে কেন্দ্র করে। এটি এমন এক ক্ষমতা যার মাধ্যমে মানুষ তার পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাহায্য ছাড়াই চারপাশে কী কী ঘটছে তা বলে দিতে পারে। মানুষের আন্দাজ শক্তি এক্ষেত্রে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের এই শক্তি খুবই কম থাকে; তাই যাদের থাকে, ধরে নেওয়া হয় তারা মানসিকভাবে অসুস্থ।

উপন্যাসটি মূলত আশির দশকের প্রেক্ষাপটে রচিত। তবে পরিচালক অনম বিশ্বাস গল্পটি উপস্থাপন করেছেন বর্তমান প্রেক্ষাপট কে মাথায় রেখে। স্বাভাবিকভাবেই উপন্যাসের থেকে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে ছবিতে। নতুন পরিচালক হিসেবে অনম বিশ্বাস বেশ ভালো করেছেন; ভালোভাবেই সবকিছুর সমন্বয় করতে পেরেছেন। চিত্রনাট্যে যে পরিবর্তন গুলো আনা হয়েছে তা তেমন একটা খারাপ লাগেনি, যথাপযুক্ত ছিল।স্ক্রিনপ্লে তে কিছু কমেডি সিক্যুয়েন্স যোগ করা হয়েছে যা উপন্যাসে ছিল না।

ছবির সংলাপের ক্ষেত্রে তেমন বেশি কিছু পরিবর্তন আনা হয়নি; উপন্যাসের ভালো ভালো সংলাপ গুলো ছবিতে রাখা হয়েছে। তাই স্বভাবতই অতিরঞ্জিত কিংবা ক্লিশে টাইপ কোনো সংলাপ ছিল না।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮৫।

অভিনয় : অভিনয়ের ক্ষেত্রে জয়া আহসান বাকি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি যে পারফরমেন্স দেখিয়েছেন, এতে তিনি এবছর ন্যাশন্যাল এ্যাওয়ার্ড পাওয়ার অন্যতম দাবীদার। রানু চরিত্রটি ওনার চেয়ে ভালো কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারবে না; অন্ততঃ এছবিতে তার অভিনয় দেখে আমার এটাই মনে হয়েছে।

মিসির আলির চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় আমার কাছে ঠিকঠাক লেগেছে। বেশ ভালভাবেই তিনি এই পরীক্ষায় উতরে গেছেন। তবে তার লুক, ফিটনেস এবং গেটআপ (মেকআপ) আরো ভালো করা যেতো। কেন যেন মনে হলো আমরা বয়স্ক, রোগাক্রান্ত মিসির আলিকে পাইনি।

নীলু চরিত্রে থাকা শবনম ফারিয়া এবং আনিস চরিত্রে থাকা অনিমেষ আইচ; দু’জনকেই আমি বড়পর্দায় প্রথমবার দেখলাম। তারা তাদের চরিত্রে স্বাভাবিক ছিলেন। ছবির ক্লাইম্যাক্স সিনে নীলুর এক্সপ্রেশন বেশ ভালো লেগেছে… ছবিতে এই জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভবিষ্যতে তার কাছ থেকে এর চেয়েও ভালো অভিনয় দেখবার আশা রাখলাম।

ইরেশ যাকেরের অভিনয় মোটামুটি ছিল; তিনি তার রোল বেশ ভালোভাবেই পালন করেছেন। তবে তার ‘সাবেত’ চরিত্রটি আরেকটু বিস্তারিত দেখানো উচিত ছিল, এতে একটি পরিপূর্ণ সাইকোপ্যাথ ভিলেন আমরা পেতাম। চরিত্রটির ব্যাপ্তি কম হওয়ায় নেগেটিভ রোল টি মনে তেমন দাগ কাটেনি।

ছবিতে রানুর ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন লাবণ্য চৌধুরী এবং তিনিও এক্সপ্রেশন দিয়ে শিশুশিল্পীর চরিত্রে বাজিমাত করেছেন! তার সাথে জয়া আহসানের চেহারাও বেশ খানিকটা মিলে যায়।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৯০।

কারিগরি : এ ছবির ডার্ক হর্স, কিংবা তুরুপের তাস হলো এতে ব্যবহার করা উন্নতমানের সাউন্ড ইফেক্টস। মনে হয়েছে হলের ভেতরেই কেউ নূপুর পায়ে হাঁটাহাঁটি করছে; রানুকে যে বারবার ডাকছে সে যেন আমার পেছনেই বসে আছে; বিলু যখন তার বোনকে ডাকছিল তখন সে হলের এক কোনায় বসে ছিল.. এই অনুভূতি ছিল সত্যিই অন্যরকম এবং অসাধারণ, এর আগে কোনো বাংলাদেশি সিনেমায় আমি এমন দারুণ অনুভুতি পাইনি।

ছবির সিনেমাটোগ্রাফি বেশ ভালো ছিল। প্যাঁচার পাশে বসে থাকা রানুর শর্ট টি ছিল এছবির সেরা শর্ট! কালার গ্রেডিং এর কাজ ঠিকঠাক ছিল। তবে এডিটিং টা অভারঅল ঠিকঠাক থাকতো যদি ছবির ক্লাইম্যাক্স সিনের ভিএফএক্সের কাজ দূর্বল না হতো। এই এক জায়গাতেই কারিগরি দক্ষতা ভালভাবে ফুটে ওঠেনি।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৯০।

বিনোদন : পুরো ছবিটিই রহস্য এবং ভয়ানক উত্তেজনায় ভরপুর। প্রায় পৌনে ২ ঘন্টার ছবিতে বোরিং লাগার একদমই সুযোগ নেই। গল্পের গতি একটু হালকা করার জন্যে কিছু কমেডি সিনও রাখা হয়েছে।

ছবিতে মোট গান রয়েছে ১টি। সঙ্গৗতায়োজন করেছেন প্রীতম হাসান এবং ভারতের অনুপম রায়। অনুপম রায়ের কণ্ঠে ‘দু মুঠো বিকেল’ গানটি বেশ ভালোলেগেছে। মমতাজের গাওয়া ‘দোয়েল পাখি কন্যারে’ গানটি ছবিতে পাইনি, তবে তাতে বিনোদনে কোনো খারাপ প্রভাব পড়েনি।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮৫।

ব্যক্তিগত : এছবির স্মরণকালের সেরা পাবলিসিটির পর অন্য ৫/১০ জন দর্শকের মতো আমিও ভীষণ আগ্রহী ছিলাম ছবিটি নিয়ে। পছন্দের হলে টিকেট পাইনি, তাই প্রথমদিন দেখতে পারিনি। অবশেষে দ্বিতীয় দিন দেখলাম, এবং সবমিলিয়ে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। মিসির আলির গেটআপ দূর্বল না হলে, ক্লাইম্যাক্স সিনে দূর্বল ভিএফএক্স না থাকলে এবং সাবেত চরিত্রটির ব্যাপ্তি আরো বেশি পেলে এছবিটি একটি মাস্টারপিস হতে পারতো।

রেটিং : ৯/১০

ছবিটি কেন দেখবেন : কেন দেখবেন, এর চেয়েও বড় প্রশ্ন ছবিটি আপনি দেশের কোন হলে দেখবেন। আপনার হলে যদি পরিষ্কার পর্দা থাকে, ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম থাকে… তাহলে আমার মতো আপনিও মুগ্ধ হবেন! আর এছবি যদি ছোটপর্দায়/পিসি/ল্যাপটপ/মোবাইলে দেখেন তাহলে বড়পর্দার অনুভুতি নাও পেতে পারেন। তাই চেষ্টা করুন হলে গিয়ে দেখার, ভালো হলে গিয়ে দেখার।

 


Leave a reply