ফারুকের এক ডজন সিনেমা
‘মিয়াভাই’ অভিধায় ফারুক গ্রামীণ চরিত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পান। রোমান্টিক ঘারানা ছিলেন সফল। তেমনি প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে দেখা গেছে বেশির ভাগ সিনেমায়। আবার অভিমানী বা পরিবার অন্তপ্রাণ চরিত্রে হাজির হয়েছেন। সঙ্গে ছিল হৃদয়কাড়া হাসি। তার শতাধিক সিনেমা থেকে এক ডজন বেছে নেওয়া অবশ্যই কঠিন। সেখান থেকে পরিচিতি কিছু ছবির তথ্য দেয়া হলো। যা কোনোভাবে সেরা সিনেমার তালিকা নয়।
আবার তোরা মানুষ হ (১৯৯৩)
মুক্তিযুদ্ধের বছরে ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে বড়পর্দায় পা রাখেন। যুদ্ধের পর অভিনয় করেন এই ঐতিহাসিক নির্মাণে। সাতজন অভিনেতা ছিলেন মূল ভূমিকায়। তাদের একজন ফারুক। সিনেমার কাহিনির মতো ফারুকও বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন। খান আতাউর রহমানের সিনেমাটি নানা কারণে রোষের শিকার হয়েছে। তবে ফারুক বরাবরই এই নির্মাতার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন।
লাঠিয়াল (১৯৭৫)
এ সিনেমার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে পরিচিত পান ফারুক। বলা যায়, প্রথম ব্যবসাসফল ছবির মাধ্যমে গ্রামীণ চরিত্রে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সেই অ্যাংরি ইয়ংম্যান অভিধায় তাকে আজো স্মরণ করা হয়। তার কণ্ঠে ‘মিয়া ভাই’ সংলাপটি জনপ্রিয় হয়। নারায়ণ ঘোষ মিতার এই ছবিতে দুখু মিয়ার চরিত্র করে পার্শ্বচরিত্রে জাতীয় পুরস্কার পান। বিপরীতে ছিলেন ববিতা।
সুজন সখী (১৯৭৫)
ঢালিউডের তিনটি সেরা রোমান্টিক ছবির তালিকা করলেও ‘সুজন সখী’ থাকবে। বলা যায়, ফারুককে স্থায়ী ভিত্তি দেয়। খান আতাউর রহমান পরিচালিত এ সিনেমা নানা কারণে আইকনিক। গান থেকে শুরু করে ফারুকের সুজন নামটিও। নায়িকা ছিলেন কবরী। সিনেমার ‘সব সখী রে পার করিতে’ গানে এখনো জনপ্রিয়। প্রায় দুই দশক পর ‘সুজন সখী’র রিমেকে অভিনয় করেন সালমান শাহ-শাবনূর।
নয়নমণি (১৯৭৬)
শুরুতেই খান আতাউর রহমান, মিতা, কাজী জহিরের মতো মাস্টার নির্মাতাদের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন ফারুক। তাদের আরেকজন আমজাদ হোসেন। ফারুকের বিপরীতে ছিলেন ববিতা। এটিও আইকনিক রোমান্টিক সিনেমা। দুই দশক পর রিমেকে অভিনয় করেন শাবনূর ও ওমর সানী।
এ ছাড়া আমজাদ হোসেনের নারীকেন্দ্রিক ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমায়ও অভিনয়ে করেন ফারুক। এ ছবির নায়িকাও ববিতিা।
সূর্যগ্রহণ (১৯৭৬)
আব্দুস সামাদের দুই খণ্ডের সিনেমার প্রথম অংশ ‘সূর্যগ্রহণ’। উচ্চাভিলাষী এই রাজনৈতিক সিনেমায় ইন্ডাস্ট্রির গুরুত্বপূর্ণ তারকদের সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করেন ফারুক। ঐতিহাসিক সিনেমাটি নিয়ে আজকাল আলোচনা না হলেও এর আবেদন কমেনি। দ্বিতীয় খণ্ড ‘সূর্যসংগ্রাম’ মুক্তি পায় ১৯৭৯ সালে।
সারেং বৌ (১৯৭৮)
শহীদুল্লা কায়সারের ‘সারেং বৌ’ উপন্যাসটি বাংলায় ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় সারেং কদম চরিত্রে অভিনয় করেন ফারুক। তবে মূল ফোকাস পান নবিতন চরিত্রে কবরী। আবদুল জব্বারের গাওয়া ফারুকের লিপে ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি বাংলা সিনেমার মূল্যবান এক সম্পদ।
সাহেব (১৯৭৯)
নারায়ণ ঘোষ মিতার জনপ্রিয় এ সিনেমার প্রাণ ফারুকের অভিমানী ও কর্তব্যপরায়ণ তরুণ চরিত্রে অভিনয়। পরেও তাকে এ ধারায় দেখা গেছে। সঙ্গে ছিলেন রোজিনা। তারা বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সিনেমায় কাজ করেছেন।
নাগরদোলা (১৯৭৯)
অল্প কয়েকটি সিনেমা নির্মাণও করে অমর হয়ে আছেন বেলাল আহমেদ। যার একটি ‘নাগরদোলা’। ফারুকের বিপরীতে ছিলেন সুচরিতা। এ ছবির ‘তুমি আরেকবার আসিয়া’ গানটি বেশ জনপ্রিয়।
ঝিনুকমালা (১৯৮৫)
ফারুক অভিনীত আরেকটি আইকনিক সিনেমা। আব্দুস সামাদ খোকনের পরিচালনায় নায়িকা ছিলেন নিপা মোনালিসা। এ সিনেমা মূলত গানের জন্য পরিচিত। যার অন্যতম ‘চোখের জলে আমি ভেসে চলেছি’, ‘তুমি আমার মনের মাঝি’ ও ‘তুমি ডুব দিও না’। সিনেমাটির রিমেক হয়েছে কলকাতায়।
মিয়া ভাই (১৯৮৭)
এবার ফারুক নিজেই ‘মিয়া ভাই’। পরিচালনা ছিলেন জনপ্রিয় নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম ও প্রযোজক ফারুক নিজেই। নায়িকা ছিলেন ববিতা।
পালকি (১৯৯০)
দেলোয়ার জাহান ঝন্টু নির্মাণ করেছেন অর্ধশত সিনেমা। তবে স্মরণীয়ের তালিকা করলে যে অল্পকটি থাকবে তার অন্যতম পালকি। এ সিনেমায় দ্বৈত চরিত্রে ছিলেন সুনেত্রা। আরেকটি চরিত্রে ছিলেন পরবর্তীকালের সুপারস্টার মান্না।
বন্ধু আমার (১৯৯২)
আওকাত হোসেনের এই সিনেমা মূলত ‘বন্ধু আমার’, ‘ভালোবাসি ভালোবাসি’র মতো জনপ্রিয় গানের জন্য পরিচিত। সুর্নিমিত এ সিনেমায় ফারুকের নায়িকা ছিলেন রোজিনা। ছিলেন জাফর ইকবাল ও সুনেত্রা।
ফারুক মূল ভূমিকায় না থাকলেও জীবন সংসার (১৯৯৬) সিনেমার কথা বলতে হয়। কারণ এ সিনেমার মাধ্যমে এখন অনেক তরুণের কাছে পরিচিত তিনি।
বাংলা সিনেমার যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের অবহেলার কারণে তার অনেক সিনেমা দেখা থেকে দর্শক বঞ্চিত। এ ছাড়া আলোর মিছিল, তৃষ্ণা, কথা দিলাম, চোখেন মণি, শিমুল পারুল, মাটির মায়া, মধুমতি, নদের চাঁদ, জনতা এক্সপ্রেস, দোস্তী, দিন যায় কথা থাকের মতো স্মরণীয় সিনেমার অভিনেতা তিনি।