বাংলাদেশে নতুন বাজার, বলিউডে ভীষণ সাড়া
বিশ্বের শতাধিক দেশে হিন্দি সিনেমা চললেও পাশের দেশ বাংলাদেশ এতদিন ব্যতিক্রম ছিল। সেই মিছিলে যোগ দিয়ে বলিউডকে নতুন বাজার উপহার দিল বাংলাদেশের ‘চলচ্চিত্রবান্ধব’ নির্মাতা ও প্রদর্শকরা। আর ১৮ কোটি মানুষের বাজার পেয়ে ভীষণ খুশি বলিউডও।
অনেক দিন ধরে চেষ্টার পর বাংলাদেশের বাজারে ঢোকার সুযোগ পেয়েছে বলিউড। স্বভাবতই সেই খবরের গুরুত্ব অনেক। আন্তর্জাতিক সিনে পত্রিকা ভ্যারাইটি থেকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে সেই খবর।
শুরুতে আসতে থাকা ‘পাঠান’-এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যশরাজ ফিল্মসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘‘১৯৭১ সালের পর এই প্রথম কোনও হিন্দি মুভি বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পাবে। ‘পাঠান’কে এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ।’’
বলিউড সাময়িকী ফিল্মফেয়ারের পক্ষ থেকে টুইট করা হয়েছে, ‘‘শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম হিন্দি ভাষার কোনও টাইটেল সে দেশে থিয়েট্রিকাল রিলিজ পাবে।’’
বলিউডের সুপরিচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ‘ভাইরাল ভায়ানি’ ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন, ‘‘পাঠান’ হবে বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া প্রথম হিন্দি ছবি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার হিন্দি ছবির প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তবে এখন তা তুলে নেওয়া হয়েছে।” তবে এ দাবিতে বেশ কিছু তথ্যগত ভুল আছে।
যশরাজ ফিল্মসের পক্ষ থেকে যিনি আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিবিউশনের দিকটি দেখেন, সেই নেলসন ডি’সুজা বলেছেন, ‘বিভিন্ন দেশ, জাতি আর সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে সিনেমা। সিনেমার আবেদন সীমান্ত পেরিয়ে যায়, মানুষকে কাছাকাছি আনতেও বিরাট ভূমিকা পালন করে এই মাধ্যম।’
তিনি আরও জানান, ‘‘সারা পৃথিবীতে ঐতিহাসিক ব্যবসা করার পর ‘পাঠান’ যে এখন বাংলাদেশের দর্শকদেরও আনন্দ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে তাতে আমরা সত্যিই রোমাঞ্চিত।’’
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশের সিনেমা হলে ‘পাঠান’র বাণিজ্যিক মুক্তির মধ্য দিয়ে সে দেশে হিন্দি সিনেমার খুব উজ্জ্বল এক সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে বলিউড।
যশরাজ ফিল্মস যেমন পরিষ্কারই বলছে, ‘বহু বছর ধরে আমরা জানি বাংলাদেশে শাহরুখ খানের বিপুল সংখ্যক ভক্ত আছেন। ফলে সে দেশে ভারতের সংস্কৃতি আর সিনেমার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এর চেয়ে ভাল ছবি আর কিই বা হতে পারত?’
পূর্ব পাকিস্তান আমলেও কিন্তু বিভিন্ন হিন্দি সিনেমা ঢাকা বা চট্টগ্রামের সিনেমা হলগুলোতে নিয়মিত মুক্তি পেতো। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তা ছেদ পরে। স্বাধীনতার পর দেশীয় ছবির সুরক্ষায় সেই নীতি বহাল থাকে। ২০১৪ সালের দিকে সাফটার আওতায় দু-একটি পুরোনো ছবি মুক্তি পেলেও চলেনি।
বলিউডের সুপরিচিত ফিল্ম সমালোচক সুচরিতা ত্যাগীও মনে করছেন, হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় ‘সুখবর’।
তিনি বলছিলেন, ‘বাংলাদেশে বিশেষ করে বলিউডের তিন খানের জনপ্রিয়তা যে আকাশপ্রমাণ সেটা সবাই জানেন। আমাদের দুই দেশের সংস্কৃতিতেও প্রচুর মিল। ফলে ১৮ কোটি মানুষের ওই দেশটিতে বলিউডের যে বিপুল সম্ভাবনা আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’
‘‘পাঠানের কথা তো ছেড়েই দিলাম– সারা দুনিয়াতেই ছবিটি রেকর্ড ব্যবসা করেছে, বাংলাদেশেও নির্ঘাত করবে। তবে এছাড়াও বলিউডে বহু ছবি তৈরি হচ্ছে, যেগুলো বাংলাদেশেও অবধারিত হিট করবে। যেমন এ বছরের শেষ দিকেই মুক্তি পাওয়ার কথা মেঘনা গুলজারের ‘শ্যাম বাহাদুর’। একাত্তরের যুদ্ধে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশকে নিয়ে ওই ছবিটিতে নাম ভূমিকায় দেখা যাবে ভিকি কৌশলকে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশেও ‘স্যাম বাহাদুর’কে নিয়ে তুমুল আগ্রহ থাকবে’’, বলছিলেন সুচরিতা।
ফলে ‘পাঠান’ই শেষ নয়, বরং এই ব্লকবাস্টারকে দিয়েই বাংলাদেশে একটি লম্বা ইনিংসের সূচনা করার স্বপ্ন দেখছে বলিউড। এদিকে শাহরুখ খানের সিনেমা ‘জওয়ান’ আনার ঘোষণা দিয়েছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অনন্য মামুন। এখন তো তার আর বলিউডেরই দিন!
*বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অবলম্বনে