Select Page

প্রিয় জুটি রিয়াজ-পূর্ণিমার কথা

প্রিয় জুটি রিয়াজ-পূর্ণিমার কথা

রিয়াজপূর্ণিমা জুটি আমার অন্যতম প্রিয়।

‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’-র পর রিয়াজ-পূর্ণিমা জুটি ডানা মেলতে শুরু করল। দর্শক ফেরায়নি, গ্রহণ করেছে এ জুটিকে। এ  জুটির ‘হৃদয়ের কথা, আকাশছোঁয়া ভালোবাসা, মনের মাঝে তুমি’ এগুলো সিনেমাহলে দেখা। মনে আছে ‘হৃদয়ের কথা’ সিনেমাহলে শুরু হতে দেরি করায় দর্শক ক্ষেপে গিয়েছিল। একজন বলেছিল-‘রিয়াজ-পূর্ণিমার ছবি দেখতে না পারলে হলের গেট বন্ধ থাকবে।’ পরে নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা পরে শুরু হয়।

আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল আমার থানা শহর পার্বতীপুরের অলিতে গলিতে, দেয়ালে দেয়ালে, রিকশার পেছনে সাঁটা ছিল ‘মনের মাঝে তুমি’-র অনবদ্য রোমান্টিক সব পোস্টার। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা চলতে পথে তাকিয়ে দেখত পোস্টার। হয়তো কপোত-কপোতীরা নিজেদেরকেই খুঁজেছিল রিয়াজ-পূর্ণিমার মাঝে। এ ছবির প্রচুর প্রচারণা হয়েছিল। গানগুলো তো মুক্তির আগেই সুপারহিট ছিল। গ্রামে মাইকিং করতে যখন আসত ‘প্রেমী ও প্রেমী’ গান মাইকে বাজত কী যে এক শিহরন বয়ে যেত মনে!

রিয়াজ-পূর্ণিমার রসায়ন ছিল একদম ন্যাচারাল। এ জুটির ‘হৃদয়ের কথা, আকাশছোঁয়া ভালোবাসা, মনের মাঝে তুমি’ ছবি তিনটি তাদের রসায়ন তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। বাণিজ্যিক ও এক্সপেরিমেন্টাল দুই ধরনের ছবিতেই এদের রসায়ন অসাধারণ। ‘মনের মাঝে তুমি’ এতটাই আকর্ষণ করেছিল দর্শককে যে সিনেমাহলে আমারই মতো অনেক দর্শককে দেখেছি একইদিনে পরপর তিন শো দেখতে। রিয়াজকে চিনতে পেরেও পরিচয় না দিয়ে লুকিয়ে ভালোবেসে যাওয়া পূর্ণিমাকে নিয়ে তখন দর্শক সিটি বাজাত সিনেমাহলে। গানগুলো সবার মুখস্থ ছিল। সিনেমাহলে ‘প্রেমী ও প্রেমী’ গানের শুরুর মিউজিকে সিট ছেড়ে অনেকে নাচা শুরু করেছিল। গানের সাথে অসাধারণ অ্যাটাচমেন্ট দর্শকের।

‘হৃদয়ের কথা’ ছবিতে রিয়াজ যখন পূর্ণিমাকে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে দেখেছে আর গানে গানে বলেছে ‘যায় দিন যায় একাকী’ ঐ গান অনেকেরই চোখ ভিজিয়েছে। গানটার পরেও যখন পূর্ণিমার জ্ঞান ফেরেনি এক দর্শক বলল-‘নলটা কেউ খুলে দে রে, নায়িকার কষ্ট হয়।’ দর্শকের ভালোবাসা আর ছবির সাথে নিজেকে কানেক্ট করার একটা উদাহরণ ছিল এটা। আবার ‘ভালোবাসব বাসব রে বন্ধু’ গানটি সমবেত সুরের সময়ও দর্শককে গাইতে দেখেছি। এটা তো দেশের চলচ্চিত্রে সার্বিকভাবেও অনেক জনপ্রিয় গানের একটি।

সাহিত্যভিত্তিক ছবি ‘শাস্তি’-তেও রিয়াজ-পূর্ণিমা স্মরণীয়। চন্দরা চরিত্রের পূর্ণিমাকে ঘিরেই ‘বৌ গেলে বৌ পাব ভাই গেলে ভাই পাব না’ সংলাপটির সৃষ্টি। ‘তুই ছাড়া আমার কোনো পিত্তিমি নেই’ গানটিতে তাদের রসায়ন এত চমৎকার ছিল! শেষে পূর্ণিমার ফাঁসির আগে রিয়াজ কল্পনায় চলে যায় পূর্ণিমার কাছে তখন সে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিল কিন্তু ততক্ষণে অনেক বেশি দেরি হয়ে যায়। তখন দুজনের ছুটে আসার দৃশ্যটি ছিল মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিতেও রিয়াজ-পূর্ণিমার অভিনয় স্মরণীয়। এছাড়া ‘মনে রেখ আমায়, এ জীবন তোমার আমার, টাকা’ এ ছবিগুলোও পছন্দের।

‘আমার মনে রং লেগেছে/ ঝিলিক ছড়ায় পূর্ণিমা/ সেই ঝিলিকের চমকে/ তোমায় হলো চেনা/ ঝিলিক দেখো দিকে দিকে/ ঝিলিক দেখো অন্তরে/ ঝিলিক দেখো মাঠে ঘাটে/ ঝিলিক ভুবন জুড়ে/ ঝিলিকে ঝিলিকে তুমি আমি রঙিন/ ঝিলিকে ঝিলিকে পথ চলি বহুদিন’

ছবির বাইরে ‘মনের মাঝে তুমি’ ছবির জনপ্রিয়তার পর ‘ঝিলিক পেইন্টস’-এর এই বিজ্ঞাপনটিও জনপ্রিয় হয় রিয়াজ-পূর্ণিমার। এসডি রুবেলের ‘কাছে কিবা দূরে’ মিউজিক ভিডিওতেও তাদেরকে খুব ভালো লেগেছিল।

ডিজিটাল ছবি আসার আগ পর্যন্ত সর্বশেষ সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মানসম্পন্ন জুটি ছিল এটি। প্রিয় জুটিকে সিনেমাহলে অনেক বেশি মিস করি। মাঝে মাঝে এও মনে হয় আজকের যেসব জুটি আছে চলচ্চিত্রে তখনকার রিয়াজ-পূর্ণিমার মতো জুটির কাছেও তারা দাঁড়াতে পারে না এতটাই তফাত। প্রিয় জুটির জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা।


মন্তব্য করুন