বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিবর্তনে একজন অভিনয় শিল্পীর সীমাবদ্ধতা
একজন শিল্পীর সৃষ্টির পেছনে একজন সুরকারের অনেক অবদান। সুরকারের হৃদয় দিয়ে করা সব সুর উজার করে দিয়ে যখন একটি গান তৈরি করেন তখন সেটি সফলতা লাভ করতে পারে দুটি কারনে এক যাকে দিয়ে গানটি গাওয়ানো হচ্ছে সেই শিল্পী যদি সুরকারের অন্তর আত্নার সাথে মিশে গিয়ে যদি গানটি করতে পারে এবং সেই গানটি যদি শ্রোতাদের কাছে ভাল লাগে।
একজন পুতুলের কারিগর যখন মাটিকে পুতুলে রুপ দান করেন তখন তখন তিনি তার মনের মাধুরী মিশিয়ে সেটি তৈরি করেন। কারিগরের দক্ষতার উপর পুতুলের জনপ্রিয়তা নির্ভর করে।
একজন চলচ্চিত্রের কারিগর একজন পরিচালক। এখন তার সিনেমায় একজন নায়ক কিংবা নায়িকা শুধু একটা পুতুল মাত্র। জাস্ট একটা পুতুল নাচ খেলার মত একটা পুতুল। পরিচালক যেভাবে চাইবেন সেইভাবে পুতুল নাচ দেখবে দর্শক।
একজন অভিনেতা কিংবা নায়ক যাই বলি না কেন তার কাজ নিশ্চয়ই গল্প লেখা না, সিনেমাতে আর কে অভিনয় করল সেটা দেখা না। কিন্তু তার একটি বিষয় দেখার আছে সেটি ভাল চিত্রনাট্য বাছাই করা। তবে সেটি মৌলিক কিনা সেটা সেই অভিনেতার ধরার কোন উপায় নাই।
কিন্তু একজন অভিনেতা যদি ভাল পরিচালক না পায়? তাহলে সে কি করবে? যদি ভাল চিত্রনাট্য না পায়? যদি ভাল গল্প না পায়? ভাল নৃত্য পরিচালক না পায়? যদি ভাল সুরকারের গান না পায়? যদি ভাল অ্যাকশন পরিচালক না পায়? ছবির অন্যান্য কলাকুশলী যদি ভাল না হয় ? তখন কি করবে? তখন কি সেই নায়ক একাই সব করবে? না সেটা সম্ভব না। তাহলে কেন আপনারা একজন নায়ককে দোষ দিয়ে থাকেন? একজন নায়ক কখনই একা একটি ইন্ড্রাস্ট্রির উন্নতি সাধণ করতে পারেনা। আজকে যদি বাংলাদেশের সব ছবিগুলো পিকে, থ্রি ইডিয়ট, তারে জামিন পার, মাই নেম ইজ খান, বাজরাঙ্গি ভাইজান সহ বলিউড মানের হয় তাহলে কি বাংলাদেশের একমাত্র সুপারস্টার সেই ছবি গুলো বাদ দিয়ে বলো না কবুল, রাজা ৪২০ কিংবা চৌধুরী সাহেব আমি গরিব হতে পারি কিন্তু ছোট লোক নই এই টাইপের ছবি করবেন? আজকে যদি প্রতিনিয়ত ডাক্তার বাড়ি, সুভা, সত্তা, মা আমার স্বর্গ, মেন্টাল, সম্রাট, অপারেশন অগ্নিপথ, শিকারি, ভালবাসলেই ঘর বাধা যায় না কিংবা আমার স্বপ্ন তুমি মানের ছবি গুলো হয় তাহলে শাকিব খান কি পারবেন সেগুলো বাদ দিয়ে গতানুগতিক গল্পের ছবি করতে? আসলে শাকিব খান সেই মানের ছবিই করবেন যেই মানের ছবি হচ্ছে কিংবা যে মানের ছবি সামনে হবে।
আসলে আমরা যখন সাবিনা ইয়াসমিন কিংবা রুনা লায়লা কে নিয়ে গর্ব করি তার পেছনে যে আলম খান, সত্য সাহা, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সহ অনেক গুনি সুরকারের হাতে রয়েছে সেটা কি কখনও বলি?
আমরা যখন নায়ক রাজ রাজ্জাক, আলমগীর, জাফর ইকবাল, সালমান শাহ্, মান্না নিয়ে কথা বলি তাদের তৈরির কারিগর সেই সব আমজাদ হোসেন, সুভাষ দত্ত, জহির রায়হান, আজিজুর রহমান, কাজী হায়াৎ, শিবলি সাদিক, ইবনে মিজান সেই সব কালজয়ী পরিচালকদের কথা বলি? আমরা বলি সেই সময়কার নায়কদের কথা নায়িকা দের কথা, অমুক বেচে থাকলে ইন্ড্রস্টির এই অবস্থা হতো না। আসলে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা ছাড়াও অনেকে আছেন যাদের কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। সত্যি কথা বলতে কি সেই সব পরিচালকদের কেউ কেউ এখনও বেচে আছেন, এমনকি আমাদের নায়ক রাজ রাজ্জাক এখনও বেচে আছেন তার পরেও কেন চলচ্চিত্রের এই দুর্দশা? আসল কারন ব্যাটে বলে মিলছে না। এখন পুরনো পরিচালকদের দুই একজন যারা এখনও বেচে আছেন তারাও ছবি নির্মাণ করলেও ভাল গল্প পাবেন না, পাবেন না ভাল সুরকার। তাহলে বানাতে পারবেন কালজয়ী চলচ্চিত্র? না সেটা সম্ভব না। সিনেমার সব গুলো বিভাগ যখন যুগের চাইদা অনুযায়ী হবে, যখন গল্প গুলো আমাদের দেশের হবে তখন হয়তো সিনেমা হলে সব শ্রেনির মানুষের ঢল নামবে।
তাই কথার সারমর্ম দাড়ায় – সালমান খান, শাহরুখ খান, আমির খান কিংবা রজনীকান্ত বাংলাদেশে জন্ম নিলে তারা আমির,শাহ্রুখ কিবা রজনী হতে পারতেন না। তাদের কোটি কোটি ফলোয়ার থাকতো না। হয়তো তারা আমাদের ফেসবুক প্রজন্মের ট্রলের উপকরণ হতেন কিনা খেতেন সেই মাপের পচানি !
তারপরও ইন্ড্রাস্টির পরিবর্তনে একজন সুপারস্টার অনেক ভুমিকা রাখতে পারেন। সেটা একজন সাধারন নায়কের পক্ষে সম্ভব না।
এখন এ পর্যন্তই আগামীতে কথা বলব আমাদের ইন্ড্রাস্টির পরিবর্তনে একজন সুপারস্টারের ভুমিকা কতটুকু?
আপনার কথাগুলো পছন্দ করা ও ভাবার মত ।
ধন্যবাদ 🙂