পাষাণ : উন্নত নির্মাণের দেশি মুভি
পাষাণ
ধরণ : অ্যাকশন
পরিচালকর: সৈকত নাসির
কাস্ট : ওম সাহানী (রনি), বিদ্যা সিনহা মিম (দিয়া), বিপাশা কবির (লামিয়া), মিশা সওদাগর (আসলাম তালুকদার বাদশাহ), মিজু আহমেদ (হাদি ভাই), সাদেক বাচ্চু (দিয়ার বাবা), শিমুল খান (বজলু), আমির সিরাজি (কাদের খালাসি), নাদের চৌধুরী (চ্যানেল নাইন্টি নাইনের জিএম) প্রমুখ।
প্রযোজনা ও পরিবেশনা : জাজ মাল্টিমিডিয়া
নামকরণ : পরিস্থিতির তাড়নায় পড়ে খুলনায় বাস করা একজন সাধারণ ছেলের নিজ বাবাকে খুন করা এবং পরবর্তীতে একজন কনট্র্যাক্ট কিলার হওয়া, সবমিলিয়ে “পাষাণ” নামের যৌক্তিকতা খুব বেশি দেখি না। অর্থ্যাৎ, গল্পের মুল থিম অনুযায়ী নামটি তেমন যায়নি।
কাচিস (কাহিনী +চিত্রনাট্য +সংলাপ) : রনি একজন প্রফেশনাল কনট্র্যাক্ট কিলার, সে এমন একজনের আন্ডারে কাজ করতে চায় যার উপরে কোনো বস থাকবে না। এভাবে সে আস্তে আস্তে আন্ডারওয়ার্ল্ডে নিজের একটা শক্ত অবস্থান করতে চায়। কিন্তু এর পিছনে লুকিয়ে আছে তার নিজ বাবাকে খুন করার যন্ত্রণা। এভাবেই পড়তে পড়তে কিছু টুইস্টের মাধ্যমে এগিয়ে যায় ছবির গল্প।
সাধারণত কমার্শিয়াল মুভিতে গল্পের তুলনায় চিত্রনাট্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। এ ছবির ক্ষেত্রেও তাই। চিত্রনাট্য প্রথমার্ধে একটু অগোছালো মনে হলেও দ্বিতীয়ার্ধে এককথায় দূর্দান্ত। প্রথমার্ধে যা ল্যাকিংস ছিল দ্বিতীয়ার্ধ তা পূরণ করে দিয়েছে। সংলাপ মোটামুটি পাস মার্কস পাওয়ার মতো। খুব আহামরি নয়, আবার খুব বেশি অতিরঞ্জিতও নয়।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৫০।
টিমওয়ার্ক : ছবির গল্প নায়ককেন্দ্রিক, কিন্তু ওমের ওপর আমি পুরোপুরি স্যাটিসফাইড হতে পারলাম না। অ্যাকশন সিনগুলো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে তিনি অনেক কষ্ট করেছেন, কিন্তু তার ডায়লগ ডেলিভারি যথেষ্ট দুর্বল। দিয়া চরিত্রে মিম যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই দিয়েছেন। মিশা সওদাগর তার সাবলীল অভিনয়টুকু দিয়েছেন। বিপাশা কবিরের অভিনয় একদমই ভালো লাগেনি। তার এক্সপ্রেশনে অনেক দূর্বলতা ছিল। মিজু আহমেদের রোলটা অনেকটা ক্যামিও রোলের মতো। আরেকটু ব্যাপ্তি আশা করেছিলাম। শিশুশিল্পী ২ জনের মধ্যে দিয়ার অভিনয় ভালো ছিল; কিন্তু এখানেও আমি রনির অভিনয়ে হতাশ।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪৫।
কারিগরি : এ ছবিতে একমাত্র ওম বাদে বাকি যত অভিনেতা, কলাকুশলী, টেকনিশিয়ান রয়েছে সবাই আমাদের দেশীয়। সিনেমাটোগ্রাফি অত্যন্ত সুন্দর এবং মানানসই। মংলা বন্দরকে অনেক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এডিটিংও বেশ ভালো কাজ হয়েছে। তবে কালার গ্রেডিং আরেকটু ভালো হতে পারতো। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অত্যন্ত ভালো। অ্যাকশন সিনগুলো গৎবাঁধা বাংলা ছবির মতো না।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭৫।
বিনোদন : ছবিতে গান রয়েছে ৩ টি। তেমন কোনো গানই মন ভরাতে পারেনি; তবে কোরিওগ্রাফি মোটামুটি ভালো হয়েছে। এছাড়া কমেডি সিনগুলো মোটামুটি ভালো ছিল। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে এ ছবির এ্যাকশন সিনগুলো। এগুলো দর্শকদের বেশ আনন্দ দিবে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।
ব্যক্তিগত : ডিরেক্টর সৈকত নাসিরের ওপর ভরসা ছিল, তাই দেখলাম। তিনি আমাকে হতাশ করেনি। ওমের জায়গায় একজন ভালো নায়ক হলে হয়তো ষোলকলা পূর্ণ হয়ে যেতো।
রেটিং : ৩/৫
ছবিটি কেন দেখবেন : আপনি যদি ভালো অ্যাকশন-মশালা ছবির ভক্ত হোন তাহলে এ ছবি শুধুমাত্র আপনার জন্য। হলে গিয়ে মৌলিক গল্পের “পাষাণ” উপভোগ করুন এবং বাংলা ছবি নিয়ে নাক সিটকানো বন্ধ করুন।