Select Page

পাসওয়ার্ড : গতানুগতিক, তবে বস্তাপচা না।

পাসওয়ার্ড : গতানুগতিক, তবে বস্তাপচা না।

(স্পয়লারসহ রিভিউ)

বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় তারকা শাকিব খান পাঁচ বছর পর প্রযোজনায় ফিরেছেন। পাসওয়ার্ড নামের এই ছবিটি নিয়ে শাকিব খানকে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে। তার দাবী ছবিটি বিশ্বমানের একটি ছবি হয়েছে।

সত্যিকথা বলতে, শাকিব তার ছবিতে আয়োজনটা সেরকমই জমজমাট রেখেছেন। সুন্দর সব লোকেশনে গানগুলো শুট করা হয়েছে। ছবির একশন বা অন্যান্য ড্রামাটিক দৃশ্যগুলোতেও সাধ্যের মধ্যে যতটুকু আয়োজন সম্ভব তা ছিল। ফলে শাকিব যদি বলেন তার ছবি বিশ্বমানের হয়েছে তাতে আপত্তি করার কিছু নেই। অন্তত সার্বিক আয়োজন বা টেকনোলোজির দিক থেকে বিবেচনা করলে ছবি বাংলা বানিজ্যিক ছবি হিসেবে কিছুটা হলেও মানসম্মত হয়েছে।

তবে সমস্যা হচ্ছে, এর গল্প ও চিত্রনাট্য গতানুগতিক বানিজ্যিক ছবির যে ফরম্যাট তার মধ্যেই ঘুরপাক খেয়েছে। টেকনোলজির ব্যবহারে যদিও বা বিশ্বমানের বলা যায়, গল্প আর চিত্রনাট্যে একে কোন অবস্থাতেই বিশ্বমানের ছবি বলা যায় না। তবে আশার কথা হচ্ছে ”পাসওয়ার্ড” এর গল্প বা চিত্রনাট্য বস্তাপঁচা বাংলা ছবিগুলোর মত জঘন্যও না। গতানুগতিক ফরম্যাটের মধ্যেই খানিকটা ভিন্নতার স্বাদ ছিল পাসওয়ার্ডের গল্পে ও চিত্রনাট্যে।

গল্প শাকিব খান এবং তার ভাই (ইমন) কে নিয়ে। ইমন অটিস্টিক। একদিন তার সামনে খুন হয় এক ব্যাক্তি। সেই ব্যাক্তির সাথে থাকা পেন ড্রাইভটি ঘটনাক্রমে ইমনের সামনে চলে আসলে ইমন কৌতুহলবশত সেটা তুলে নেয়।
ফলে স্বভাবতই আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ডন মিশা সওদাগরের টার্গেটে পরিনত হয় শাকিব এবং ইমন।

ব্যাক্তিগতভাবে আমি এ ধরনের গল্প কখনই খুব একটা পছন্দ করি না। যারা একশন ছবির ভক্ত তাদের কাছে এ ধরনের গল্প ভাল লাগতেও পারে। আন্ডারওয়ার্ল্ড্‌, নায়ক- ভিলেইনের মারামারি ইত্যাদী ইত্যাদী আমার জন্য না। অবশ্য চিত্রনাট্যটা মোটামুটি সহনীয় হওয়ায় (বাংলা ছবির চিত্রনাট্য অসহ্যরকম বিরক্তিকর হয়) পাসওয়ার্ডকে শাকিব খানের অন্য ছবি বা গতানুগতিক বানিজ্যিক ছবি থেকে আমি কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবো।

ওভারাল মেকিং ভাল ছিল। আধুনিক ধারাটা ছিল মেকিং- এ। তবে বিশ্বমানের হতে হলে এইটুকু আধুনিকায়ন যথেষ্ট না। চিন্তা- ভাবনায় এবং সিনেমার উপস্থাপনায় আরো অনেক অনেক বেশী নতুনত্ব দরকার। না হলে বিশ্বমানের বলা যায় না। তবে শিকারী, নবাবের মত কলকাতার বানিজ্যিক ছবির মানকে স্ট্যান্ডার্ড ধরলে পাসওয়ার্ড এগুলোর কাছাকাছি মানের হয়েছে। বাংলাদেশের ছবির মান বিচার করলে এইটুকু আপাতত প্রাপ্তি বলা যায়।

অভিনয়ে সবাই ঠিকঠাক। শাকিব খান সাধারন মানের অভিনয় করেছেন। তার লুকটা খুবই বিশ্রী লেগেছে যেটা এ ছবির একটা বড় দুর্বলতা। ইমন অটিস্টিক চরিত্রে চেষ্টা করেছে, তবে তেমন ভাল করতে পারেনি। তার চরিত্রটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ন ছিল। পুরো ছবির সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। ইমন একেবারে খারাপ করেনি। তবে এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে অভিনয়ে আরো অনেক গভীরতা দরকার। বুবলির করার কিছুই ছিল না তেমন। তাকে আমার তেমন ভাল লাগেনি। অন্যরাও গতানুগতিক অভিনয় করেছে।

ছবির সিনেমাটোগ্রাফী ঠিকঠাক। কিছু কিছু দৃশ্য দেখতে ভালই লেগেছে। লোকেশন ভাল ছিল বলে দৃশ্য আরো ভাল লেগেছে। এডিটিং ভাল হয়েছে। ন্যারেটিভ স্টাইলও কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল, আবার ছবিতে কোথাও তেমন বোর হওয়ার সূযোগ রাখা হয়নি। ফলে এডিটিং টিম- কে কিছু ক্রেডিট দেয়া যায়।

ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মোটামুটি ভাল বলা যায়। আর গান সিনেমা হলে ভাল লেগেছে। ইউটিউবে তেমন ভাল না লাগলেও বড় পর্দায় গানগুলো উপভোগ করার মতই হয়েছে।

সবমিলিয়ে, পাসওয়ার্ড শাকিব খানের গতানুগতিক ছবিগুলো থেকে অনেকটাই উন্নত। তবে ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য গতানুগতিক বানিজ্যিক ছবির ফরম্যাটেই আবদ্ধ ছিল। একশন থ্রীলারে যতটা থ্রীল দরকার তা ছবিতে নেই। আবার বস্তাপঁচা বাংলাদেশী ছবিগুলোর মত চরম বিরক্তিকর ছবিও এটা না। মোটামুটি মানের বানিজ্যিক ছবি বলা যায়। অনেকটা শাকিবের আগের দুই ব্লকবাস্টার শিকারি বা নবাবের কাছাকাছি মানের। (কলকাতার বানিজ্যিক ছবিগুলো যেমন হয় আর কী! দক্ষিন ভারতের ছবির প্রভাব স্পস্ট)

ছবি মাস অডিয়েন্সের ভাল লাগতে পারে। ভিন্ন ধারার ছবি যাদের পছন্দ অর্থাৎ ক্লাস অডিয়েন্সের জন্য এ ছবি খুব একটা আকর্ষনীয় হবে না।

বাংলাদেশের বর্তমান সিনেমার অবস্থা চিন্তা করলে বলা যায় এ ছবি বড় রকম সাফল্য পাবে। কারন এই মানের ছবিও এ দেশে অনেক কম হয়। (ছবিই যেখানে নাই সেখানে আর মান!)

আমার কাছে সবমিলিয়ে পাসওয়ার্ড মোটামুটি ঠিকঠাক লেগেছে।

আমি ছবিটিকে দিচ্ছি ৩* বা ৬০% মার্কস্‌ (গ্রেড A-)


মন্তব্য করুন