Select Page

বাংলা-উর্দু দুই সংস্করণে নির্মিত প্রথম সিনেমা কোনটি?

বাংলা-উর্দু দুই সংস্করণে নির্মিত প্রথম সিনেমা কোনটি?

স্বাধীনতাপূর্ব ঢাকার নির্মাতারা বড় পরিসরে বাজার ধরার জন্য এক সময় উর্দু সিনেমায় নাম লেখান। এর মাঝে কিছু সিনেমার সমগ্র পাকিস্তানে ভালো ব্যবসা করে। তবে অনেক সিনেমা বাংলা-উর্দু দুই ভাষায় মুক্তি পেয়েছে। এসব সিনেমার অনেকগুলোয় এক ভাষায় নির্মিত ছিল না, মানে মূল ভাষার বাইরে ডাব সংস্করণ নয়। বরং দুই অঞ্চলের ভাষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

‘রূপবান’ উর্দু সংস্করণের ফটোসেট। সংগ্রহ: শামসুল ইসলাম বাবু

সম্প্রতি এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন চলচ্চিত্র বিষয়ক গবেষক মীর শামসুল আলম বাবু। তিনি জানান, উর্দু ভাষায় ঢাকায় চলচ্চিত্র নির্মাণের ১৯৫৮ সালে। তবে বাংলা-উর্দু দুই সংস্করণের চলচ্চিত্র শুরু হয় সালাউদ্দিনের ঐতিহাসিক ‘রূপবান’ চলচ্চিত্র দিয়ে।

বিষয়টি বাবু এভাবে ব্যাখ্যা করেন— বাংলা ও উর্দু ভাষায় আলাদা চিত্রনাট্য ছিল। শুটিংয়ে এক ভাষায় একটি দৃশ্য ‘ওকে’ হওয়ার পর দৃশ্যটি অন্য ভাষার টেক করা হতো। শুটিং এরপর সম্পাদনায় আলাদা আলাদা দুটো ছবি তৈরি ও আলাদা সেন্সর করে দুটো ছবি হিসেবে মুক্তি দেয়া হতো।

‘রূপবান’-এর বাংলা সংস্করণ মুক্তি পায় ১৯৬৫ সালের ৫ নভেম্বর, বিপরীতে উর্দু সিনেমাটি পরের বছরের ৫ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিলো। খান আতার বিখ্যাত ‘নবাব সিরাজুদ্দৌলা’ বাংলা ও উর্দু সংস্করণে মুক্তি পেয়েছিল যথাক্রমে ১৯৬৭ সালের ১২ জানুয়ারি ও ২৮ জুলাই।

অনেক ক্ষেত্রে দুই সংস্করণে আঞ্চলিক চাহিদার নিরিখে পাল্টে যায় নাম।  আজিজুর রহমানের ‘সাইফুল মুলুক বদিউজ্জামান’ মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, অন্যদিকে  উর্দু ‘মেরে আরমান মেরে স্বপ্নে’ মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ দুই বছর পর। আবার ইবনে মিজানের ‘শহীদ তীতুমীর’ একই নামেই ১৯৬৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়। কাজী জহিরের বিখ্যাত ‘ময়নামতি’র উর্দু শিরোনাম ‘ময়না’, দুই সংস্করণই মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালের ১৫ মে। একই নির্মাতার বাংলায় ‘মধুমিলন’ ও উর্দু ‘মেহেরবান’ মুক্তি পায় যথাক্রমে ১৯৬৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ও ১৯৭০ সালের ৩১ জুলাইন। কারিগরের ‘মিশর কুমারী’ ও ‘এক জালিম এক হাসিনা’ মুক্তি পায় ১৯৭০ সালের ১৬ জানুয়ারি। রফিকুল বারী চৌধুরীর ‘তানসেন’-এর বাংলা ও উর্দু্ একইসঙ্গে ১৯৭০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে আসবে। মুস্তাফিজের ‘বিজলি’ ও ‘মুন্না আউর বিজলি’ মুক্তি পায় ১৯৭২ সালের ১৭ মে। এ ধরনের দুই ভাষায় নির্মিত আরেকটি সিনেমায় আক্কুর ‘মন যারে চায়’ ও ‘লাভ ইন জঙ্গল’।

নবাব সিরাজুদ্দৌলা’ উর্দু সংস্করণের ফটোসেট। সংগ্রহ: শামসুল ইসলাম বাবু

আবার কিছু সিনেমা উর্দুতে মুক্তির পর স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলায় ডাবিং পেয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে তালাশ, উজ্জ্বল সূর্যের নীচে, চকোরী, ছোট সাহেব, চান্দা, মালা, নুপূর, আনাড়ি, মিলন, আরমান ও দর্শন ইত্যাদি।

এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশে পরিচালক এস এম শফি ‘দি রেইন’ ও ‘বেদ্বীন’ নামে দুটি সিনেমা নির্মাণ করেন, যা কয়েকটি ভাষায় ডাবিং করে মুক্তি দেয়া হয়, এর মাঝে উর্দু ভাষাও ছিল। ছবিগুলো বাংলাদেশে মুক্তি পায় যথাক্রমে ১৯৭৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ও ১৯৮০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি।


Leave a reply