বাংলাদেশি শরণার্থীদের সাহায্যার্থে বিমান ছিনতাই: ফরাসি মুক্তিযোদ্ধার গল্প সিনেমায়
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অভিনব এক গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন ভুবন মাঝি ও গণ্ডি-র নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খান। খবরটি প্রথমে প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। পত্রিকাটি ‘জঁ ক্যা’ শিরোনাম জানালেও বাংলাট্রিবিউন উল্লেখ করেছে ‘১৯৭১ এবং কুয়ে’।
২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি ‘দুঃসাহসী সেই ফরাসি মুক্তিযোদ্ধার সন্ধানে’ শিরোনামে একটা লেখা ছাপা হয় প্রথম আলোয়। লেখাটি নাড়া দিয়েছিল পরিচালক ফাখরুলকে। তখন থেকেই সেই প্রতিবেদনের লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিবেদনের প্রধান মুখ জঁ ক্যা সম্পর্কে সব তথ্য জড়ো করলেন।
চার বছরে এই নির্মাতার গবেষণা শেষ হয়েছে। এবার জঁ ক্যাকে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ‘১৯৭১ এবং কুয়ে’ শিরোনামে সিনেমার শুটিং শুরু করবেন। তবে এর আগে এই পরিচালক ফ্রান্সে যাবেন। সেখানকার থিয়েটার আর্টিস্টদের অডিশন নিয়ে প্রধান কিছু চরিত্রের জন্য অভিনেতা বাছাই করবেন। শুটিং হবে ফ্রান্সে আর ভারতের ‘ফ্রেঞ্চ ইন্ডিয়া’র চার এলাকার একটি, পদুচেরিতে।
এবার আসা যাক মূল কাহিনীতে— ৪৯ বছর আগের কথা। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) ‘সিটি অব কুমিল্লা’ নামের একটি বোয়িং-৭২০বি বিমান অবতরণ করল প্যারিস অরলি বিমানবন্দরে। ১৭ জন যাত্রী ও ৬ জন ক্রু নিয়ে বিমানটি লন্ডন থেকে প্যারিস, রোম ও কায়রো হয়ে করাচি যাবে। এর মধ্যে পাঁচজন যাত্রী প্যারিস থেকে উঠবেন। ওই পাঁচজনের সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যূহ পেরিয়ে বোয়িংটিতে উঠে বসলেন ২৮ বছর বয়সী যুবক জঁ ক্যা। আর ঘটালেন ঐতিহাসিক এক ঘটনা, হলেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম।
ওই দিন বেলা ১১টা ৫০ মিনিট। পাইলট আকাশে ওড়ার প্রস্তুতি হিসেবে বিমানটি চালু করতেই পকেট থেকে পিস্তল বের করে জঁ ইঞ্জিন বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন। কেউ তাঁর নির্দেশ অমান্য করলে সঙ্গে থাকা বোমা দিয়ে পুরো বিমানবন্দর উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন তিনি। (আসলে জঁর সঙ্গে কোনো বোমা ছিল না!) ওয়্যারলেসটি কেড়ে নিয়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষের মাধ্যমে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে জঁ নির্দেশ দিলেন। বিমানটিতে যাতে ২০ টন ওষুধ ও চিকিত্সাসামগ্রী তুলে তা যুদ্ধাহত ও বাংলাদেশি শরণার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশ পৌঁছে যায় বিমানবন্দরে। জঁর কথামতো মালামাল তোলার একফাঁকে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য উঠে পড়েন প্লেনটিতে। তারা জঁকে গ্রেপ্তার করে। যদিও তাঁর কথামতো ফরাসি সরকার রেডক্রস ও আরেক ফরাসি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অর্ডি দ্য মানতে’র সহায়তায় ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী পাঠিয়েছিল। এবার সত্যিকারের এ ঘটনা দর্শক মাথা উঁচু করে দেখবে বড় পর্দায়। ফাখরুল আরেফিন খান বললেন, ‘৩ ডিসেম্বরের ঘটনা। আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের ৩ তারিখে ছবিটা মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা আছে।’
বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কিছু একটা করার উপায় খুঁজতে গিয়েই বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা আঁটেন তিনি। আর সত্যিকার জীবনের এই হিরো সেদিনই তৈরি করে দিলেন ‘১৯৭১ এবং কুয়ে’ সিনেমার প্লট।