Select Page

প্রেমগীত: বাজেট ১৫-২০ লাখ, লাভের টাকায় পরিচালকের ছয়তলা বাড়ি!

প্রেমগীত: বাজেট ১৫-২০ লাখ, লাভের টাকায় পরিচালকের ছয়তলা বাড়ি!

দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘প্রেমগীত’ মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালের ১৯ নভেম্বর। ঢালিউডের সুসময়ে ছবিটি এতটাই সফল হয়েছিল যে পরিচালক তার লভ্যাংশ দিয়ে ছয়তলা বাড়ি করেন। কিছুদিন আগে সালমান শাহকে নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এ কথা বলেছিলেন। ঝন্টু যা বলতে চেয়েছিলেন, সালমানের চেয়ে বড় হিরো ওমর সানী। যার সিনেমার লভ্যাংশ দিয়ে বাড়ি করেছিলেন।

সম্প্রতি এ সিনেমার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন লেখেন হৃদয় সাহা। সেখানে উঠে এসে বাজেটের প্রসঙ্গটি।

সামাজিক ও ফোক ফ্যান্টাসি ছবি নির্মাণের জন্য পরিচিত দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। দর্শক চাহিদার কথা ভেবে রোমান্টিক ছবি নির্মাণে নামের সেইবার। ১৯৮১ সালে বলিউডে রাজ বব্বর ও আনিতা রাজ অভিনীত ‘প্রেম গীত’ নামটিই নিলেন ঝন্টু। মূল তিন চরিত্রে বাপ্পারাজ ও ওমর সানীর সঙ্গে নায়িকা নির্বাচিত করেন নবীন নায়িকা লিমাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাপ্পারাজ তখন বাবা নায়করাজ রাজ্জাকের বলয় থেকে বেরিয়ে অন্য নির্মাতাদের ছবি করা শুরু করছেন। ‘চাঁদের আলো’র পর নবীন ওমর সানীকে পছন্দ করতে শুরু করেছে তরুণরা। ক্যারিয়ারের বাঁক বদলের সে সময়ে এই ছবির প্রস্তাব পেয়েই লুফে নেন সানী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম বাপ্পারাজকে প্রস্তাব দেওয়া হয় রাজু চরিত্রে অভিনয়ের, কিন্তু বাপ্পা পছন্দ করেন শহুরে যুবক ভিকির চরিত্র। তবে ছবি মুক্তির পর ওমর সানীর করা ট্র্যাজেডি নায়কের চরিত্রটিই বেশি আলোচিত হয়েছিল। ১৯৯৩ সালের ১৯ নভেম্বর মুক্তির পর ছবিটি নিয়ে চারদিকে শোরগোল পড়ে যায়। দারুণ ব্যবসাসফল হয়। নব্বইয়ের দশকে যে রোমান্টিক ধারার ছবির জয়জয়কার শুরু হয়, সেই ধারার অন্যতম সফল ছবি ‘প্রেম গীত’।

এই ছবি ও ছবির গানের জনপ্রিয়তা গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষভাবে আলোচনায় আসে সংগীত পরিচালক আনোয়ার জাহান নান্টুর সুরে ‘সুখের নীড়ে আমি পথহারা পাখি’ ও ‘আমার সুরের সাথী আয় রে’।

মুক্তির দিক থেকে নায়িকা লিমার ৬ নম্বর ছবি ‘প্রেমগীত’। তবে এই ছবি দিয়েই তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। এস.ডি. প্রোডাকশনের ব্যানারে শাহজাহান আখন্দ পরিচালিত ছবি ‘নাগ নাগিনীর প্রেম’-এর শুটিংয়ে লিমাকে প্রথম দেখেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তখনিই লিমাকে ‘প্রেমগীত’-এর নায়িকা হিসেবে চূড়ান্ত করেন। ১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্রকে বিদায় জানানোর আগ পর্যন্ত দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘জজ ব্যারিস্টার’, ‘গরীবের সংসার’সহ বেশ কয়েকটি ছবির নায়িকা হয়েছেন লিমা। রুবেলের সঙ্গে বেশি ছবি করলেও সালমান শাহর সঙ্গে ‘প্রেমযুদ্ধ’ ও ‘কন্যাদান’ ছবির জন্য তাঁকে স্মরণ করেন দর্শক। এমনকি ‘হাবিলদার’ ছবিতে ডিপজলের (তখন তার নাম ছিল ডিপু) নায়িকা হয়েছিলেন লিমা। ‘প্রেমগীত’ দারুণ ব্যবসাসফল হলেও সানী-লিমা জুটিকে আর পর্দায় দেখেনি দর্শক। পরে জীবন রহমানের ‘হুলিয়া’ ছবিতে তাঁরা হয়েছেন ভাই-বোন।বরং বাপ্পা-লিমা জুটিকে দেখা গেছে কয়েকটি ছবিতে। ‘প্রেমগীত’-এ প্রথমবারের মতো প্রধান ভিলেনের চরিত্র করে নজর কাড়েন গাঙ্গুয়া।

সাধরণত অল্প দিনেই ছবির নির্মাণ সম্পন্ন করেন ঝন্টু। ‘প্রেমগীত’ও তাই, মাত্র ২০-২৫ দিন শুটিং করেছেন। বরাবরের মতো এই ছবির কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য, গীত রচনাও করেছেন তিনি। প্রযোজনায় এস. ডি. প্রোডাকশনস। প্রযোজক শহিদুল হক শিকদার আত্মীয় হন ঝন্টুর। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই প্রযোজনা সংস্থা এস. ডি. প্রোডাকশনস গড়ে তোলেন ঝন্টু। ‘শিমুল পারুল’, ‘পালকি’ ও ‘প্রেমগীত’ এই সংস্থার অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ছবি। পরে এই ব্যানার থেকে ‘বিদ্রোহী বধূ’, ‘লাট সাহেবের মেয়ে’ও নির্মিত হয়।

নারায়ণগঞ্জের একটি সিনেমা হলে টানা এক বছর চলেছিল ছবিটি। ১৬ বছর পর ২০০৯ সালে এই ছবির গল্পের আদলে শাকিব খান-অপু বিশ্বাসকে নিয়ে ‘ও সাথীরে’ নির্মাণ করেন যুগল পরিচালক সাফি ইকবাল। এখানেও একই চরিত্রে অভিনয় করেন বাপ্পারাজ। তবে ছবিটি প্রেমগীতের মতো সফল হয়নি।

ঝন্টু বলেন, আমি কখনোই দীর্ঘ পরিকল্পনা করে ছবি বানাই না। আমাদের প্রোডাকশন হাউজের একটি ছবিতে লিমাকে দেখে তাকে এই ছবি বানানোর পরিকল্পনা করে ফেলি। দেখতে ছোটখাটো মিষ্টি চেহারার একটি মেয়ে ও। যেহেতু নতুন নায়িকা তাই ভাবলাম রোমান্টিক সিনেমা বানাব। সাধারণত তখনকার বেশিরভাগ ছবিগুলোর বাজেট থাকতো ৪০-৫০ লাখ টাকা, কিন্তু ১৫-২০ লাখ টাকার মধ্যে সুন্দর ছবি বানিয়ে ফেলতে পারতাম আমি। এই ছবির বাজেটও তেমনই। প্রচুর ব্যবসা দিয়েছে এই ছবি। লাভের পরিমাণ কত, সেটা এখন আর বলতে পরব না।

আরো বলেন, মাঝে ‘প্রেমগীত’ রিমেকের কথা ভেবেও সরে আসি। এখন আবার রিমেক করার ইচ্ছা জেগেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ছবি থেকে প্রযোজক সংস্থা বেশ বড় অংকের টাকা লাভ করে। নিজের অংশের লভ্যাংশ থেকেই মগবাজারে ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেন ঝন্টু। এখানে অবশ্য পরিচালকের মুখ থেকে কথাটি আসেনি।


মন্তব্য করুন