Select Page

বর্ষসেরা কমার্শিয়াল ‘মিশন এক্সট্রিম’

বর্ষসেরা কমার্শিয়াল ‘মিশন এক্সট্রিম’

বছরের সেরা কমার্শিয়াল ছবি ‘মিশন এক্সট্রিম’। ফয়সাল আহমেদ ও সানী সানোয়ারের যৌথ পরিচালনায় ছবিটি নির্মিত হয়েছে। সানী সানোয়ারের বয়ানে জানা গেছে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাস্তব কিছু অপারেশনের একটা টোটালিটি উঠে এসেছে এ ছবিতে। একটি কমার্শিয়াল ছবি যেসব বৈশিষ্ট্যে নির্মিত হলে পরিপূর্ণতা পায় তার সবকিছুই এ ছবিতে ছিল এবং বছরের কম কমার্শিয়াল ছবির ভিড়ে স্টোরি ও এক্সিকিউশনে এটি বছরসেরা ছবি।

‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির ফিনিশিং-এ ‘মিশন এক্সট্রিম’-এর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল এবং তার পর থেকেই সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড বাস্তবতা পেরিয়ে অবশেষে মুক্তি পেয়েছে। রোগ, শোকের এ সময়টিতে চলচ্চিত্রের মতো বড় বিনোদনটি ঝুলে পড়েছিল আর আমাদের দেশে তো আরো বেশি যেখানে সিনেমাহলের পরিস্থিতি ভালো না। এই বাস্তবতায় বড় বাজেটের

‘মিশন এক্সট্রিম’ অবশ্যই বিশেষ কিছু এ মুহূর্তে। ছবির ট্যাগলাইন দেয়া হয়েছে ‘a war against invisible enemy’.

ছবির গল্পটি সর্বজনীন। সারাবিশ্বেই ছড়িয়ে থাকা একটি বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। সমস্যাটিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুলিশ অ্যাকশন ক্রাইমের আদলে এক্সিকিউট করা হয়েছে। সমস্যাটিকে তুলে ধরতে ইতিহাসভিত্তিক একটা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টেশন দেয়া হয়েছে ছবির শুরুতে যেটি ছবির থিমকে ধরতে সাহায্য করবে দর্শককে।

পুলিশ অ্যাকশন ক্রাইমের প্রেজেন্টেশনে একদম রুট লেভেল থেকে সর্বোচ্চ টার্গেট পর্যন্ত যেতে যে ধরনের সরেজমিন তদন্ত বা ঘটনাবলি দেখাতে হয় তার সবকিছুই স্তরে স্তরে দেখানো হয়েছে। ক্রাইম, ক্রাইমের মোটিফ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপারেশন ডিটেইল এসেছে।

ছবি মাল্টিকাস্টিং। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর বড় পরিসরে মাল্টিকাস্টিং ছবি হলো আবার।

আরিফিন শুভ, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, সাদিয়া নাবিলা, তাসকিন রহমান, শতাব্দী ওয়াদুদ, সুমিত সেনগুপ্ত, মাজনুন মিজান, শামস সুমন, মনোজ প্রামাণিক, ইরেশ যাকের, আরেফ সৈয়দ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, খালেকুজ্জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু, রাশেদ মামুন অপু, সুদীপ কুমার দীপ, সৈয়দ নাজমুস সাকিব, ডেইজি আহমেদ, আহসানুল হক মিনু, সৈয়দ হাসান ইমাম এভাবে অনেক তারকার সমাবেশ ঘটেছে। কাস্টিং-এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সব চরিত্রের জন্যই তাদের নির্ধারিত পর্যাপ্ত স্ক্রিনটাইম ছিল।

আরিফিন শুভ-র নায়কোচিত পারফরম্যান্স পুরো ছবিতে। লুক, ফিটনেসের দারুণ উপস্থিতির পাশাপাশি তার অভিনয়ও অনেক উন্নতি ঘটেছে।জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী-র প্রথম ছবি হিসেবে যথেষ্ট ন্যাচারাল অভিনয় ছিল, তার ভয়েসের মিষ্টতা লক্ষণীয়। মূল নায়িকা ঐশীর তুলনায় সাদিয়া নাবিলার অভিনয় আকর্ষণ করেছে বেশি। তাসকিন রহমান ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর মতো রহস্যময় অতটা না হলেও তার চরিত্র স্ট্রং ছিল আর অভিনয়েও ব্যক্তিত্ব বজায় রেখেছে যাকে কুল ভিলেন বলা যায়। ইরেশ যাকেরের চরিত্রটি দারুণ বিশেষ করে তার অভিনয় টাচি। সিনিয়র অভিনেতার দিক থেকে রাইসুল ইসলাম আসাদকে অনেকদিন পর ছবিতে পাওয়া ভালো বিষয় ছিল। শতাব্দী ওয়াদুদ থেকে শুরু করে সুদীপ কুমার দীপ, সুমিত পর্যন্ত ন্যাচারাল পারফরম্যান্স সবার। প্রথমবারের মতো বড়পর্দার মতো জায়গায় সৈয়দ নাজমুস সাকিবের অভিনয়ও ন্যাচারাল।

গানে আরিফিন শুভ-র ‘অ্যাকশন র‍্যাপ’ সেরা। ‘জানি তুমি ছিলে’-র ট্র্যাক বেশ রোমান্টিক। ‘নাগর আমার কাঁচা পিরিত’ জমেনি। বিজিএম খুবই ভালো ছিল দৃশ্য অনুযায়ী পারফেক্ট। কালার গ্রেডিংও ভালো। সংলাপে ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে’ গভীর ছিল এবং বর্তমান সমাজবাস্তবতায় প্রাসঙ্গিক যেখানে নিরাপত্তা বিষয়টি খুব অধরা।

নেগেটিভ দিক বললে দর্শকভেদে থাকবে। পার্শ্ব অভিনয়শিল্পী বিশেষ করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের অভিনয় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিনই বটে। সেগুলো ক্ষেত্রবিশেষে চোখে লাগতে পারে। অপারেশনের দৈর্ঘ্য নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকলেও থাকতে পারে।

বাংলাদেশের ডিজিটাল চলচ্চিত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর কমার্শিয়াল ছবির প্রচলন শুরু হয়েছে এটা ভালো দিক। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর পর ‘মিশন এক্সট্রিম’ এ বিষয়ের উপর আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হয়ে থাকল। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র‍্যাব, নৌবাহিনী এমনকি আনসার বাহিনীর উপরেও কমার্শিয়াল ছবি হওয়া উচিত এতে করে তাদেরও অনেক সাহসিকতার গল্প দর্শক জানবে। ‘মিশন এক্সট্রিম’ বছরের সেরা কমার্শিয়াল ছবি এটা নিশ্চিত।

আপাতত অপেক্ষা ‘মিশন এক্সট্রিম ২’-এর।

রেটিং – ৮/১০


মন্তব্য করুন