বিউটি সার্কাস: এতো সংগ্রাম করে ছবি বানিয়ে কী পেলেন পরিচালক?
বেশ কয়েক বছর ধরে ‘বিউটি সার্কাস‘ সিনেমাটির কথা শোনা যাচ্ছে। সরকারি অনুদানের অর্থে মাঠে নেমেছিলেন পরিচালক মাহমুদ দিদার। কিন্তু সাধ ও সাধ্য এবং বাংলাদেশের ভঙ্গুর-ভুইফোড় ইন্ডাস্ট্রির কাছে হার মানলেন। ছবিটি হয়তো শেষ হলো। কিন্তু খোদ নির্মাতার কাছে প্রশ্ন জেগেছে স্বপ্নের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত ছবিটি মাহমুদ দিদারের থাকলো কী?
সেই সব কথা উঠে এসেছে নির্মাতার সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টে। বিএমডিবি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
“#শমী কায়সার অভিনেত্রী ছিলেন, ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন এফ বি সি আই এর একজন নির্বাচিত নেত্রীও। অর্থকড়ির অভাব কি খুব তার? সিনেমা বানানোর জন্যে সরকার ৬০ লাখ টাকা অনুদান দিলো। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের নেকী হাসিল হলো।
#বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমান এক লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। আমি আবার বলছি “এক লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকা”!!! আমরা মনে হয় অংকে লিখতেও পারবোনা। বিষয়টা হচ্ছে এই পরিমাণ টাকা লুট পাট করে লোকজন খেয়ে ফেলেছে। এসব এখন মাফ করার পায়তারা চলছে।
#বিউটি সার্কাস নামে একটা সিনেমায় হাত দিয়েছিলাম। প্রায় শেষে করে এনেছি। কিভাবে করেছি ভাবতেই পারিনা। আলাদীন দৈত্য হাতে নিয়েও কেউ মনে হয় পারতোনা। এতোটা ব্যয়বহুল এর পরিসর। চাইলেই পারতাম ২০ লাখ টাকার একটা টেলিফিল্ম বানিয়ে ছেড়ে দিতে। এখন মনে হচ্ছে তাইই করা উচিত ছিলো। একটা শট যেখানে আপোস করেছি সেখানে কলিজা ছিঁড়ে গেছে। পোস্ট প্রোডাকশনে এসে এখন বার বার আটকাচ্ছে। টাকা ছাড়া কাজ শে্ষ করা যাচ্ছেনা। অনুদান দিয়েছিলো ৩৫ লাখ। এর মধ্যে ১৫ লাখ টাকা এখোনো পাইনি। চ্যানেল আই দিয়েছে ৪০ লাখ, সেটা এসেছে ৭ কিস্তিতে। ৭ কিস্তি, হুম। এর মধ্যে আবার ১০ লাখ টাকা ব্যক্তিগত লোন।
কী ভয়াবহ! তাদের কাছে চেয়েছিলাম ৭০ লাখ। এখন উল্টো ১০ লাখ লোন চেপে গেলো। আমার বন্ধু বান্ধব, দূরের আত্মীয়,কাছের মানুষ,স্বল্প পরিচিত, পরিবার, ব্যক্তিগত উৎস থেকে যোগ হয়েছিলো আরো ১৫ লাখ টাকা মতো। ছয় লাখ টাকা যোগ হলো স্পন্সর থেকে। সমস্তই আমার মোট সময়, শ্রম,ব্যয়ের ৫০ ভাগও পুরণ করেনি। এখন চ্যানেল আই পুরো সিনেমাটা হাতে নিয়েছে। না, না! দায়িত্ব হাতে নেয়নি। ব্যবসার দিকটা আর কি! এই সিনেমার উপর তাদের বৈধ দখলদারিত্ব প্রতিষ্টা পেয়েছে। “৩০ লাখ টাকায় চ্যানেল আই বা ইমপ্রেস টেলিফিল্ম কী কী পেয়েছে। বিউটি সার্কাস কিভাবে বেহাত হয়ে গেলো চলুন দেখি
১। চ্যানেল সত্ব
২। ডিজিটাল রাইটস
৩। সিনেমা হল সত্ব
৪। বিদেশে প্রদর্শনের টাকা
৫। টাইটেল স্পন্সর
সব, সব মানে সমস্তই এখন ইম্প্রেস টেলিফিল্ম এর। সেটা চুক্তি অনুসারে। আবার সিনেমাটা শেষ করে একদম মাখন করে আমাকেই রেডি করে দিতে হবে। কাউকে কিছু বললেই এখন প্যারা, বিরক্ত হয়। আমার দাবী ছিলো ইম্প্রেস টেলিফিল্ম আমাকে আরো ৩০ লাখ টাকা দিক, ওভারসিজ প্রজেকশন রাইটস দিক আমাকে। আমি একটা দারুন সিনেমা দেয়ার চেষ্টা করি। যা করেছি এ পর্যন্ত জীবন বাজী রাখার মতোই। অন্তত দুইটা রাইটসও যদি আমি পেতাম তাহলে আমার সিনেমা আটকে থাকেনা। এই ঈদএই রিলিজ পেতো। আমি বার বার বলেছি। কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পাইনি। সেটা চুক্তি করে নিয়েছে আমার কাছে। নো ওয়ে ” তাদের বক্তব্য। যখন আমি সাইন করি আমি অতটা ভাবতে চাইনি। আমার খুব দ্রুত শুট করা দরকার ছিলো। বৈষয়িক ছিলামনা তাই কোন হিসেব কষিনি। আমার সিনেমার লোয়েস্ট বাজেট ছিলো ১ কোটি ৫০ লাখ।
এখন আমার ব্যক্তিগত ঋণ প্রচুর। অনুদানের বাকি ১৫ লাখ টাকা সিনেমা শেষ করে দিলে পাবো। সিনেমাটা কি দিয়ে শেষ করবো! সেটা দক্ষিণা বাতাসে হয়না, প্রেমে হয়না, ডেডিকেশন দিয়ে ফতুর হলেও হয়না। সিনেমা মানেই টাকা। এখানে কেউ টাকা ছাড়া কথা বলেনা। সুতরাং কি আর করা। ভেংগে পড়ো, হতাশ হও, পর্দার আড়াল থেকে তথাকথিত বড় মানুষের টাকশাল দেখো, হাজার কোটি টাকার উত্থান দেখে যাও। ভুলেও নিজেকে দেখোনা, নিজের পরিবার, জীবন,ইচ্ছা, আশাবাদ, ভবিতব্য, নো, নো নো…”