বগুড়ায় চালু হতে যাচ্ছে সিনেপ্লেক্স মধুবন
করোনাতে হলগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা এলেই উদ্বোধন হবে বগুড়ার নতুন সিনেপ্লেক্স মধুবন। সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হলটির পরিচালক শায়েখুজ্জামান মোহাম্মদ ইউনুস।
তিনি জানান, একটি স্ক্রিনের কাজ শেষ। প্রজেক্টর স্থাপন করলেই এটি চালু করা যাবে। এছাড়া অপর একটি স্ক্রিনের কাজ দ্রুতই শুরু হবে।
বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী ‘মধুবন’ হলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৯৬৯ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় হলটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে ১৯৭৪ সালে। ২০১৩ সালের দিকে উত্তরাধিকার সূত্রে হলটির প্রতিষ্ঠাতা লে.কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আশরাফুজ্জামান ইউনুসের ছেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সদস্য রোকনুজ্জামান মো. ইউনুসের হাতে হলের মালিকানা আসে। বর্তমানে তার দুই ছেলে শাইকুজ্জামান ও আকিবুজ্জামান হলের দেখভালের দায়িত্বে আছেন।
জানা গেছে, দাদা লে.কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আশরাফুজ্জামান ইউনুসের প্রতিষ্ঠা করা বগুড়ার বিখ্যাত মধুবন সিনেমা হলটিই মূলত সিনেপ্লেক্স হিসেবে যাত্রা করছে। এখানে আপাতত একটিই স্ক্রিন থাকছে। আগামীতে ব্যবসা ও দর্শক চাহিদার উপর নির্ভর করে স্ক্রিনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। সেইসঙ্গে ২০১৭ সালে সংস্কারের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া হলটির আসন সংখ্যা কমিয়ে ৮৮৭ থেকে ৩৪০টি করা হয়েছে। তবে চীন থেকে আমদানি করা এই চেয়ারগুলো বেশ আধুনিক ও আরামদায়ক।
মধুবন সিনেপ্লেক্সে সুবিধাদির মধ্যে থাকছে ডিএলপি সিনেমা প্রজেকশন সিস্টেম, ভারতের মুম্বাই থেকে আনা গ্যালাইট কম্পানির স্ক্রিন, শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। সেইসঙ্গে দর্শকরা পাবেন গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা ও খাবারের জন্য ফুডকোর্ট। দেশীয় সিনেমার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য সিনেপ্লেক্সগুলোর মতো হলিউডের ছবি প্রদর্শনী করারও পরিকল্পনা রয়েছে মধুবন সিনেপ্লেক্সের।
শায়েখুজ্জামান বলেন, ‘অনেক বড় পরিকল্পনা নিয়ে মধুবনকে সিনেপ্লেক্স করা হয়েছে। এর সঙ্গে বগুড়ার মানুষের দীর্ঘকালের আবেগ জড়িত। সিনেপ্লেক্স হিসেবে এটিকে সংস্কারের পর থেকেই খুব ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সরকার করোনা পরবর্তী হল খেলার ঘোষণা দিলেই সিনেপ্লেক্সটি চালু করে দেয়া হবে।’
একটা সময় বগুড়া জেলার আশেপাশ থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ এই জেলা সদরে সিনেমা দেখতে আসতেন। ধীরে ধীরে সে সংখ্যা কমতে থাকে। তবে মধুবন ফের আগ্রহ তৈরি করেছে, সিনেমা হলের মান বাড়লে মানুষ সিনেমা হলে যাবে বলে জানাচ্ছেন বগুড়ার স্থানীয়রা।
২০১৫ সালে শাকিব খানের ‘লাভ ম্যারেজ’ ছবি প্রদর্শনের সময় এই হল পরিচালক বুঝতে পারেন সিনেমা হলের দর্শক এখনও আছে। ২০১৬ সালে ‘আয়নাবাজি’ প্রদর্শনের সময় শায়েখুজ্জামান কিছুটা লজ্জায় পড়ে যান। কারণ নোংরা পরিবেশ, ভাঙা চেয়ার, গরমের মধ্যেও যে পরিমাণে দর্শক হলে আসছে তিনি কল্পনাও করেননি। বিশেষ করে শিক্ষিত শ্রেণির দর্শক দেখে তিনি মুগ্ধ হন। এরপর আলোচনা ও পরিকল্পনা শেষে ২০১৭ সালে হলটি মাল্টিপ্লেক্সে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়।
হলের এই স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে অবিরত হলের কাজ চলেছে। আসন, গ্যালারি, লবি- সবই নতুন করে তৈরি করা। আমরা মুম্বাই থেকে স্ক্রিন এনেছি। এখন যে সাউন্ড সিস্টেম আছে তা দিয়ে বাংলা ছবি চালানো সম্ভব। কিন্তু আমরা হলিউড মানের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করব। এটি নতুন করে বসানো হবে। এছাড়া প্রোজেক্টরটি স্থাপন করলেই মধুবন সিনেপ্লেক্স বিশ্বের আধুনিক প্রেক্ষাগৃহের রূপ পাবে। এগুলো করতে বেশি সময় লাগবে না। করোনা মহামারির পর প্রেক্ষাগৃহ খোলার একটি ঘোষণা আসবে। আমরা এর মধ্যেই কাজগুলো করে ফেলব। আশা করি, এক মাসের মধ্যেই মাল্টিপ্লেক্সটি উদ্বোধন হবে।’
জানান, হলের টিকিট মূল্য নির্ভর করবে চলচ্চিত্রের ওপর। ৬০ শতাংশ বাংলা ছবির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ছবিগুলো এখানে প্রদর্শনের ইচ্ছে মধুবন কর্তৃপক্ষের।