নতুন প্রতিষ্ঠান সিনেবাজ থেকে ইফতেখারের চার ছবি
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাই চলচ্চিত্রে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবির অভাবে সিনেমা হল বন্ধ রোধ করা যাচ্ছে না। লোকসানের কারণে চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ হতে থাকে। পুরনো সিনেমা দিয়ে হলগুলো চালু রাখা হয়েছে। দেশীয় চলচ্চিত্রের যখন এমনই দুর্দিন তখনই ‘সিনেবাজ ফিল্ম’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ইফতেখার চৌধুরী ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় প্রতিষ্ঠানটির নাম ও এই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিগগিরই চারটি ছবি নির্মাণ করা হবে বলে জানান। অচিরেই এসব ছবির নাম ও শিল্পীসহ বিস্তারিত জানানো হবে।
‘সিনেবাজ’-এর অভিষেক মঞ্চে উঠে বক্তব্যের শুরুতেই বিশেষ অতিথি ইলিয়াস কাঞ্চন প্রধান অতিথি নায়ক ও এমপি ফারুককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘অভিনেতা ও রাজনীতিক- দুটো বিষয়ের মধ্যে বড় একটি পার্থক্য আছে। একজন অভিনেতা মূলত কাজ করেন ভালোবাসার জোরে কিংবা টানে। এই ভালোবাসা দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়ার আশায় অথবা দর্শকদের ঋণ শোধ করার জন্য। আর একজন রাজনৈতিক নেতা মূলত কাজ করেন তার মেধা আর প্রজ্ঞা দিয়ে। যেখানে ভালোবাসা আর আবেগের তেমন কোনও স্থান নেই। তো একটু আগে ফারুক ভাইয়ের বক্তব্য শুনে একসঙ্গে আমি দু’জন মানুষকেই পেয়েছি। যার মধ্যে চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে আবার এই শিল্পকে বাঁচানোর জন্য মেধাও রয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পকে সত্যিকার অর্থে বাঁচাতে হলে এই মানুষদের কাজে লাগানো দরকার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘চিরজীবন দেখে আসছি চলচ্চিত্রকে মনে করা হয় সৎমায়ের সন্তান হিসেবে! চলচ্চিত্র তৈরির জন্য এ দেশের আবহাওয়া যখন অনুকূল ছিল না সেই তখন থেকে (পাকিস্তান আমল) এটা হয়ে আসছে। এরপর বঙ্গবন্ধু যখন চলচ্চিত্রের দিকে একটু নজর দেন তারপর সুদিন আসতে শুরু করে। তাই বলতে হয়, একমাত্র বঙ্গবন্ধু ছাড়া কেউ ভালোবাসেনি চলচ্চিত্রকে। তিনি ছাড়া অন্য কেউ চলচ্চিত্র লালন করেছেন, এটা পাইনি। বঙ্গবন্ধুর পর যারাই মন্ত্রী হয়ে এসেছেন আমি কথা বলেছি তাদের সঙ্গে। আমার মনে হয়নি কেউ চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে কিছু করেছেন। কারণ, এই শিল্পের জন্য তাদের ভালোবাসা থাকার কোনও কারণ নেই।’
ইলিয়াস কাঞ্চন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এর আগে যিনি মন্ত্রী ছিলেন (তথ্য মন্ত্রণালয়) তাকে একটি টকশো’তে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোনও পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ করেছেন? আমার প্রশ্ন শুনে তিনি অবাক হয়েছিলেন। উনি বুঝতেই পারেননি আমি এমন একটা প্রশ্ন করবো। যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনও পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি কীভাবে হবে? এজন্য সবসময় আমার কাছে মনে হয়, চলচ্চিত্রকে সৎমায়ের সন্তানের মতো লালন-পালন করা হচ্ছে। সে জন্যই আজ আমাদের এই দুরবস্থা।’
নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনেবাজ-এর যাত্রা প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “চারদিকে নাই নাই’র মধ্যেও নতুন প্রডাকশন হাউজ যাত্রা শুরু করছে। এটা খুব আনন্দের সংবাদ। তাদের টার্গেট দেশের দর্শকদের ভালো ছবি উপহার দিয়ে বিদেশেও চালানো। এটাকে আমি সাধুবাদ জানাই।’
মঞ্চে উঠে নায়ক ফারুক কিছু কথা বলেন নিজের অভিজ্ঞতা আর স্মৃতি হাতড়ে। প্রশ্ন তুলেছেন এই বলে, ‘হলিউড কি পৃথিবীর বাইরের কিছু নাকি? তারাও তো আমাদের মতো মানুষ। তারা পারলে আমরা পারবো না কেন?’
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান ভরাডুবি প্রসঙ্গ টেনে নায়ক ফারুক বলেন, ‘এফডিসি বলে কোনও কথা নেই। সিনেমার পৃথিবী একটাই। সিনেমার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি মানুষ একই মায়ের সন্তান। অথচ এখন দেখছি আমাদের শিল্পীদের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে বর্ডার। এই বর্ডারের কারণেই বিভক্ত হয়ে থাকি আমরা। কিন্তু শিল্পীর কোনও দেশ নেই, জাত নেই। আমরা সবাই একই পৃথিবীর মানুষ। আজকে হলিউড যদি পারে, আমরাও পারবো। তারাও তো আমাদের মতো মানুষ। ফলে আমাদের ইচ্ছাশক্তিটা দরকার।’
‘সিনেবাজ’-কে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফারুক বলেন, ‘আমার অন্তর থেকে ভালোবাসা দিলাম সিনেবাজকে। আমি সবসময় আপনাদের পাশে থাকবো। আমি মন থেকে চাই আপনারা ভালো কিছু করেন। কোনও কারণে আমাকে দরকার হলে বলবেন, আমি সাধ্যমতো পাশে থাকার চেষ্টা করবো।’
নায়ক ফারুক তার বক্তব্যের একপর্যায়ে সিনেবাজ সংশ্লিষ্টদের একটি অনুরোধ করেন। বলেন, ‘সামনে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী। আপনারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা শর্টফিল্ম বানান। সেখানে যদি কোনোভাবে আমাকে প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অবশ্যই ডাকবেন। আমি চলে আসবো।’
এরপর সিনেবাজের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রুম্মান রশীদ খান নায়ক ফারুককে জানান, শুধু শর্টফিল্মই নয়, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রসহ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেশ কিছু বিশেষ কাজ করার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
‘সিনেবাজ ফিল্মস’-এর অভিষেক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন নিমা রহমান, বাপ্পী চৌধুরী, ববি, রোশান, জলি, রাহা, শিমুল খান, শুভ্র খান, তৌহিদ মিটুল, বুলবুল বিশ্বাস, রায়হান রাফী, ওয়াজেদ আলী সুমন, মেহরীন, ড্যানি সিডাক প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত আছেন জ্যোৎস্না ইসলাম, শাম ইসলাম, রমিম রায়হান, অভিনেতা স্বাধীন খসরু, ইফতেখার চৌধুরী প্রমুখ।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলা ট্রিবিউন