Select Page

বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ অবলম্বনে স্পেনে সিনেমা

বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ অবলম্বনে স্পেনে সিনেমা

বাঙালি মুসলমান নারী জাগরণের অন্যতম অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার লেখা বই ‘সুলতানাস ড্রিম’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন স্পেনের ইসাবেল হারগুয়েরা। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রটির নাম রাখা হয়েছে ‘এল সুয়েনো দে লা সুলতানা’। ইসাবেল হারগুয়েরার সঙ্গে যৌথভাবে ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন তার জীবনসঙ্গী জিয়ানমার্কো সেরা।

স্পেনের সান সেবাস্তিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে স্থান পেয়েছে ‘এল সুয়েনো দে লা সুলতানা’। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এ উৎসবের ৭১তম আসর। ২৫ সেপ্টেম্বর উৎসবে প্রথমবারের মতো সিনেমাটি দেখানো হবে। এতে বাঙালি সংগীতশিল্পী মৌসুমী ভৌমিকের লেখা একটি গানও থাকছে বলে জানা গেছে। সেটির সংগীতায়োজন করেছেন তাজদির জুনায়েদ, গেয়েছেন দীপান্বিতা আচার্য। স্পেন ও জার্মানির পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রযোজনা করেছে চলচ্চিত্রটি। সিনেমাটিতে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ ও বাস্ক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।

সিনেমাটির নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ইসাবেল বলেন, আমি তিনটি ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছি। কারণ, দৃশ্যগত জায়গা থেকে তিনটি গল্প আলাদা করে উপস্থাপন করেছি। কখনো অ্যানিমেশন এই সিনেমায় ওয়াটার কালার গভীর ভাবনায় ফেলেছে। বেগম রোকেয়া হোসেনের জীবনের ঘটনা দেখানোর জন্য ‘অ্যাম্বিয়েন্স অব শ্যাডো থিয়েটার’ ব্যবহার করেছি। এটা গত শতাব্দীর ভারতের বিনোদনের অনেক জনপ্রিয় ফর্ম। ভারতের বিয়ের সময় কনেকে সাজানোর জন্য মেহেদি বা এক ধরনের ট্যাটু দেওয়া হতো। ঐতিহ্যগতভাবে এই সাজসজ্জার মধ্যে এক ধরনের পেইন্টিংয়ের ছাপ পাওয়া যায়। এর প্রতীকী একটা মান থাকত। সেটা আমরা যথাযথ তুলে ধরেছি।

সিনেমার কাজে কয়েকবার ভারতে এসেছেন ইসাবেল। সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে থেকে আসা নারীদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেন। নির্মাতা তাদের কাছে জানতে চান, ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগের লেখা ওই বইয়ের বিষয়বস্তু বর্তমানে কতটা প্রাসঙ্গিক। এ ছাড়াও তিনি সারা পৃথিবীর নামী চিত্রশিল্পীদের পরামর্শ নিয়েছেন।

আট বছরের গবেষণা শেষে ২০২০ সালে ‘সুলতানাস ড্রিম’নিয়ে কাজ শুরু করেন ইসাবেল। নির্মাতা জানিয়েছেন, বিভিন্ন উৎসবে দেখানোর পর চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর স্পেনে মুক্তি পাবে ছবিটি।

নির্মাতা ইসাবেল বলেন, ‘২০১২ সালে দিল্লি গিয়েছিলাম। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে একদিন একটি আর্ট গ্যালারিতে আশ্রয় নিই। সেখানে সুলতানাস ড্রিম বইটি খুঁজে পাই। অনেক আগে লেখা একটি বই। তাতে নারীদের একটি ভিন্ন পৃথিবী কল্পনা করা হয়েছে! বইটি পড়ে অবাক হয়েছি। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিই—এ নিয়ে সিনেমা বানাব আমি।’

আরো বলেন, আমার স্বামী জিয়ানমার্কো সের্রা সঙ্গে মিলে আমি চিত্রনাট্য লিখেছি। সে লিখতে ভালোবাসে, আমি ইমেজ ভালোবাসি। এই চিত্রনাট্য করতে গিয়ে ভারতে অনেক সময় কাটাতে হয়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন পেশার নারীদের সঙ্গে কেটেছে, কর্মশালা করেছি। শত বছর আগে নারীদের জীবন যাপন কেমন ছিল জেনেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে রোকেয়া হোসেনের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলার জোরালো ইচ্ছা ছিল। ফিল্মটি একটি বন্য ঝোপের মধ্যে বেড়ে উঠেছে, যেমন মাঝেমধ্যে অপ্রত্যাশিত জায়গায় ফুল ফোটে তেমনটি। কিছু দৃশ্য লেখার আগেই এঁকে ছিলাম, কিছু লেখায় মধ্যে দিয়ে এসেছে। আর আমরা দীর্ঘদিন ভারতে থাকার সময়ে ভিডিও রেকর্ড করেছিলাম সেখান থেকে উপকরণ নিয়েছি। চিত্রশিল্পীদের পরামর্শ নিয়েছি। আমরা শুধু একের পর এক চিত্রনাট্য পরিবর্তন করেই গিয়েছি।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচিত উপন্যাসিকাটি ১৯০৫ সালে মাদ্রাজের দ্য ইন্ডিয়ান লেডিজ ম্যাগাজিনে সুলতানা’স ড্রিম শিরোনামে প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯০৮ সালে এটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসিকাটি বাংলায় প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালে মতিচূর দ্বিতীয় খণ্ডে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামে।


Leave a reply