বাপজানের বায়স্কোপ নিয়ে যত রাজনীতি
- ৬০ টি প্রেক্ষাগৃহে থেকে নামিয়ে নিয়েছে, ঢাকায় মাত্র এক প্রেক্ষাগৃহে চলছে! আজকে ৮টার পর সেই শোও বন্ধ হয়ে যাবে !
- সিনেমার শুরুতেই গুটি পাকানো হয়েছিল যে এই সিনেমা মুক্তি দেওয়া যাবে না !
- টাঙ্গাইলে শহীদ মিনারের সামনে প্রতিবাদ এই সিনেমা বন্ধ করা যাবে না !
বন্ধ হয়ত হবে এই সিনেমা! কিন্তু মানুষের হৃদয় থেকে মুছবে কি করে। ২ ঘণ্টার এক সিনেমার জন্য যে কত রাজনীতি ঘটে গেল এখানে সেখানে, সে কথা কি করে ভুলবে মানুষ!
বাপজানের বায়স্কোপ। কি আছে এই সিনেমায় , যে অনেকের না চাওয়াতে সিনেমা হল থেকে উঠিয়ে দিচ্ছে সিনেমা ? কিংবা মাত্র একটা হলে চলছে ঢাকায় ? কিংবা পোস্টারে ছেয়ে যায় নি রাজপথ !
মনে আছে প্রবির সিকদারের কথা! প্রিন্স বিন মুসার যুদ্ধের সময় রাজাকারপন্থি যুদ্ধবিরোধী কথা লিখেছিল বলে ৫৭ ধারার নাম করে জেলে পুরা হয়েছিল।
আমি যদি বলি বাপজানের বায়স্কোপ সেই গল্পেরই এক অতি সাধারণ রুপ! খোলা চোখে যার গভীর দৃষ্টি বোঝা খুব শক্ত না!
মরে গেছে হাসানের বাবা, বেঁচে থাকতে দেখাত বায়স্কোপ। ছেলেকে স্বপ্নে এসে বলে সেই বায়স্কোপ পেশায় ফিরে যেতে। ছেলেও যায় । কিন্তু আগের যুগের চল নাই বায়স্কোপের । নতুন ভাব আনে। বায়স্কোপে ঢুকায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। নিজের চাচা গেরিলা মুক্তিযুদ্ধ ইউসুফকে রাজাকার সিকান্দার কীভাবে মেরে ফেলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বায়স্কোপ দেখিয়ে সে গল্প করে, সঙ্গী ইনসান, মাদ্রাসায় পড়ে কিন্তু ভীষণ ভাল আঁকিয়ে। শরিয়তবিরোধী ধার না ধেরে ছবি আঁকে। গ্রামে গ্রামে যুদ্ধের প্রচারণা ভয় পাওয়ায় দেয় চরের জীবন সরকারকে। তারই মামা রাজাকার সেকান্দার কি না! বায়স্কোপ যেহেতু হাসান বন্ধ করবে না, সেহেতু গ্রামে লবণ বেচাকেনা বন্ধ করে দেয়। তরকারির লবনের অপরাধে গ্রামের লোক কষ্টে মরে, হাসান কিন্তু ছাড়ে উনা বায়স্কোপ দেখান। একসময় নিজের নতুন স্ত্রী চুপি চুপি গ্রামের লোকদের লবণ দেয় বলে তাঁকে বের করে দেয়। নিজের লোক সোহরাবকে দিয়ে ইনসানকে খুন করায়। হাসানের কল্লাও ফেলাতে চায়, কিন্তু ততদিনে বায়স্কোপে থাকা মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে জমা হয়েছে লাখ লাখ লোক।
এই সিনেমাতে রাজাকারে বংশধর জীবন সরকারের মুখ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের .”বান্দির পুত” গালি দেওয়া বের করে। আজকের দিনে আমাদের রাজনীতির অবস্থা বোঝার সবচেয়ে ছোট্ট ইঙ্গিত ছিল গালিটি।
ধর্মরাজনীতিকে খুব সুন্দর ভাবে ফুটায় তুলেছে। আর কিছু না পেরে ইনসানের আঁকাআঁকিকে বেদাত ঘোষণা করে। এমনকি ইনসানের মূর্খ মা কে বোঝায় মাদ্রাসার বানোয়াট নিয়মের কথা। মা কিছুই বুঝে না! এইখানেই দেখা যায়, ধর্মরাজনীতি কীভাবে ব্রেইনওয়াশ করে পড়াশুনা না জানা মানুষের !
দেশে ধর্মরাজনীতি করা মানুষগুলোর গালে সজোরে চড় কষে দিয়েছে বাপজানের বায়স্কোপ। দৃষ্টিকটুর মধ্যে লেগেছে সরকার বাড়ির বউয়ের অতিরিক্ত অভিনয়। দিলারা চরিত্র ও হাসানের বউর চরিত্রে অভিনেত্রীরা অসাধারণ। শতাব্দী ওয়াদুদ জীবনের সেরা কাজ করেছে, একই কথা শহিদুজ্জামান সেলিমের জীবন সরকারে অভিনয় করা। তাঁকে ছাড়া হতই না এই চরিত্র। এদের দুই জনের অভিনয় ছিল “ কে কত বেশী ভাল অভিনয় করতে পারে”।
সিনেমার শেষের দিকে জীবন সরকারকে মারার জন্য উদ্যত হয়ে দৌড়াচ্ছে সোহরাব, আর ওদিকে হাসান চালাচ্ছে তার বাপজানের বায়স্কোপ।
বর্তমান রাজনীতি ফুটিয়ে তুলেছে এই সিনেমা। যা আগে সাহস দেখিয়ে অন্য কোন সিনেমা পারে নি। তাই এই সিনেমা নিয়েও কম রাজনীতি হল না ! কাহিনী হচ্ছে, আমরা চাই সিস্টেম সবাই মেনে নিক, কোন প্রশ্ন না করুক! প্রশ্ন হবে বলেই অন্য অনেক কিছুর হাত পা বেঁধে দেওয়ার মত এই সিনেমাটাকেও শেষ করে দিল !
কিন্তু বারুদ কি সত্যিই নিভে ?